আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এখনও নিরাপত্তা হুমকিতে প্রধানমন্ত্রী!!!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাশপথের নিরাপত্তা হুমকিতে। বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটের ভঙ্গুর নিরাপত্তাব্যবস্থা তার জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্ক যাওয়ার সময় নির্দিষ্ট ফ্লাইটে নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়াই বিমানের একজন জুনিয়র অপারেশন কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রাখা হয়। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সংশ্লিষ্ট জুনিয়র অপারেশন কর্মকর্তা নিষিদ্ধ-ঘোষিত ফ্রিডম পার্টির একজন সদস্য ছিলেন। মূলত ওই সময়ই প্রধানমন্ত্রীর আকাশপথে নিরাপত্তা যে হুমকির মুখে তা গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে।

ওই ঘটনা নিয়ে বিমান, গোয়েন্দা সংস্থা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও তোলপাড় শুরু হয়। এ অবস্থায় বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে রবিবার বিমানের নিরাপত্তা শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মমিনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে নাইজেরিয়ায় ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর ভিভিআইপি ফ্লাইটে বিনা নোটিসে নির্ধারিত নিরাপত্তাকর্মীসহ তিনজনের অনুপস্থিতি, তালিকাভুক্ত মালামাল না নেওয়া, নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে 'অনুমতি নেই' এমন মালামাল ফ্লাইটে তুলে দেওয়ার মতো নিরাপত্তা বিঘি্নত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও রহস্যজনক কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়।

বিমানের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ভিভিআইপি ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কাজনক তথ্য দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের ভিভিআইপি ব্যক্তিদের বিদেশ সফরের সময় নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমানের নিরাপত্তা শাখায় যোগ্য লোক কম। এই শাখার খোদ মহাব্যবস্থাপক মমিনুল ইসলাম একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নন। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া ফ্লাইটের দায়িত্ব দেওয়ায় ভিভিআইপিদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সফরের শেষ মুহূর্তে এসে ছাড়পত্রবিহীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভ্রমণ বাতিল করতে হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্লাইট ছাড়ার আগমুহূর্তে এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

সে ক্ষেত্রে কর্মকর্তা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকছে না। এটি নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ। একই সঙ্গে দাফতরিক দিক থেকেও বিব্রতকর। আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে নিরাপত্তা প্রদানে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মমিনুল ইসলামের চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফরে এ ধরনের গাফিলতি ও উদাসীনতা ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধি অনুযায়ী গুরুতর কর্তব্যে অবহেলাজনিত অপরাধ।

প্রতিবেদনে সুপারিশ করে উল্লেখ করা হয়, উলি্লখিত কারণে মহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ১১ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর তুরস্ক সফরকালে বাংলাদেশ বিমানের কতিপয় কর্মকর্তাকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়াই নির্দিষ্ট ফ্লাইটে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ-ঘোষিত ফ্রিডম পার্টির একজন সদস্যকে ওই ফ্লাইটে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিমানের সূত্র জানায়, নিরাপত্তা শাখার বিভিন্ন অনিয়মের কারণে খোদ প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে। এ বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলায় এর আগে নাইজেরিয়া যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীর একটি ফ্লাইটে নিরাপত্তা ট্যাগবিহীন দুই ঝুড়ি আম তুলে দেওয়া হয়েছিল।

এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হলেও ওই ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নামকাওয়াস্তে একটি তদন্ত কমিটি হলেও বারবার চিঠি দিয়েও সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তকে কমিটির সামনে হাজির করা যায়নি। একই ঘটনা ঘটেছে প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ-ঢাকা ফ্লাইটেও। এ ফ্লাইটে 'ভিভিআইপি' লেখা এমন দুটি স্যুটকেস এসেছে, যেগুলোয় কোনো ধরনের নিরাপত্তা ট্যাগ ছিল না। গত বছর ১২ নভেম্বর ফ্লাইটটি (বিজি-১০০৪) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত লাগেজ দুটির জন্য কেউ মালিকানা পর্যন্ত দাবি করেননি।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে কোনো ধরনের নিরাপত্তা-তল্লাশি ছাড়া একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে দুটি স্যুটকেস উঠল? নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো ভিভিআইপি ফ্লাইটে মালামাল ওঠানোর আগে স্ক্যানিং মেশিনে তল্লাশি করা হয়। তল্লাশি শেষে ব্যাগেজের গায়ে নিরাপত্তা ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তাবাহিনীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এয়ারক্রাফটে মালামাল ওঠাতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে মালামাল ওঠানোর আগে আরও ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার নিয়ম রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ওই ফ্লাইটে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) উপস্থিত ছিলেন।

অথচ তার উপস্থিতিতে ভিভিআইপি লেখা এ ধরনের দুটি অনুমোদনহীন লাগেজ কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে উঠল, সেই তদন্ত প্রতিবেদনও ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিমানকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানের নিরাপত্তা শাখায় লোক নিয়োগেও চরম অনিয়ম হয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে অবিলম্বে বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য একটি টিম গঠনেরও পরামর্শ দেওয়া হয়। টিমের প্রতিটি সদস্যকে যথোপযুক্ত নিরাপত্তা ছাড়পত্র নেওয়ার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.