মনের মহাজন খুঁজে ফিরি....
পেশা যখন মানুষ ঠকানো
মানুষ ঠকানো খুব কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজ খুব সহজেই করে ফেলতে পারেন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। তাদের হাতের মুঠোয় থাকে জিন-পরী। জাদুটোনায়ও দীতি। তাদের পরিচয় কেউ গুরু সম্রাট আবার কেউ বা মুশকিলে আহসান।
নামের আগে পিছে নানা বিশেষণ। সবাই নিজেকে দাবি করেন পীর। তবে তাদের কাজ এক। মানুষ ঠকানো। এটিকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে।
আর গড়ে তুলেছেন স¤পদের পাহাড়। আলিশান বাড়ি, অত্যাধুনিক গাড়ি। মানুষকে ভোলানোর সকল মন্ত্রই তাদের জানা। ব্যতিক্রমও রয়েছে এ পেশায়, প্রতারণা করতে করতে উপলদ্ধে হয়ে ফেরত এসেছেন কেউ কেউ। তবে যায় বলা হক না কেন এই পেশার নামতো মানুষ ঠকানোই বটে!
সকল সমস্যার সমাধান এক জাগায়
স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, প্রেমে ব্যর্থতা, পড়লেখায় অমনোযোগী, অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করা, শত্র“ দমন, বিদেশ যাত্রায় বাধা, ব্যবসায় উন্নতি, জাদু-টোনা ও বদ জ্বিনের আছর কাটানো, নিঃসন্তান দ¤পতির সন্তান লাভ, মনের মানুষকে আয়ত্তে আনা- সবই তারা করতে পারেন ঐশ্বরিক মতায় এমনটাই দাবি তাদের।
মনভোলানো বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করার পথ করে নেন তারা। আর সহজ সরল মানুষকে ফতুর করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলাই হলো তাদের শেষ চিকিৎসা। এমন বহু উদাহরণ সমাজে। তারপরও তাদের জাদুর পরশ হাতছানি দিয়ে ডাকছে বিপদগ্রস্তদের। হয়তো সমস্যার সমাধান হবে-এ আশায় ছুটে যান তারা।
একজন জ্যোতিষীর বাণী
গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এক জ্যোতিষীর বাংলাদেশ স¤পর্কে ভবিষ্যত বাণী প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি এ দেশের চলমান সমস্যাকে ভবিষ্যত বাণী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন তার বিবরণ দেখুন। বাংলাদেশে ব্যাপক নাশকতামূলক কাণ্ড, জলে-স্থলে অন্তরীে বহু ভয়াবহ দুর্ঘটনা, ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অকাল বৃষ্টি, ছোট-বড় ভূক¤পন, বড় বড় অগ্নিকাণ্ড নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, মহামারী আকারে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব, কোনো নতুন ব্যাধির আতদপ্রকাশ, প্রায় দুর্ভি, রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক বিরোধ তথা দাঙ্গা, সাধারণ স্বার্থসিদ্ধির নিমিত্তে খুন-জখম, হ্রদ, নদী, জলাশয় বিষাক্ত দ্রব্যের মিশ্রণ প্রভৃতির ফলে কঠিন রোগব্যাধি, ুদ্র-বৃহৎ নতুন পুরনো নির্বিশেষে অনেক শিা-প্রতিষ্ঠানে উগ্রপন্থীয় তথাকথিত পরধর্ম অসহিষ্ণু শিাদান ও অস্ত্র বিস্ফোরক দ্রব্যাদির মজুদ এবং গোপনে যত্রতত্র পাচার ও ব্যবহার এক ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি করবে। ৬ জুন ২০১২ সূর্য বিম্বের ওপর দিয়ে শুক্র গ্রহ অতিক্রান্তের পূর্বাপর রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সূর্য বিম্বের ওপর দিয়ে শুক্র গ্রহের অতিক্রান্তের পর থেকে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে নারী নেতৃত্বের অবসান ঘটবে।
তবে তার জন্য বেশ কয়েক বছর অপো করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক অনাকাক্সিত ঘটনা ঘটবে। তবে ১৬ আগস্ট ২০১২ এর পর সরকার প্রধান এবং বিজ্ঞজনদের সুচিন্তিত কঠোর সিদ্ধান্ত সংঘাত নিরসনে সহায়ক হবে।
জ্যোতিষ শাস্ত্র কি বিজ্ঞান?
এ প্রশ্ন যেমন আগেও ছিল এই একবিংশ শতাব্দীতে আছে। বিজ্ঞান পরীা-নিরীা, তত্ত্ব উপাত্তের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞান পরীা-নিরীার মাধ্যমে রহস্য উম্মোচন করে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন পর্যায়কে ভাগ করলে যে আটটি ধাপ পাওয়া যায় । সেগুলো হলোঃ (১) পর্যবেন, (২) তুলনাকরন, (৩) শ্রেনীকরন, (৪) পরিমান নির্ধারন, (৫) পরিমাপন, (৬) পরীা-নিরীা, (৭) সিদ্ধান্ত গ্রহন ও (৮) ভবিষ্যদ্বানী করণ। জ্যোতিষ শাস্ত্র বিজ্ঞানের এসব পর্যায় অবলম্বন করে গড়ে ওঠেনি বলে জ্যোতিষ শাস্ত্র বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয় ।
ইসলামের দৃষ্টিতে জোতিষ শাস্ত্র
যারা পাথরের ব্যবসা করছে তারা বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের দোহায় দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে পাথরের ব্যবসা করছে।
যাদু, ভাগ্য গণনা, গণক, জ্যোতিষী, যাদুকর ও ভেলকিবাজ ফকিরের শরণাপন্ন হওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে লালবাগ শাহী মসজিদের ইমাম বলেন, প্রথমত ইসলামে ধোকবাজদের কোন জায়গা নেই দ্বিতীয়ত আল্লাহকে দূরে ঠেলে দিয়ে রিযেক ও ভাগ্য বদলানোর জন্য পাথরকে বিশ্বাস করলে আল্লাহর সাথে শিরেক করা হবে। আর আল্লাহ তায়ালা সব গোনাহ মা করলেও শিরেক মা করবেন না। তাই মুসলমানদেরকে এই ফিতনাহ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
জ্যোতিষীরা ফুটপাত ছেড়ে অভিজাত বিপনীতে
এক সময় রাস্তার পাশে ফুটপাতে জ্যোতিষীদের সন্ধান মিলতো। সময়ের বিবর্তনে তারা এখন উঠে এসেছেন অভিজাত বিপনীতে।
বিশেষ করে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বসুন্ধরা সিটিতে বর্তমান ২৪ জন মালিকের ৩৩টি জ্যোতিষী ফার্ম রয়েছে। ঠান্ডা
হিমেল হাওয়া এসব বিপনীতে সাধারণ মানুষ এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এদেশের সাধারণ মানুষের বহুবিদ সমস্যার সমাধান কল্পে তথাকথিত এসব জ্যোতিষীদের কাছে এসে সহসায় আরো বিপদগ্রস্থ হচ্ছেন। কারো সমস্যা বাড়লেই তাদের ইনকাম বারে। আগে এসব জ্যোতিষীদের প্রতিদিনকার ইনকাম দিয়ে পেট চালানো কষ্টকর হলেও এখনকার জ্যোতিষীরা থাকেন আলিশান বাড়িতে চড়েন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্রেন্ডের লেটেস্ট মডেলের গাড়ীতে।
কি নেই তাদের? অন্যলোকের সমস্যা সমাধান করার নামে অর্জিত টাকায় নিজের সব সমস্যার সমাধান করছেন।
জ্যোতিষ শাস্ত্র থেকে ফিরে এলেন হাসান কবির
তিনিও অন্যদের মতো সাধারণ মানুষের সমস্যা দেখলে তাদের পকেট কাটতেন। এক বছর বসুন্ধরা সিটির লেবেল-৬ এ তিনি ভাগ্য বদলানো পাথর ব্যবসা করেছেন রীতিমত। অল্প সময়ে তার নাম ডাক বিভিন্ন জাগায় চরিয়ে পরে। প্রতিদিন তার ভাগ্য বদলানো কাস্টমারের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
মানুষ ঠকাতে ঠকাতে হটাত তার বিবেক জাগ্রত হলে উপলদ্ধি হয় তিনি অন্যায় করছেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর মানুষ ঠকাবেন না। গত পহেলা বৈশাখ থেকে তিনি তার ভাগ্য বদলানো পথর ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তিনি চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ যেন এখান থেকে প্রতারিত না হয়। কেউ তার কাছে ভাগ্য বদলানোর পরামর্শ নিতে আসলে তিনি তার আগে আগত ব্যাক্তির সিদ্ধান্ত বদলাতে অনুরোধ করছেন।
বিখ্যাত কয়েকজন প্রতারক জ্যোতিষীর কৃত্তি
মঞ্জু উর রহমান
বসুন্ধরা সিটির ব্লক-এ, লেভেল-৬ এর ৯টি বিলাসবহুল দোকান "ইজমা"র মালিক ভাগ্য বদলানো পাথর ব্যবসায়ী মঞ্জু উর রহমান। প্রতিদিন তার দোকানে ৪/৫ লাখ টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু ভ্যাট-টেক্স কীভাবে দিতে হয় তা তার জানা না থাকলেও তিনি বলেন, আমরা ঠিক মতো ভ্যাট-টেক্স পরিশোধ করি। সর্বশেষ কবে ও কত টাকা ভ্যাট-টেক্স দিয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা শুরুর সময় ৪ হাজার টাকা রাজস্ব বোর্ডে জমা দিয়েছি। মাত্র এক বছর আগে একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমান বসুন্ধরা সিটিতে তার ৯টি দোকান।
তিনি পড়া-শোনা করেননি বলে নিজের নামও ঠিক মতো স্বার করতে পারেন না। তিনি জ্যোতিষী শাস্ত্র কোথাও থেকে শেখেননি তবে এ পেশায় এসেছেন জ্যোতিষীদের অনুরোধে। বর্তমান তার তত্ত্বাবধায়নে ৫ জন জ্যোতিষী চাকরি করেন। গত ২৬ মে বসুন্ধরা সিটিতে অবস্থিত তার নিজস্ব কার্যালয় ইজমাতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ২৭ মে রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে তার সাথে মোবাইলে কথা হয়।
তখন তিনি নিজ গাড়ীতে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিলেন। অন্য লোকের সকল সমস্যার সমাধান করতে পারলেও তখন তিনি স্ট্রোক জনিত কারণে চিকিৎসা করাতে ব্যাংককের দিকে যাচ্ছেন। তার আগামী ৬ জুন দেশে ফেরার কথা। তিনি যাওয়ার সময় এই প্রতিবেদককে জানান, অনেক জাগায় মানুষ পাথর কিনে প্রতারিত হলেও আমার এখানে কারো প্রতারিত হওয়ার রেকর্ড নেই।
জীবন চৌধুরী
কানাডার নাগরিকত্বের জন্য আরাফাত নামের এক ব্যক্তি পত্রিকায় সব মুশকিল আছানের বিজ্ঞাপন দেখে সাইকি ভবনের মালিক পীরজাদা, মহাগুরু, জ্যোতিষী সম্রাট ড. জীবন চৌধুরীকে ফোন করেন।
সমস্যা সমাধানের ১০০ পার্সেন্ট নিশ্চয়তা দেন তিনি। বলেন, তোর শনি খারাপ। শনি ভাল করতে পৃথিবীর ৭ মাথায় ৭টি গরু কোরবানি দিতে হবে। এ জন্য টাকা লাগবে ৩ লাখ। ৭ দিনের মধ্যে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়ে যাবি।
আরাফাত প্রথমে তাকে ৩ লাখ টাকা দেয়। কিন্তু যথা সময়ে কাজ না হলে জ্যোতিষী বলেন, বাম হাতে টাকা দিয়েছিস বলে তোর কাজ হয়নি তুই আবারও দান হাতে ৩ লাখ টাকা পাঠা। সে আবারও টাকা পাঠালে যথা সময়ে কোন কাজ না হলে আরাফাত টাকা ফেরত চায়। তখন জীবন বলে, তুই ৩ দিনের মধ্যে বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যাবি। সে ব্যবস্থা করে রাখলাম।
প্রতারণা বুঝতে পেরে দেশে চলে আসেন আরাফাত। তিনি র্যাব ৩-এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ অভিযোগে র্যাব জীবন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে ২০০৮ সালের ৩০শে জুন। জীবনের আখড়া সাইকি ভবন থেকে উদ্ধার করা হয় নানা ধরনের গোলক, বিভিন্ন রঙের পাথর, ছদ্মবেশ ধরার কাজে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের আলখাল্লা, মাদকদ্রব্য। সেই সঙ্গে জীবন চৌধুরীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার করা হয় অর্ধশতাধিক পর্নো ভিডিও।
যেগুলোতে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে যৌনকাজে লিপ্ত দেখা যায় জীবন চৌধুরীকে। পরে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জীবন স্বীকার করে, যেসব নারীর বাচ্চা হয় না বা বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসতো তাদের সঙ্গে যৌন স¤পর্ক স্থাপন করতেন তিনি। এতে অনেকে গর্ভবতী হয়ে যেত। জীবন চৌধুরীকে সোপর্দ করা হয় পল্টন থানায়। পরে ১ মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এখন তিনি আবারও ওই ব্যবসা শুরু করেছেন।
জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ান চিশতী
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির লেভেল-১, ব্লক ডি এর ৭০ ও ৭১ নম্বর দোকান নিয়ে ২০০৯ সাল থেকে আলিশান আস্তানা তৈরি করেছেন লিটন দেওয়ান চিশতী। নিজেকে তিনি জ্যোতিষরাজ ও পীরে কামেল হিসেবে দাবি করেন। তিনি পাথর বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। চড়েন পাজেরো গাড়িতে।
তার ¯োগান- আর হতাশা নয় সফলতার জন্য আসুন। তিনিও একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। লিটন দেওয়ানের দাবি, যে কোন মুশকিলের আসান তিনি করে দিতে পারেন মুহূর্তেই। এ জন্য তিনি রাশি গণনা করে পাথর দেন। এছাড়া মন্ত্রের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে থাকেন।
তিনি ৯০ সাল থেকে এ পেশায় আছেন। বংশগতভাবে তাঁর এ পেশায় আসা। তবে তিনি
নিজেই বলেছেন, তার শিাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। যে পেশায় তিনি আছেন সে পেশায় শিাগত যোগ্যতার কোন প্রয়োজন নেই। তার আস্তানায় গেলে দেখা যায়, অনেক মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে তার ছবি।
অনেকের কাছ থেকে তিনি পুরস্কার নিচ্ছেন। তার দাবি মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে অনেক ভিআইপি তার কায়েন্ট। তিনি বলেন, যে কোন মানুষের মুখ দেখেই আমি তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারবো। লিটন দেওয়ানের সঙ্গে সাাতের ভিজিট ৫ শ টাকা। তিনি ৫ শ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামে পাথর বিক্রি করে থাকেন।
কোরয়ান ও বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে তার পাথর বিক্রির ব্যবসা। পাথরের ধর্মীয় গুরত্ব স¤পর্কে তিনি বলেন, নবী (সা.) আক্বিক পাথর পরতেন আর আমরা যখন হজে যাই তখনও আমরা একটি পাথরে চুম্বন করি।
বাংলাদেশের জ্যোতিষী নামের ব্যবসায়ী যারা
অনুসন্ধান করতে গিয়ে রাজধানীতে এরকম শতাধিক জ্যোতিষীর সন্ধান পাওয়া যায়। নিউমার্কেট গাউছিয়া মার্কেটের দোতলায় বসেন জ্যোতিষী প্রফেসর হাওলাদার, নারায়ণগঞ্জে বসেন জ্যোতিষী পঞ্জিকা লেখক শ্রী সুকুমার আচার্য্য, মালিবাগ
রেল গেটের পাশে বসেন জ্যোতিষী শিকর রায়, বসুন্ধরা সিটিতে বসেন মঞ্জু, লিটন দেওয়ান চিশতী, এস শামসুদ্দিন, শফিকুল ইসলাম সাদাত, উজ্জল আরেফীন, এ কে রায়, হাসান সেলিম, জ্যোতিষী কাউছার আহমেদ চৌধুরী, ৩১১ সি আর দত্ত রোডে পাশাপাশি বসছেন গুরুসম্রাট সাধন বাবু ও জাহাঙ্গীর শাহ চিশতী, মিরপুর শাহ আলী মহিলা কলেজ মার্কেটের দোকান নং ই/৪ দোতলায় আস্তানা গেড়েছেন এনায়েত শাহ নামের এক জ্যোতিষী বাবা। রাজধানীর শান্তিনগর প্লাজার ১২৪/৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে আস্তানা খুলেছেন জ্যোতিষী বাবা গোলাম মওলা।
তার আস্তানার নাম দরবারে নূরানী। ১৪ মোহাম্মদপুর রিং রোডে আরেকটি আস্তানার নাম রাবেয়া চিশতীর চ্যালেঞ্জ, ৮৯/১ কাকরাইলে আস্তানা খুলেছেন জ্যোতিষী দীননাথসহ আরো অনেকে।
সরেজমিন
দেশ জুড়েই চলছে এমন ভাগ্য ফেরানো পাথর ব্যবসায়ী বাবাদের আস্তানা। প্রকাশ্যে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। প্রতারণা করতে গিয়ে কেউ কেউ আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবার নামছেন এ ব্যবসায়।
জ্যোতিষী আর ভণ্ড বাবাদের নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে প্রতারণার নানা কৌশল। গাবতলীতে দেখা মিললো মিথুন নামের এক জ্যোতিষীর সাথে। তিনি টিয়ে পাখির মাধ্যমে মানুষের ভাগ্য পরীা করে তার প্রয়োজনীয় পাথর দিয়ে থাকেন। তার নিজের ভাগ্য বদলাতে পেরেছে কিনা জানতে চাইলে কোন উত্তর দিতে পারেননি। বসুন্ধরা সিটিতে বর্তমান ২৪টি ভাগ্য গণনার দোকান রয়েছে।
তার মধ্যে প্রথম সারির একটি দোকান "শেষ দর্শন আজমেরী জেমস হাউজ"। মালিক লিটনের সাথে দেখা করতে পাচ শত টাকা ফি দিয়ে দেখা করতে হলো। তার রুমে প্রবেশ করা মাত্রই দেখা গেল তার চার দিকে ক্রেস আর বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি ও বিশেষ ব্যাক্তির সাথে ওঠা তার ছবি। যে কেউ প্রথমে গেলে এগুলো দেখেই তাকে বিশ্বাস করতে হবে। এরপর তাকে পরিচয় দিলে নিজেকে নিরোপরাধ দাবি করে বলেন, একমাত্র সে এখানে কাউকে না ঠকিয়ে ব্যবসা করছে।
তবে অন্য আরো যারা এখানে ব্যবসা করছে তাদেরকে ধরার জন্য এই প্রতিবেদকের সাথে তাদের একজন লোক পাঠিয়ে দেয়। তিনি এই প্রতিবেদককে সবগুলো ভাগ্য গণনা পাথর ব্যবসায়ীর সাথে পরিচিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে লিখতে অনুরোধ করেন। তবে তার ছবি তুলতে চাইলে বলেন, আমার অনেক ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, নতুন করে ছবি প্রকাশ না করায় ভালো।
ভুক্তভুগীর বক্তব্য
পাবনার ছেলে মো: আরিফুল ইসলাম পড়া-শোনা করেন একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। পারিবারিক কারণে তিনি একটি বড় বিপদের মুখোমুখি হন।
সে বিপদ কেটেও যায়। তার মনে হয়েছিল র কাছে গেলে সামনের আগাম বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সে আশায় তিনি যাত্রাবাড়ীর এক র কাছে হাত দেখান। তার হাত দেখে বললো তার ৩টি বড় বিপদ কেটে গেছে সামনে তার জীবনে একটি বড় ফারা (বিপদ) আছে। তাই এখনই রাহুর কবল থেকে বাচতে হলে একটি রুবি পাথরের অংকটি ব্যবহার করতে হবে।
তিনি ৩ হাজার টাকা খরচ করে পাথর ও অংকটি কিনে ব্যবহার শুরু করেন। তার কিছু দিন পরেই গত ৩১ জানুয়ারি একটি ঘটনায় তেজগাঁও থানার পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়ে ২৫ দিন জেল খাটেন। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, এই ঘটনার পর থেকে আমি পাথরকে আর বিশ্বাস করি না। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোল্লা মো: কফিল উদ্দিন বলেন, রা মূলত ভয় দেখিয়ে টাকা উপর্জন করে তাই একবার তাদের কাছে যাওয়ার পর থেকে আর কখনও রদের কাছে যায়নি। তানভীর খন্দকার নামের এক সংবাদকর্মী বলেন, জ্যোতিষীরা এতো কিছু অগ্রীম জানলে এবং সকল সমস্যার সমাধান করতে পারলে কর্পোরেট হাউজগুলো তাদের বড় পদে দের নিয়োগ দিচ্ছে না কেন?
কর্তৃপক্ষ যা বললেন
ভণ্ডপীর, বাবা ও জ্যোতিষীদের প্রতারণার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতারকদের অনেককে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়।
কিন্তু তারা আবার জেল থেকে বেরিয়ে এসে পুরনো পেশায় ফিরে যাচ্ছে। এসব প্রতারকের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, এ সংক্রান্ত আইন আরও শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে তাদের শুধু গ্রেপ্তার করে লাভ হবে না।
তিনি বলেন, একজন প্রতারককে আমি তিনবার গ্রেপ্তার করেছি। কিন্তু সে প্রত্যেকবারই বেরিয়ে এসেছে।
বি: দ্র: আমার এই লেখাটি আজ ২৯ মে ২০১২ ইং মঙ্গলবার দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে |
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।