আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুঃখে গড়া দিনলিপি : আনন্দ শুভঙ্করের করুন কাহিনী

আমি সততা ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। দুঃখে যাদের জীবন গড়া, তাদের আবার দুঃখ কিসের। এ সত্যটিকে মেনে নিয়েই চলছে আনন্দ, শুভঙ্করের দিনলিপি। নামের মাহাত্ব্য এদের বিন্দুমাত্রও স্পর্শ করেনি। তাদের জীবন চলার করুন কাহিনী যেন অতিসহজেই হার মানিয়ে তুলে।

সংসারের শত অভাব অনটনের ফাঁকেও পিতামাতার বুকে আদলে রয়েছে তারা। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের একটি মেটোঘরে তাদের বাস। আনন্দ মধ্যম, শুভঙ্কর ছোট। বাবা নিারোদ চন্দ্র দেব একজন কৃষক, মা ফুলন দেবী গৃহিনী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ভাই নিরাপদ দেব মধ্যপ্রাচ্যে থাকে।

বর্তমানে এ পরিবারের দুই সহোদর অনন্দ আর শুভঙ্করকে নিয়েই নিরোদ দেব আর ফুলন দেবীর স্বপ্ন। আনন্দ ও শুভঙ্কর জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী। জন্মের পর থেকে এরা দু’জনেই অন্ধ, কথা বলতে পারে না, কানেও শুনে না। আনন্দ অল্প অল্প শুনে। দুই ভাইয়ের দেহই হাড্ডিসার অবস্থা।

দারিদ্র আর অপুষ্টিতে এরা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে। এমনিভাবে জীবনের সকল প্রতিবন্ধীকতার সাথে সংগ্রাম করে ক্রমেই আনন্দের বয়স আজ ২৮ বছর আর শুভঙ্করের ২৫। কংকাল শরীর নিয়ে আপন শক্তিতে দাড়াতে পারেনা এরা। কখনও এপাশ ওপাশ কখনও বা আড়মোড়া করছে তারা। আবার কখনও দুটি হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরছে।

এক মূহুর্তের জন্যও যেন স্বস্থি নেই তাদের। শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বাধাগ্রস্ত এই প্রতিবন্ধী সহোদর শুধুই করুনার পাত্র। পার্শ¦বর্ত্তী ভুনবীর ইউনিয়নের ভীমশী গ্রামের এক সমাজহিতৈষী ব্যাক্তি বিজয় কৃষ্ণ দাশগুপ্তের কাছ থেকে এই দুই সহোদরের খবর পাওয়া যায়। তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় দু’টি খাটে বসে বসে দুল খাচ্ছে আনন্দ আর শুভঙ্কর। মানুষের আঁচ পেয়ে আনন্দ যেন রাগ করে আচড়াচ্ছে আর শুভঙ্কর নিরোত্তাপ অগ্রজের পায়ে ধরে বসে আছে।

আনন্দের মা ফুলন দেবীর সাথে কথোপকথনে জানা যায়, গর্ভকালীন ভুল চিকিৎসার কারণে আনন্দ, শুভঙ্কর দু’জনেই প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়। এদের তেমন কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা দেশে নেই। কৃষিজমি বিক্রি করে আনন্দের বাবা নিরোদ দেব দীর্ঘদিন ভারতে নিয়ে গিয়ে চিকিসৎসা করান দুই ছেলেকে। তিন মাস চিকিৎসার পর ব্যর্থ হয়ে ফের দেশে ফিরে আসে তারা। নুন আনতে পানতা ফুড়ায় অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে বড় ছেলে নিরাপদ দেবকে ঋণ করে মধ্যপাচ্যে পাঠান তার বাবা।

ছেলের পাঠানো টাকায় পিতা-মাতা, দুই ভাই, স্ত্রী-সন্তানের পেটে ঠিকমত আহার জুটেনা। কেবল আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে দুই প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে পরিবারটি এখন দিশেহারা। এদিকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ি আনন্দ প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে ছোট ভাই শুভঙ্কর। আনন্দের মা আর্তনাত করে বলেন, ভগবানের একি বিধান, সরকারের একি নিয়ম। একভাই খাবে, আরেক ভাই দেখবে, প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়া কি তাদের অপরাধ নাকি আমার পাপের ফল।

বিধাতার নির্মমতার বাঁধনে আষ্ঠে-পিষ্টে বাধা পরে অকুল সাগরে ভাসছে অজপাড়া গাঁয়ের এই পরিবারটি। তবুও যেন আনন্দ, শুভঙ্করকে নিয়েই তাদের স্বপ্ন। তাদের নীরব পথচলা যেন জীবনকে করেছে স্তব্ধ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.