খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... অতিথি উপাচার্যের সমীপে দুটি কথা
হাসান কামরুল
দীর্ঘ বিতর্কের পর অবশেষে পদত্যাগ করলেন জাবির বিতর্কীত ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির। প্রায় চারমাস অবধি আন্দোলন সংগ্রামে একপ্রকার অচল হয়ে পড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক শরীফের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বস্তির বাতাস বইছে। তবে সে বাতাস সুবাতাস কি না তা অল্পদিনের ব্যবধানে স্পষ্ট হবে। প্রায় এক বছর ধরে প্রশাসনের বিতর্কীত কর্মকান্ড নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন গুটি গুটি পায়ে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে দলপ্রীতিই স্বজনপ্রীতির যে দৃষ্টান্ত পদত্যাগী উপাচার্য সৃষ্টি করে গেছেন তা জাহাঙ্গীরনগরকে যুগ যুগ ধরে বহন করতে হবে।
তার তিন বছর মেয়াদকালে শুধু শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২০০ জনকে। গেলো ৩৬ বছরে জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে ৫৮০ জন। আর এ উপাচার্যের তিন বছরের আমলেই নিয়োগ পেয়েছে ২০০ জন। সেসব পুরান কথা। শরীফ এনামুল কবির যা করার তা তিনি করে গেছেন।
দলের টিকেটকে ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন। নিজের অস্তিত্বকে সমুন্নত রাখতে অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীরের ব্যক্তিগত অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর থেকে নিয়োগ দেয়া না দেওয়ার নির্দেশনা প্রদাণ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তাকে সম্মানজনক বিদায় দেয়া হবে। শরীফ এনামুল কবিরের বিদায় যে সম্মানজনক হয়েছে তা দেখা গেলো ড: আনোয়ার হোসেনে কে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া থেকে। জাহাঙ্গীরনগর এক ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
এখানে অধ্যাপকের সংখ্যা দুই শতাধিক। রয়েছে দেশের খ্যাত নামা মুক্তচিন্তার মানুষেরা। জাহাঙ্গীরনগর কেন একজন ধার করা উপাচার্যকে মেনে নেবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটলে কি ঢাবি‘ মেনে নিত? জাহাঙ্গীরনগরের কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতির চর্চাতো অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য র্ঈশ্বার বিষয়। কি নেই জাহাঙ্গীরনগরে? এমন পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালানোর জন্য উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে ধার করে। একি শুধুই নিয়োগ দেয়া নাকি রাজনীতির মারপ্যাচে বউকে মেরে ঝিকে শিক্ষা দেয়া।
শরীফ এনামুল কবির পদ ছাড়ার আগে তার সকল খেলা খেলে গেলেন। সাবেক উপাচার্য গোপালগঞ্জের সন্তান হিসেবে খুব ভালোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন। যাই হোক, এখন প্রশ্ন হলো নতুন উপাচার্য কতোটা সাবলিল ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে জাহাঙ্গীরনগরের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়া উনারতো জাহাঙ্গীরনগর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনাই নেই। উনি উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে কতোবার জাহাঙ্গীরনগর ভিজিট করেছেন তাও কারো জানা নেই।
উপাচার্য হিসেবে উনি কতোদিন টিকে থাকবেন? নতুন করে আন্দোলন যে শুরু হবেনা তার নিশ্চয়তা কি? জাহাঙ্গীরনগরের অভ্যন্তরীন শিক্ষক রাজনীতি জটিল ও কুটিল মারপ্যাচে আবদ্ধ। এখানে শিক্ষকদের মাঝে বহু রং বহু ধারা বিদ্যমান। ¯হানীয় সাভার ধামরাই গ্রুপের শিক্ষকদের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সর্বপরি। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীগ্রুপের শিক্ষকদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির অস্তিত্ব সর্বজন বিদিত । তারউপর রয়েছে বামধারার প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম।
সব সরকারের আমলে বাম ধারার শিক্ষকদের সমর্থন যেদিকে যায় সেদিকেই ঝুকে পড়ে জাহাঙ্গীরনগরের অভ্যন্তরীন রাজনীতি। এসব প্রগতিশীল শিক্ষকদের সিন্ডিকেট মজবুত ও শক্তিশালী। বড় দু‘দলের শিক্ষকদের রাতারাতি ম্যানেজ করা যতো সহজ বামধারার শিক্ষকদের বেলায় ততটাই কঠিন। তাছাড়া জা‘নগরের হালুয়া রুটির শিক্ষকদের সংখ্যাও কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আন্দোলনই এমনি এমনি হয়না।
এর পিছনে শিক্ষকদের ইন্ধন থাকে সর্বোচ্চ। জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র রাজনীতি বলে কিছু নেই। এখানে শিক্ষক রাজনীতির ভিন্নরুপ হলো ছাত্ররাজনীতি। শিক্ষকরাই তাদের প্রয়োজনে ছাত্রদেরকে ব্যবহার করে। ছাত্ররা যখন দলীয় ব্যানারে শিক্ষকদের শরনাপন্ন হয় তখন শিক্ষকরা ঐসব ব্যানারকে নিজেদের ক্ষমতার জন্য সংরক্ষন করে।
কোন হলে কখন কার বিরুদ্ধে মিছিল হবে, কখন প্রতিপক্ষ গ্রুপকে শায়েস্তা করতে হবে সবই পরিকল্পনানুযায়ী হয়ে থাকে। ক্যাম্পাসে বড়ো ধরনের ঘটনা ঘটার আগে থেকেই শিক্ষকদের শক্তিশালী গ্রুপ তার রুপ রেখা প্রণয়ন করে। এটা সব আমলেরই চিত্র। কিন্তু শরীফ এনামুল কবির পেশি শক্তি হিসেবে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেছে নিজের স্বার্থে। হালুয়া রুটির ভাগ থেকে যখন অন্য শিক্ষকরা বঞ্চিত হলেন, বিভাগওয়ারী যখন প্রবীন শিক্ষকদের পছন্দের প্রার্থী শিক্ষক হিসেবে আসতে পারলোনা, মেধাবীদের দলীয় ব্যানারের কারনে বঞ্চিত করা হলো তখনই আন্দোলনের রুপরেখা চূড়ান্ত হতে থাকলো।
প্রথমে কোন আন্দোলনকারীই উপাচার্যের পদত্যাগতো দুরের কথা বিষাদেগারও করেনি। তারা কেবল তাদের রুটিন দাবিগুলো নিয়ে উপাচার্যের সহিত দেন দরবার করেছে। উপাচার্যও উপ¯হাপিত দাবির প্রতি শ্রদ্ধা ও পুরনে আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তার মিত্রদের আপত্তির মুখে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আর এ না করাই উপাচার্যের জন্য কাল হলো। অব্যাহত চাপের মুখে ভিসি যখন হিমশিম খেতে থাকলো তখনই ইংরেজি বিভাগের ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়ের প্রতিপক্ষ গ্রুপের দ্বারা মারাতœক আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যায়।
যা পুরোপুরি কাজে লাগায় প্রতিপক্ষ আন্দোলনকারী শিক্ষকসমাজ। এভাবে একের পর এক অঘটনের কারনে উপাচার্যের ভীত দুর্বল হতে থাকলো। কিন্তু উপাচার্য রাজনীতির দুর্ভেদ্য কুটচালে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা কাজে লাগাতে ভুল করলেননা। অতীতে বহু উপাচার্যকে আন্দোলন করে নামানো হয়েছে। কিন্তু তার বদৌলতে হায়ার করা উপাচার্যের পদধুলিতে জা‘নগর উল্লাসিত হয়নি।
কিন্তু এবার এ দৃষ্টান্তের মুখোমুখি চারযুগের জা‘নগর বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তাতে নিয়োগ প্রাপ্ত উপাচার্য কতোটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। উনি কি পারবেন অভ্যন্তরীন রাজনীতির ক্যাচাল মোকাবিলা করে ধার করা শব্দটির বদনাম ঘুচাতে? নাকি আরেকটি আন্দোলনের তিক্ততা অভিঙতার ঝুলিতে সঞ্চারিত করবেন? নাকি বহুল আলোচিত ৭৩ অধ্যাদেশকে সম্মান জানিয়ে তার ক্ষমতা গ্রহণের পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কারো কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষনিকের অতিথি হয়ে অতিথি উপাচার্যের সুনাম বুকে নিয়ে নিজেকে নতুন রুপে উপ¯হাপন করতে। আর যাই হোক শরীফ এনামুল কবির জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষকদের এমন একটা জায়গায় নামিয়ে এনেছেন যা বলাবাহুল্য। বাহির থেকে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে আচার্য এটা অত্যন্ত পরিস্কার করে দিয়েছেন যে, জা‘নগরে উপযুক্ত ব্যক্তিকে উনি খুজে পাননি যাকে দায়িত্ব দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট ভবিষ্যত নিয়ে উনি ভারমুক্ত হতে পারতেন।
পরিশেষে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত সবুজ ক্যাম্পাসে ড: আনোয়ার হোসেন অতিথি উপাচার্য হিসেবে খুব দ্রুত উপাচার্য নির্বাচন সম্পন্ন করে নিজেকে পরিস্ফুটিত করবেন এমন প্রত্যাশায় জাহাঙ্গীরনগর পরিবারের সকলের।
হাসান কামরুল : জা‘নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।