“তোমাকে আজ বেশি সুন্দর লাগছে। যেন প্রথম প্রেমে পড়েছো অথবা বহু প্রতিীতকে আজ তোমার রূপ উপস্থাপন করছো। বলছিলাম না, যে হাসি খুশি থাকলেই তাকে বেশি সুন্দর দেখায়। প্রসাধনী যা পারে না। ” বিজয় বিউটিকে বলল।
রূপের বর্ণনায় বিউটি মিটিমিটি হাসল। সবাই হাসে। কিন্তু ওর হাসি আরো বেড়ে ওঠে। যেন মেঘের ফাঁকে চাঁদ উঁিক দিয়েছে অথবা ঝোঁপের আড়ালে একঝাঁক জোনাকি একসঙ্গে জ্বলে উঠছে।
ও আজ বায়না ধরছে লালবাগ কেল্লায় যাবে।
ওর যেন আজ সাজ কমছে না। আয়না যেন চোখের সামনে লাগছে আর তার প্রতিচ্ছবি তার ঠোঁটে ফুটে উঠছে। সাড়ে তিন বছরের সংসার। ওর বিবাহিত জীবনে ওর স্বামী কোনদিন এতোহাসি দেখেনি। সে বারবার তার দিকে তাকাছে।
ও যেন আজ হাসির বন্যা বইয়ে দেবে। হাসি, তামাসা, বিবাদ অনেকই জীবনের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। সেখানে হাসির চেয়ে কান্নার ভারই আনেক বেশি। এতোদিনের সে সব ঘাত-প্রতিঘাত আজ যেন একসাথে হাসি হয়ে ফুটছে।
স্বামী প্রথম যেতে অস্বীকার করল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না। ওকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্র“তি করল।
দুপুর হতে না হতেই সে ব্যস্ততা শুরু করল। এটা সেটা বলতে থাকল। মনে হচ্ছে ও অনেক দিন ধরে এই দিনটার অপো করতে ছিল।
ওর হাসি যেন আজ বেড়ে গেল। সমস্ত মুখমন্ডল একবারে শাপলার মত ফুটে উঠতে চায়। স্বামী ধরে একটা চুমু দিতে চাইল। কিন্তু সে হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়ে বলল, “সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। ”
“তাতে কি?”
“আবার সাজতে দেরী হয়ে যাবে।
”
দুজন বেরুল। শহরটা যেন ঠিক স্বপ্নের শহর। সারা মন জুড়ে একটা স্বপ্নিল ছায়ার সুন্দর সাজা বাসর। লালবাগ কেল্লায় ঢুকল। বিউটির চোখ চারিদিক খুঁজছে।
উচ্ছাসে ভরে উঠছে সারা বুক। ও যেন বাসর বধূ। ওর সারা দেহ মৃদু মৃদু কাঁপছে হঠাৎ কিছু ঘটে যাওয়ার ভয়ে। দণি পূর্ব দিকে এগুল। শুকনো পুকুর পাড়ে একটু দাঁড়াল।
“পানি খাব। ”
স্বামী পানি কিনতে গেল। দরজার কাছে গিয়ে বুঝল, বেরিয়ে গেলে আবার ঢুকতে টিকিট লাগবে। কিন্তু তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নেই। বিউটির ভ্যানিটি ব্যাগে সব টাকা।
গেট থেকে আবার ফিরে এলো। দেখল বিউটি যেখানে দাঁড়ানো ছিল সেখানে নেই। সে এদিক ঐদিক তাকাতে লাগল। দেখল মিউজিয়ামের পাশে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। ও পাশে গিয়ে দাঁড়াল।
দেখল ছেলেটা ওকে ধরে ওর গালে মুখে একাধিক চুমু খেতে লাগল। বিউটি আবেগে ওর বুকে ঢলে পড়ল। বিজয় বুঝল এ সাজ ওর জন্য ছিল না তাই ওকে নষ্ট করতে দেয়নি। যার জন্য ছিল সে নষ্ট করে দিল। ইচ্ছা মত নষ্ট করল।
শুধু কি তার সাজ নষ্ট করে দিল? নাকি আরো কিছু নষ্ট হয়ে গেল।
তার স্বামী আর দাঁড়াল না। কারণ, ওর পিপাসা পায়নি। ও সুযোগের জন্য এটা বলছে। অতএব ওর লুকিয়ে লুকিয়ে এটা দেখা অন্যায়।
সে বেরিয়ে গেল। একাকি রুমে এলো। রুম তালা বন্ধ। ওর কাছে চাবি নেই। ও দরজার কাছে খানিক দাঁড়াল।
রুমের ভিতরের অনেক কিছু তার দরকার তবু, তালা ভাঙ্গল না। ফিরে এলো কিন্তু ওর পকেটে,কোন টাকা নেই। ুধাও পেয়েছে। মোবাইলটা বিক্রি করল। অনেক শখ করে সে এ মোবাইলটা কিনেছিল।
সিমটা ফেলে দিল রাস্তার পাশে। এটা আর দরকার নেই। ওর এখন কেউ নেই, ছিলও না। শুধু মিথ্যা অভিনয়।
যাত্রা করল নিরুদ্দেশের পথে।
ও আজ একা। সত্যিকারে একা। ওর কোন ঠিকানা নেই। কোথায় নামবে বা উঠবে তা সে জানেনা। গাড়িই তার সঠিক ঠিকানা।
গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ল। ভোরে চোখ মেলে তাকাল। ওর জন্য এ এক নতুন সকাল। ওর জীবনে এমন সকাল কখনই আসেনি। চারিদিকে নতুন পরিবেশ, অচেনা পথ-ঘাট।
গাড়ি থেকে নামল। কাঁধে কোন ব্যাগ নেই, প্রয়োজনও নেই। একটা ডাল ভেঙ্গে দাঁত মাজল। ডালখানা ফেলে দিয়ে একটু বসল। হায়রে মানুষ, হায়রে ভালোবাসা।
মিথ্যা আর ফাঁকি। ওর এক পাশেই মিথ্যা। বেঁচে থাকার কোন স্বার্থকতা নেই। কিন্তু সে কার জন্য মরবে?
মুখ ধুয়ে কিছু খেল। অনেক চিন্তা ওকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে।
টাকার কিছু অংশ প্যান্টের গোপন পকেটে রাখল। রাস্তার পাশে বসে আছে। যার কেউ নেই তার কোন চিন্তা নেই। কিন্তু যার ছিল এখন নেই তার চিন্তা বেশি।
বাজারের পাশে সে বসে আছে।
কাছে কাছে একটা ছোট্ট গ্রাম। ও গ্রামের দিকে গেল। মাত্র কয়েকখানা ঘর। বার চৌদ্দটা। ও কাছে গিয়ে দেখল শুধু যুবতীরা।
সব পুরুষই কাজে গেছে। কি বলা যায় এদের বা কিভাবে কথা বলা যায়? ভেবে কেবল একটা কথাই পেল। সে জল চাবে। না, পানি। যে পানির জন্য আজ সে পথে এসে দাঁড়িয়েছে।
তবু কাছে গিয়ে বলল, “এক গ্লাস পানি?”
“শুধু এক গ্লাস পানির জন্য কেউ এখানে আসে না। আগে বলুন কেমন চাই? সুন্দরী? কঁচি? নাকি কোন রকম পিপাসা মিটলেই চলবে?”
ও খুব একটা বুঝল না। বলল, “হলেই হবে। ”
“ঐ ঘরে যান। ”
ও দরজায় আঘাত করল।
হাসি মুখে একজন তাকে আহ্বান করল। ও ঢুকল। বুঝতে পারল ও কোথায় এসে পড়েছে। ও এখানে থাকতে চায় না। ও বুঝল মেয়েদের সাথে কেবল এমন সম্পর্কই থাকা চাই।
ণিকের। মেয়েদের সাথে ণিক সম্পর্কই শ্রেষ্ট আনন্দ। মেয়েদের ণিক ভালোবাসাই চিরন্তন, দীর্ঘ সম্পর্ক কেবলই বিরহের।
সে বেরিয়ে আসতে চাইল। কিন্তু বিউটিকে সে দেখিয়ে দিতে চায় সেও পারে।
এ ঠিকানাটা ওর কাছে মন্দ নয়।
সে পতিতা পল্লীতে কাটাতে লাগল। ওদের বাজার করে দেয়, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নতুন মানুষ খোঁজে আর যখন খুশি ওদের যে কারো ঘরে যেতে পারে।
সময় ভালোই বয়ে চলছে। জীবনে যেন এমনই দরকার।
কিন্তু কোথায় যেন খানিক ফাঁকা রয়েছে। সেখানে বারবার কার যেন মুখ ভেসে আসে। যে ভালোবাস কাঁদায় সারা জীবনের সুখ তার মধ্যেই নিহিত। তাতে কি সে আর ও মুখ দেখতে চায় না। ও শুধু রিলাক্সে কাটাতে চায়।
বিজয়ের জ্বর হলো। গ্রামের ডাক্তারের ওষুধে তা ভালো হতেছে না। ওকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। ওকে মরণ ব্যাধি আক্রান্ত করছে। ও আর ভালো হবে না।
ওর জীবনের শেষ ঘণ্টা খুব কাছাকাছি। বিউটির ঠিকানায় একটা চিঠি দিল। সাথে পাশের বেডের রোগির ছেলের মোবাইল নম্বর দিল।
বিজয়ের চোখে এখন বিদায়ের স্বপ্ন। ওর জীবনের সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।
ও তাকিয়ে আছে পরপারে প্রান্তে। ছেলেটা এসে বলল, বিউটি নামের এক মহিলা ফোন করেছিল। কাল আসবে। বিজয়ের হাসি পেল। বিউটি ওকে দেখতে আসবে।
ওর জন্য বিউটি কোনদিন সুন্দরী সাজেনি হয়তো আজও সাজবে না তবু। ও দেখিয়ে দেবে মেয়ে মানুষ কত নগণ্য, কত সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু ও আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে আসছে।
“ডাক্তার বাবু, আমি বাঁচতে চাই। শুধু একটু ণের জন্য।
ওকে শুধু একটা কথা বলে যেতে চাই। শুধু একটা কথা। ”
বিজয় মারা গেল। বিউটির রূপ তার আর দেখা হলো না। বিউটিতো আর তার জন্য সাজবে না।
তার সাজ অন্যের জন্য।
১১ জানুয়ারি ২০১২ইং
যোগেশ সরকারের বাড়ি ,
কেরাণীগঞ্জ,
ঢাকা-১৩১০।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।