সুন্দরী হতে সাবধান।
তানিয়া। বয়স ২৬/২৭।
উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। আকর্ষণীয় ফিগার।
আবেদনময়ী চেহারা।
গায়ে সব সময় ৫-৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার।
পরনে কখনও দামি জরজেট শাড়ি, কখনও লেহেঙ্গা,
কখনও দামি থ্রি-পিস। সেজে আসেন পার্লার থেকে।
দেখতে খুবই সুন্দরী।
মনে হয় কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ভদ্রমহিলা।
আসলে একজন
পকেটমার।
অন্য কোন পেশা তার নেই।
কারও পকেট থেকে মানিব্যাগ নেয়ার পর কেউ তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার সাহস পায় না।
পকেট মারার অভিযোগে নিউ মার্কেটের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মিজানুর রহমান গত তিন মাসে তাকে তিনবার গ্রেপ্তার করেছেন।
তার নামে মামলা রয়েছে বেশ কয়েকটি। আইনের ফাঁক গলে জামিনে বের হয়ে আবারও একই ব্যবসায় নামে। সে চলতি ঈদ বাজারে সক্রিয়। এবার ভিন্ন কৌশলে। তাকে ধরতে র্যাব-পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে।
বোরখা পরে নামায় তাকে ধরা কষ্টকর বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কেবল তানিয়াই নয় রাজধানীর নিউ মার্কেট ও গাউছিয়া এলাকার ঈদ বাজারে ক্রেতাদের সর্বস্বান্ত করতে মাঠে নেমেছে জনা ৫০ জন মহিলা পকেটমার। এদের মধ্যে রয়েছে তিন বোন সাথী, সুলতানা, সিনথিয়া, পুরান ঢাকার সুমী, বৃষ্টি, তানিয়া, মিরপুরের রোজিনা, পারভীন, ফাতেমা সেলিনা, শেওড়াপাড়ার রুজি ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শিল্পী, একই এলাকার কোহিনুর, নিউ মার্কেট এলাকার ভাবি, তার তিন বোন, ধলপুর এলাকার বিউটি, নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকার সীমা, মুন্নি, কামরাঙ্গীর চরের নাদিরা, সাহিদা প্রমুখ। নতুনদের মধ্য রয়েছে ধলপুর এলাকার বিউটি, নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকার সীমা প্রমুখ। পকেটমারের কাজে তারা ব্যবহার করছে র্যাব পুলিশের সোর্সকে।
ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুরা। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ার কারণে এসব শিশুদের গ্রেপ্তারের পরও আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে মাওরা সেলিম। মাঝে মধ্যে র্যাব-পুলিশের সোর্স, মহিলা পকেটমার, শিশুদের গ্রেপ্তার করা হলেও সেলিম রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের সঙ্গে গোপন চুক্তিতে মাঠে নেমেছে কোন কোন মহিলা পকেটমার।
র্যাব-পুলিশের সোর্সরা এসব অলিখিত চুক্তির সমন্বয়ক বলে জানা গেছে। ফিফটি-ফিফটি ভাগের ভিত্তিতে এ সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়ে একাধিক সূত্র। এ কারণে এবার গ্রেপ্তারের সংখ্যা কম।
সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউ মার্কেট এলাকার পুলিশের সোর্স মাওরা সেলিম, লালবাগ এলাকার সোর্স কার্তিক বাবু, মাছুদ, কাদের, শাহাবুদ্দিন এবং র্যাবের সোর্স ইয়াকুব আলীর সঙ্গে গোপন চুক্তিতে কাজ করছে মহিলা পকেটমাররা। কোন বিপদ হলে দ্রুত এগিয়ে আসছে সোর্সরা।
অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের লোক দেখানো জিম্মায় নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে তাদের। কোন একটা ঘটনা ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গেই পকেটমাররা সোর্সদের সামনে হাজির হয়ে ভাগ নিয়ে নিচ্ছে। পুরনো কৌশলের পাশাপাশি এ বছর পকেটমাররা নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। মার্কেট এলাকায় তারা ছোট ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে আসে। এর আগেই তাদের চুরি বা পকেট মারার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
শিশুদের পরানো হয় পরিচ্ছন্ন কাপড়চোপড়। শিশুকে দোকানের ভেতর ছেড়ে দিয়ে পকেটমার নিজে কাপড় দেখতে থাকেন। এ সুযোগে শিশুটি কাপড় দেখতে থাকা অন্য মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা অথবা মোবাইল সেট নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যায়। বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না অজুহাতে মহিলা পকেটমার নিজেই এক সময় দোকান থেকে বের হয়ে যায়। পহেলা রমজানে নিউ মার্কেট এলাকার বধূয়া নামের একটি বিয়ের সরমঞ্জামাদি বিক্রির দোকানে এমন একটি ঘটনা ঘটে।
থানায় মামলা হওয়ার পর দোকানের সিসি ক্যামেরায় অল্পবয়সী শিশু ও মহিলাকে শনাক্ত করা হলেও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। নিউ মার্কেট থানার এক এসআই জানান, রোজা আসার আগে থেকেই থানার সিভিল টিম সোর্সের মাধ্যমে মহিলা পকেটমারদের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে।
ধানমন্ডির শামীমা আক্তার গত ১৬ই জুলাই নিউমার্কেটে এসেছিলেন শপিংয়ে। ভিড়ের মধ্যে একটি ছোট্ট শিশু তার স্বর্ণের চেইন নিয়ে চম্পট দেয়। এ বিষয়ে নিউ মার্কেটস্থ অস্থায়ী ক্যাম্পে অভিযোগ দেয়া হয়।
র্যাব ওই শিশুকে গ্রেপ্তার করলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরদিন শঙ্কর এলাকা থেকে আসা বিলকিস আক্তারের ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খুলে এক মহিলা পকেটমার নগদ ১৬০০ টাকা নিয়ে যায়। র্যাবের ক্যাম্পে অভিযোগ দেয়া হলেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ঈদ বাজার করতে আসা তাহফিজা জানান, ১৬ রোজার দিন ছোট ভাই সাব্বির হোসেনকে নিয়ে নিউ মার্কেটে আসি। চোরেরা আমার পার্সে থাকা ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
পরে খালি হাতে বাসায় ফিরে আসি।
অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ সার্জেন্ট মিজানুর রহমান জানান, রমজানে আমরা যেসব পকেটমার, চোর, ছিনতাইকারী ও তাদের শেল্টারদাতাদের গ্রেপ্তার করেছি তাদের মধ্যে রয়েছে- ফাতেমা, সেলিনা, ফারুক চান মিয়া, র্যাবের সোর্স ইয়াকুব, কাদের ও ৫ শিশু। তিনি জানান, ফারুক ৫ বছর জেল খেটে মাসখানেক আগে ছাড়া পেয়েছে। ছাড়া পেয়েই পুরনো পেশায় নেমেছে। এক মহিলার ভ্যানিটি ব্যাগ টান দেয়ার সময় তাকে সোমবার গ্রেপ্তার করেছি।
নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেছি। মহিলা ছাড়াও চানমিয়া ৩ শিশুকে ঈদ বাজারে নামিয়েছে। তাকে ৬ই আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জানান, শিশুদের গ্রেপ্তারের পর আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কারণ, তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না।
আগে তাদের ধরলে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে দিয়ে দিতাম। এখন সেখানে দিতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি লাগে। তিনি আরও জানান, র্যাবের সোর্স ইয়াকুবকে ১১ই আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। সুমী, বৃষ্টি, তানিয়া, পকেট মারে সুমা ও তানিয়া ইয়াকুবের নেতৃত্বে। মাওরা সেলিমের নেতৃত্বে রয়েছে ভাবী এবং ভাবীর ৩ বোনসহ ১০ মহিলা।
পুলিশের সার্জেন্ট মিজানুর রহমান জানান, তানিয়া মিরপুর থেকে আসে। তাকে আমি যখন প্রথম ধরি তখন খুব ঝামেলা হয়েছে। তার পোশাক-পরিচ্ছদ ও বেশ-ভূষা দেখে তাকে চার্জ করার সাহস পাইনি।
(মানবজমিন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।