আমরা বাঙালীরা গুনি লোকদেরকে এখনো সম্মান দেখাতে শিখি নাই। যখন এই গুনি লোক গুলো মারা যায় তখন আমরা বলি যে আহারে লোকটা কত ভাল ছিল। তখন মিডিয়া ও একদিনের এই আফসুস টুকু করে থাকে তারপর মিডিয়া ও মানুষ সবাই এক এক করে ভুলে যায়।
এটাই এখন বাংলাদেশে নিয়মে পরিনত হয়ে গেছে। যাক আসল কথায় ড.আসিফ নজরুল যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ওনাকে ও হাইকোর্ট তলব করেছে।
কি দোষ তার? তিনি মনে হয় সরকারের বিরুদ্ধে দু একটি কথা বলেছে এটাই হল তার দোষ।
আর এই মামলাটি পরিচালনা করেছেন ড. কামাল হোসেন যিনি বাংলাদেশের একজন আইন প্রনেতা। যে আইনে এখনো বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হছ্ছে।
আমরা সবাই জানি হাইকোর্ট যে কাউকে ইছ্ছে হলে তলব করতে পারবে তাই বলে এই সব ইস্যু গুলো নিয়ে তলব করবে...?
অথচ কথায় কথায় আইন প্রতিমন্ত্রি বলে যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে বাধাগ্রস্থ করতেই এই সব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তখন তো হাইকোর্ট তলব করে না। তাই আমার কাছে মনে হয় বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে নামে কিন্তু কামে নয়।
পড়ুন সবাই আপনারা ঘটনাটিঃ
‘হি উইল নট কাম হেয়ার’
ইলিয়াস সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: টক শোতে তৃতীয় শক্তির উত্থান নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এ আদেশ দেন।
এর আগে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে শুনানির শুরুতে আসিফ নজরুলের আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে উদ্দেশ্যে করে আদালত বলেন, ‘বিবাদী কোথায়।
’
জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি আইনজীবী হিসেবে বিবাদীর প্রতিনিধিত্ব করছি। তিনি আসবেন না। ’
আদালত বলেন, ‘তাকে এখানে আসতে হবে (কাঠগড়ার পাশে)। আমরা তাকে তলব করেছি। ডাকেন, তাকে ডাকেন।
’
ড. কামাল বলেন, ‘হি উইল নট কাম হেয়ার (তিনি এখানে আসবেন না)। রিটের বিবাদীকে আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। ’
আদালত বলেন, ‘তাকে ডাকেন, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে আমরা তাকে তলব করেছি। তাকে আসতে বলেন, নয়তো আমরা তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করবো।
আপনাকে আমরা আকাশ সমান শ্রদ্ধা করি। আপনার মক্কেল এখানে ১০০ ভাগ ন্যায় বিচার পাবেন। এ মামলায় আমরা ১৩ অ্যামিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) নিয়োগ করেছি। ’
এ সময় আসিফ নজরুল আদালত কক্ষের বাইরে থেকে এসে কাঠগড়ার পাশে দাঁড়ান।
ড. কামাল বলেন, ‘আপনি (বিচারক) শপথ নিয়েছেন।
আমরা শপথ নিইনি। তবে আমরা কিছু নিয়মনীতির আলোকে চলি। আমি সংবিধানের উর্ধ্বে নই। আপনিও সংবিধানের উর্ধ্বে নন। ১৮৬২ সালে কলকাতায় এই হাইকোর্ট স্থাপিত হয়।
১৯৪৭ সালে সেখান থেকে রেকর্ডপত্র নিয়ে এসে এই হাইকোর্ট (তৎকালীন ঢাকা হাইকোর্ট) করা হয়। আপনি নতুন কিছু শুরু করতে পারেন না। ’
এ সময় আদালত বলেন, ‘তাজউদ্দিন আহমেদের নাতির মামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আপনি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখতে বলেছিলেন। কিছুদিন আগে সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্যকে (আসলামুল হক, ঢাকা-১৪) আমরা এখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া এবং কামরুল ইসলাম এবং দেশের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী শফিক রেহমানকে এখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছি।
আমরা তো বৈষম্য করতে পারি না। ’
ড. কামাল বলেন, ‘ওই মামলা এবং এ মামলার প্রেক্ষাপট এক নয়। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি- আপনি একটি মনোভাব নিয়ে ফেলেছেন। ’
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘মামলা চলাকালীন দাঁড়াতে হবে। আমরা কোন মনোভাব নেইনি।
’
ড. কামাল বলেন, রিটে বাদী-বিবাদী সমান। তাহলে বাদীকেও দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে।
এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনি সঠিক বলেছেন। রিটে বাদী-বিবাদী একই সমান। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় আমরা তাকে তলব করেছি।
এ কারণেই তাকে হাজির থাকতে হবে। ’
ড. কামাল বলেন, ‘আপনি আমাদের উপমহাদেশের দেড়শ’ বছরের ইতিহাসে এভাবে রিটের বিবাদীকে দাড় করিয়ে রাখার একটি দৃষ্টান্ত দেন। ’
আদালত এ ধরণের একটি মামলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, ‘ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি পেতে হলে একটা নিয়ম আছে। আপনারা একটি আবেদন নিয়ে আসেন। সেটা আমরা বিবেচনা করবো।
’
এজন্য ড. কামাল আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালে আদালত বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন সারা দুনিয়াব্যাপীই খ্যাতিমান একজন আইনজীবী। তার বই বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। আমাদের মাঝে আছেন বলেই তিনি যে কত বড় তা হয়তো আমরা বুঝতে পারি না। হিমালয়ের পাশে যারা থাকেন তারা হিমালয়ের মর্ম বোঝেন না। ’
এ সময় আদালত ড. কামালকে বসেই বলার জন্য বলেন।
তখন তিনি বলেন, ‘আমি এখনও সবচেয়ে সিনিয়র আইনজীবী নই। সবচেয়ে সিনিয়র হচ্ছেন টিএইচ খান। আমি দ্বিতীয় সিনিয়র। আমি দাঁড়িয়েই বলতে পারবো। ’
মধ্যাহ্নের বিরতি শেষে ২টা ২৭ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম আবার শুরু হলে আসিফ নজরুলের অব্যাহতির আবেদন উত্থাপন করেন ড. কামাল হোসেন।
হাইকোর্ট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন।
এরপর ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে রুল শুনানিতে অংশ নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনি অনেক ভালো কাজ করছেন। আপনার ভালো কাজের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার অভাব নেই। এটা একটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের জন্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন হয়।
রাষ্ট্র কোন ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠান নয়। সরকারের আর্মি, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা আছে। সরকারের সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। আমি মনে করি না রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্র যদি নিজেকে রক্ষায় ব্যর্থ হয় তবে হাইকোর্ট আদেশ দিতে পারেন।
’
ড. কামাল বলেন, ‘যে জুনিয়র আইনজীবী মামলাটি করেছেন তিনি যদি আমার কাছে আসতেন আমি তাকে পরামর্শ দিতাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার জন্য। যে রুল দেওয়া হয়েছে এ ধরনের রুল আমি আমার জীবনে দেখিনি। ’
শুনানির সময় রিট আবেদনকারী ব্যারিস্টার মো. নওশের আলী উপস্থিত ছিলেন। আসিফ নজরুলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ড. শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন প্রমুখ।
পরে আদালত ১৪ জুন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
প্রসঙ্গত, ১২ মার্চ বাংলাভিশনের একটি টকশোতে তৃতীয় শক্তি নিয়ে মন্তব্য করায় ড. আসিফকে ২২ মার্চ আদালতে হাজির হতে বলেন হাইকোর্ট।
আদালত একইসঙ্গে বাংলাভিশনে ‘তৃতীয় কোনো শক্তি সম্ভবত ক্ষমতায় আসবে’ এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
গত ১৫ মার্চ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. নওশের আলীর করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।
২২ মার্চ আসিফ নজরুল আদালতে হাজির হলেও এক বিচারপতি ছুটিতে থাকায় তার বিষয়ে কোন শুনানি হয়নি।
পরে ১৫ এপ্রিল আদালত এ মামলায় আদালতকে সহায়তা করার জন্য ১৩ জন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন।
এরপর ৩ মে এ বিষয়ে আদালতে শুনানি হয়। ওইদিন ড. কামাল হোসেন আসিফ নজরুলকে দাঁড় করিয়ে রাখার বিরোধিতা করেন। পরে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ২৪ মে শুনানির দিন ধার্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১২
এমইএস/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর
সুত্রঃ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।