চীন, ভারত ও থাইল্যান্ডের তৈরি বিভিন্ন 'ব্যায়াম সরঞ্জাম'কে পুঁজি করেও বাংলাদেশে চলছে জমজমাট চিকিৎসা বাণিজ্য। অসচেতন মানুষজনকে ধোকা দিয়ে এসব ইলেকট্রিক ব্যায়াম মেশিনকেই অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করা হয়। মেশিনগুলোর ভাইব্রেটিং ব্যবস্থার সাহায্যে রোগীদের ব্যথাযুক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ম্যাসেজিং করেই হাতিয়ে নেওয়া হয় শত শত টাকা। এ সময় রোগমুক্তির বিভিন্ন ভিডিও দেখিয়ে রোগীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করা হয় এবং একপর্যায়ে প্রতারণামূলক কাজ-কারবার চলতে থাকে। চিকিৎসা সরঞ্জামের নামে দেশজুড়ে যেসব ব্যায়াম মেশিন বাজারজাত করা হচ্ছে সেগুলোর ব্যাপারে বিএসটিআই বা ওষুধ প্রশাসনের কোনো অনুমোদন পর্যন্ত নেই।
এসব মেশিন পরিচালনাকারীরা রোগীদের নানা রকম ব্যবস্থাপত্রও দিচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল লতিফ জানান, 'সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ছাড়া এবং উপযুক্ত চিকিৎসকের বাইরে কারও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। ' বলেন অভিযোগ পেলে, 'এ ধরনের বেআইনি কার্যক্রম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ' তিয়ানশি নামক একটি কোম্পানির বানানো একটি ম্যাজিক বিছানা বিক্রি ৬৬ হাজার টাকায়।
কয়েকশ পাথর বসানো ওই চাদর ব্যবহারে শরীরের ব্যথাসহ বহু রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় বলে প্রচার করা হয়। এ ছাড়া ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপরোধক চিরুনি। কিন্তু পণ্য দুটি কিনে কোনো উপকারই পাননি বলে একাধিক ব্যবহারকারী বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে অভিযোগ করেছেন। প্রতারিত লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তিয়ানশি থেকে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগের ওষুধ কেনেন চড়া দামে। কিন্তু ব্যবহার করে কোনো উপকার হয়নি বলে দাবি করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অনেকটা এমএলএম পদ্ধতিতে সদস্য সংগ্রহ করে ক্রমবর্ধমান মুনাফা ও লোভনীয় পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে মানুষকে তিয়ানশির বিপণন কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে।
অষ্টধাতুর আংটি : অনেক জটিল রোগ নিরাময়ের দাবি তুলে রাজধানী জুড়েই চলছে অষ্টধাতুর আংটির রমরমা ব্যবসা। ইস্টার্ন প্লাজা ও মোতালেব প্লাজায় অষ্টধাতুর আংটি বেচাকেনার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ছোরহাব গাজিপুরী জানান, এ আংটির কারণে জাদুটোনা, বাণ, কুফরি-কালাম হতে রক্ষা পাওয়া যায়। অর্শ, গেজ কিংবা মহিলাদের গোপনীয় নানা জটিল রোগের অব্যর্থ সমাধান হিসেবে অষ্টধাতুর আংটি নাকি খুবই উপকারী।
ছোরহাব গাজিপুরীর লিফলেটে দেখা যায়, আল্লাহর রহমত আছে বলেই কম টাকায় এসব আংটি বাজারে ছাড়া গেছে। ২১ ও ৪১ টাকায় বিক্রি করা ছোরহাব গাজিপুরীর কথিত অষ্টধাতুর আংটিতে সোনা, রুপা, পিতলসহ আট রকম পদার্থ থাকে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু অষ্টধাতুর আংটির সাহায্যে রোগ নিরাময় লাভের কোনো যৌক্তিকতা মেলেনি, তবুও ধুমছে কেনাবেচা চলছে সর্বত্র।
চানখাঁরপুলেই মুখ থুবড়ে পড়েছে সব : চানখাঁরপুল চৌরাস্তা, দেশের প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘেঁষেই চানখাঁরপুল এলাকার অবস্থান। আর চৌরাস্তা সংলগ্ন আনন্দবাজার এলাকায় একাধারে বস্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান।
আর এই আনন্দবাজারে কিছু টিনশেডের ঘরে চলে ভিন্ন রকম চিকিৎসা-তদবির। চানখাঁরপুলেই তিনটি চোরধরা ও আধ্যাত্দিক চিকিৎসালয় রয়েছে। সেখানে পবিত্র কোরআনের বাণী লেখা সাইনবোর্ড টানানো থাকতে দেখা যায়।
কথার তুবড়ি ছুড়েই লোকদের বস করার ফাঁদ পেতেছেন এই ঝাড়ফুঁক চিকিৎসকরা। চানখাঁর পুলের সুরুজ মিয়া বলেন, ১৯৬১ সাল থেকে ঝাড়ফুঁক করছেন তিনি।
একপর্যায়ে আবার বলেন, ১৯৭৪ সালে একজন ইরানির কাছে চিকিৎসা পদ্ধতিটি শিখেছেন। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সুরুজ মিয়ার আস্তানা থেকে হাঁপানি, জন্ডিস ও আমাশয়ের ওষুধ দেওয়া হয়। তবে সুরুজ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে আশপাশের লোকজনের অভিযোগের অন্ত নেই। প্রতিরাতে নেশা ভাঙ সেবন করে, মাতলামির মাধ্যমে সামাজিক পরিবেশ নষ্টেরও অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। অদূরেই ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল সংলগ্ন রাস্তার পাশেই পসরা নিয়ে বসেন আবদুর রব।
বয়স ২৫। পরনে সাদা আলখেল্লা। টেবিলের ওপর লাল-নীল কালিতে ছাপা তাবিজ নিয়ে বসে আছেন তিনি। ফিনফিনে পাতলা ফোল্ডিং পেপারের তাবিজগুলো জিন-ভূত, আছর-নজর, বালা-মসিবত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষকে দেয় আবদুর রব। তাবিজের লেখা অস্পষ্ট বলে খালি চোখে দেখা যায় না।
তাবিজের ওপর ম্যাগনিফাইং গ্লাস ধরে কোরআনের কিছু আয়াত পরে শোনানো হয়।
জিন হুজুরের আতঙ্ক : আল্লাহর কালাম আর নানা সাধনায় জিন বশ করার দাবি জানিয়ে একশ্রেণীর মানুষ বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন। রাজধানীর উত্তরার ফায়দাবাদ এলাকায় এমন জিন হুজুরের আস্তানা গড়ে তুলেছেন 'হাফেজ' আবদুল জলিল। তবে কোন মাদ্রাসা থেকে তিনি হাফেজ হয়েছেন তাও জানাতে পারেননি তিনি। গত শনিবার সন্ধ্যায় জিন হুজুর আবদুল জলিলের আস্তানায় সরেজমিনে গিয়ে নানা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।
সেখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে দুই শতাধিক লোকের ভিড় থাকে গভীর রাত অবধি। অনেক চেষ্টার পর কথিত জিন হুজুর আবদুল জলিলের কাছে পেঁৗছে সদ্ভাব গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। পরিচয়ও দেন এই প্রতিবেদক। এরপর জিনের মাধ্যমে তার প্রতিদিন কী পরিমাণ বাণিজ্য ঘটে তা জানতে চাইলেই আবদুল জলিল ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, 'জি না কথা বলতে পারব না।
সাংবাদিকরা কি লাট বাহাদুর, আসলেই ওনাদের সঙ্গে মূল্যবান সময় অপচয় করে কথা বলতে হবে? কেন তিনি কথা বলতে আপত্তি করছেন? জবাবে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের পবিত্র পেশা সম্পর্কে পত্রিকায় যা তা লিখে আমাদের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট করে ফেলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।