ভাঙলো সুখের ঘর। ডিভোর্স হয়ে গেছে সংগীতশিল্পী ন্যান্সি ও ব্যবসায়ী সৌরভ দম্পতির। সমপ্রতি ন্যান্সি ও সৌরভ পারিবারিকভাবে এই ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। গতকাল মানবজমিনকে মুঠোফোনে এমনটাই নিশ্চিত করেছেন ন্যান্সি। তবে ডিভোর্সের সঠিক দিনক্ষণ বলতে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।
স্বামী সৌরভ, কন্যা রোদেলা আর তীরগতিতে এগিয়ে চলা গানের ক্যারিয়ার নিয়ে ভালই চলছিল ন্যান্সির সংসার জীবন। নেত্রকোনার মধ্যবিত্ত পরিবারের নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি বছর ছয়েক আগে ভালবেসে বিয়ে করেন আবু সাঈদ সৌরভকে। সংসার জীবনে পা রাখার বছর দুয়েকের মাথায় অসাধারণ কণ্ঠশৈলী আর হাবিবের সংগীত জাদুতে রাতারাতি বনে যান আকাশ ছুঁই তারকা। ন্যান্সির মনে হলো, প্রেম-বিয়ে-সংসার-সন্তানের হাত ধরেই বোধহয় তার জীবনে সংগীতময় এমন সফলতার রোদের খেলা বইছে। তাই তো আদর করে একমাত্র সন্তানের নাম রেখেছেন রোদেলা।
যদিও সংসার জীবনের পাঁচ বছরের মাথায় এসে আলোঝলমল সেই সংসারে নেমে এসেছে খানিক মেঘের ছায়া। পারস্পরিক বিশ্বাস কিংবা আস্থার ঘাটতি প্রকট হতে থাকলো ন্যান্সি-সৌরভের সুখের সংসারে। অতঃপর দু’জনেই সিদ্ধান্ত নিলেন সমঝোতার ভিত্তিতে বিচ্ছিন্ন হবার। এ প্রসঙ্গে গতকাল মানবজমিনকে ন্যান্সি বলেন, টানা ছয় বছরের কথা। অনেক কারণ, অনেক অজুহাত, অনেক কথাই আছে এই ভাঙনের পেছনে।
তবে এখন আর সেসব বলে লাভ নেই। মোটা দাগে শুধু এটুকুই বলবো, গেল প্রায় বছর দুই ধরে আমার আর সৌরভের মধ্যে বোঝাপড়াটা ঠিকমতো হচ্ছিল না। তবুও রোদেলার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি চেষ্টা করেছি। সংসারে সুখের জন্য গানটাও ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। ধৈর্য ধরেছি অনেক।
আমার ধারণা, সৌরভও তার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছে আমার মতোই। কারণ, এটাতো সত্যি আমরা ভালবেসে বিয়ে করেছি, আমাদের একটা সাজানো সংসার হয়েছে, একটা ফুটফুটে সন্তান আছে। খানিক দম নিয়ে ন্যান্সি আরও বলেন, সব মিলিয়ে আমরা দেখলাম আর সম্ভব নয়। এরপর দু’জনেই কঠিন, নির্মম এ সিদ্ধান্তটি নিলাম। এতে আমাদের কারোর প্রতি কারও কোন ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই।
বরং আমরা দু’জন মিলে আলোচনা করে অত্যন্ত সুন্দরভাবেই বিষয়টির সমাধান করেছি। কণ্ঠে জড়তা নিয়ে ন্যান্সি আরও বলেন, ডিভোর্সের আগে হয়তো সৌরভের প্রতি আমার অসংখ্য অভিযোগ আর অভিমান ছিল। এখন আর সেটাও নেই। কারণ, এখন তো সৌরভ আমার কেউ নন। তবে এটা ঠিক, সৌরভের সঙ্গে আমার সময়গুলো ভালই কাটছিল।
শেষ তিন বছর গানে ব্যস্ত না হলে কিংবা গান গেয়ে জনপ্রিয়তা না পেলে হয়তো সেই ভাল সময়গুলো এখনও বেঁচে থাকতো। কিন্তু শেষদিকে এসে আর পারলাম না। আমাদের বোঝাপড়াটা একদমই হচ্ছিল না। তাই আমরা কোন ঝামেলায় না গিয়ে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিই। তবে কি এই কারণেই গেল ক’মাস ধরে জন্মস্থান নেত্রকোনায় থাকছেন? সেখানে বাড়িও করছেন? আপনার পাঁচ বছর বয়সী কন্যা রোদেলা থাকবে কার সঙ্গে? এসব প্রশ্নের জবাবে ন্যান্সি বলেন, আমি আসলে গেল ক’মাস ধরে নেত্রকোনায় যাচ্ছি না।
গেল টানা এক বছর ধরেই যাওয়া-আসার মধ্যে আছি। কারণ, সেখানে আমি ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটা বিল্ডিং তুলছি। বিল্ডিংয়ের সঙ্গে আমার সংসার ভাঙার কোন যোগসূত্র নেই। হতাশার বিষয় হলো, অনেকেই বলছেন আমি নাকি গান-সংসার ছেড়ে এখন নেত্রকোনায় স্থায়ী হচ্ছি! আসলে কিন্তু তা নয়। আমি বাড়িটার কাজ দেখার জন্যই কষ্ট করে নেত্রকোনায় আসা যাওয়া করছি গেল এক বছর ধরে।
আবার গানের কাজ থাকলে ঢাকার বাসায় থাকছি। বাড়ির কাজ শেষ হলেই আমি আবার ঢাকায় নিয়মিত হবো। আর রোদেলা আমার সঙ্গেই থাকবে। আরেক প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, আমি আসলে এ বিষয়টি নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি কিংবা সংবাদ মাধ্যমে কিছু সত্য আর কিছু মিথ্যা খবর ছাপা হোক সেটা চাই না। সে জন্যই স্বেচ্ছায় এ কষ্টদায়ক সংবাদটি জানালাম।
কারণ, সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই। এটা নিয়ে লুকোচুরি করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়াটাই স্বাভাবিক। এদিকে আগামীর ভাবনা প্রসঙ্গে ন্যান্সি এক কথায় বলেন, ভাবনা নেই। মানুষ মূলত একা। এর ওপর কোন সত্য নেই বোধহয়।
আমার চারপাশে অগুনতি মানুষ। অথচ আমি একদম একা। আমি এখন আমার মেয়েটাকে নিয়ে এই একাকিত্ব ঘোচানোর স্বপ্ন আঁকছি। আর কিছু না। এদিকে এ প্রসঙ্গে মতামত জানার জন্য সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ভালবেসে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন বর্তমান সময়ের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়িকা ন্যান্সি ও ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সৌরভ। তাদের ঘরে জন্ম নেয় একমাত্র কন্যা সন্তান রোদেলা। তার বয়স এখন পাঁচ। এদিকে গেল পহেলা বৈশাখে প্রকাশিত হয় ন্যান্সির দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘রঙ’। এ অ্যালবামের সবক’টি গানের সুর ও সংগীত করেছেন হাবিব ওয়াহিদ।
যে অ্যালবামের ‘ঝরাপাতা’ শীর্ষক গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সামপ্রতিক সময়ে। গেল বুধবার সর্বশেষ ন্যান্সি কণ্ঠ দেন কিশোরের সুর-সংগীতে একটি চলচ্চিত্রের গানে।
সূত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।