আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষণিকের অতিথি

সত্য ও সুন্দরের পথের অভিযাত্রী আমি, কিছুতেই যেন এ যাত্রা শেষ না হয়...

তিথি প্রতিদিনের মত আজো মশারি না টাঙিয়ে ঘুমিয়েছে। এই কাজটাকে দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন কাজ মনে হয় তিথির কাছে। মশার কামড় সে খুশি হয়ে খাবে তবুও মশারি টাঙাবে না। তিথির ভাষ্য মতে মশা আর কতটুকুই রক্ত খায়? খাক না একটু রক্ত। নাহয় ওরা বাঁচবে কেমন করে? না, তোমার মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেল না।

আজো তিনি মশারি না টাঙিয়ে ঘুমিয়েছেন। এই মেয়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করবে? একটা কাজ যদি ঠিক মত পারত। সব তোমার দোষ। তুমি তো মেয়েকে কোন কাজ শেখাতে দাও নাই। দেখ আজ, তোমার মেয়ে কতটা অকর্মা হয়েছে।

এসব তিথির মা তিথির বাবাকে বলছিল আর নিজেই তিথির মশারি টাঙিয়ে দিচ্ছিল। তিথির বাবা তখন বললেন, আহা চুপ করতো। আমার মেয়ে কাজ শিখে কি করবে? তুমি তো আছোই। তিথির মা বলল, আমি কি তোমার মেয়ের মাইনে দেয়া বাঁদি? আমি আর সইতে পারব না তোমার মেয়ের জ্বালা। তিথির মা তুমি কিন্তু একটু বেশি বলে ফেলছ, তোমার কিছু করতে হবে না, ওর সব ফরমায়েশ আমি পূরণ করব ধমকের সুরে বলে উঠল তিথির বাবা।

আর ওর শ্বশুর বাড়িতেও ওকে কাজ করতে হবে না, আমি কাজের লোক ওর সাথে দিয়ে দিব। এই বলে তিনি তিথির কপালে চুমু দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আর তিথির মা তিথির পড়ার টেবিল গুছিয়ে লাইট বন্ধ করে দিতে যাওয়ার আগে তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে চলে এলেন। এই মেয়েটা না থাকলে যে কেমন করে তিথির মা-বাবার সময় কাটত, তা তারা কল্পনাও করতে পারেন না। তাদের ছেলেটাও তাদের সাথে থাকে না, ছোট বেলা থেকেই ক্যাডেট স্কুল, কলেজে পড়েছে আর এখন উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য দেশের বাইরে আছে।

এই মেয়েকে নিয়েই তাদের দিন কেটে যাচ্ছে। তিথির বেশ মজা লাগে, ওকে নিয়ে বাবা-মার খুনসুটি লেগেই থাকে। তিথি মেয়েটা বড্ড অলস। প্রত্যেকটা কাজের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল। তার কোন কাজ করতেই ভালো লাগে না।

টিভি দেখতে বসলে একবার আর ওঠে না, যতক্ষণ মা না বকে ততক্ষন টিভির সামনে থেকে ওঠার কোন লক্ষণই দেখা যায় না। মা খাইয়ে দিলে খায়, না হয় না খেয়ে বসে থাকে। মায়ের হাতে খেতে না পারলে তার পেটের ভাত হজম হয় না। অবশ্য ছুটির দিনে বাবা খাইয়ে দেয়। প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়ার আগে তার তাড়াহুড়ো করতে হয়।

কিছুতেই সে এই অভ্যাস টা ছাড়তে পারে না। সবসময় ক্লাসে টিচার আর সে একসাথে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে। ঐযে বললাম অলস, ওর বন্ধুরা তো ওকে ঢিলা কোম্পানি বলে ডাকে। অলসতার কারনেই নাকি পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষার কারনেই ওর আজ পর্যন্ত প্রেম করা হয়ে ওঠেনি। ওর বন্ধুরা যখন জোড়ায় জোড়ায় ঘুরতে বের হয় ও তখন ঘরে ঘাপটি মেরে বসে গল্পের বই পড়ে, নাহয় ঘুমায় বা টিভি দেখে।

কত করে বলে বন্ধুরা একটা প্রেম কর, না তার এক কথা সে এসব পারবে না, যে টাইমটা প্রেমিককে সাথে নিয়ে ঘুরতে হত সে টাইমে সে ঘুমাবে। তার টাইম নষ্ট করার মত টাইম নাই। আজকাল ফেসবুক এর প্রতি তিথির প্রীতি যেন বাড়াবাড়ি রকমের বেড়ে গেছে। পরিণামস্বরূপ বন্ধুরা ফেসবুককে তার বয়ফ্রেন্ড বলা শুরু করেছে। কি যে মজা পায় মেয়েটা।

তেমন কারো সাথে চ্যাটিং করে না। তবে ফেসবুকএ পরিচিত হওয়া একজনকে তার খুব ভাল লাগে। সারাদিন তার প্রোফাইল ঘুরে ঘুরে দেখবে, তার একটিভিটি গুলো দেখবে। আর মাঝে মাঝে চ্যাটিংএ সেই মানুষটির সাথে কথা বলবে। ব্যাস এতটুকুতেই সে খুশি।

যেই মেয়ে এসব ভালবাসাবাসির মধ্যে কখনোই ছিল না সে কিনা একজনকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। তার নিজের কাছেই অবাক লাগে। সে কিছুতেই মানুষটিকে বুঝতে দিবে না তার ভাল লাগার কথা। মুখ ফুটে কোনদিনই বলবে না। এমন কি তার মা বা বন্ধুদেরও না।

তিথি তার এই ভাললাগাকে সস্তা করতে নারাজ। কারন তিথি খুব ভাল করেই জানে যে সেই মানুষটি তার এই ভাল লাগাকে নিছক মোহ বা আবেগ বলে ফিরিয়ে দেবে। আর সে বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবে। তিথি তার ভাল লাগাকে যত্ন সহকারেই নিজের মাঝে ছাই চাপা দিয়ে রেখে দিল। তিথির বাবা কিছুদিন ধরেই বলছিলেন বাড়ি যাওয়া দরকার, তিথির দাদিকে অনেকদিন দেখা হয় না।

এইদিকে তিথির ইউনিভার্সিটিতেও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া অনেকদিন ঢাকার বাইরেও যাওয়া হয় না। তাই একদিন তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে গেলেন কুমিল্লা। কুমিল্লা কুচাইতলি তাদের বাড়ি। সেখানে বেশ ভালই সময় কাটতে লাগলো তিথির, চাচাত ভাই বোনদের সাথে বেশ মজাতেই ছিল।

সব কাজিনরা মিলে প্ল্যান করল কুমিল্লা জিলা স্কুল এর সামনে গিয়ে ফুচকা খাবে, সাত্তার খান সপিং কমপ্লেক্স থেকে কেনা কাটা করবে। হইহুল্লর করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে। তো প্ল্যান অনুযায়ী গেল তারা। বাজি ধরে ফুচকা খেল সবাই। শেষ পর্যন্ত তিথি জিতল।

হাজার হলেও সে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাকে তো জিততেই হবে। এরপর এল সাত্তারখান কমপ্লেক্স এর সামনে, এখান থেকেই শুরু হচ্ছে গল্পের ক্লাইমেক্স। সাত্তার খান কমপ্লেক্স এর সামনে রিকশায় করে একজন মহিলা এলেন সপিং করার জন্য সাথে তার ছোট্ট নাতনী, ক্লাস টুতে পড়ে। তিনি রিকশা থেকে নামতে যাবেন তখনি মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন।

তিথি দেখে দৌড়ে উনাকে উঠাল। এরপর ধরাধরি করে সিডিপ্যাথ হাসপাতালে নিয়ে গেল। ডাক্তার চেকাপ করে বলল প্রেসার বেড়ে গিয়ে উনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল, কিছু ওষুধ লিখে দিলে তিথি ওগুলো নিয়ে আসে, তার কিছুক্ষন পর একটু সুস্থ হলে ডাক্তার সেই মহিলাকে রিলিজ দিয়ে দিল। তিথি সেই মহিলাটিকে তার বাসায় রেখে এল, এত করে বলার পরেও তিথি উনার ওষুধ কেনার জন্য আর হসপিটালে যে টাকা খরচ করছিল তা নেয়নি। তিনি তিথির ফোন নাম্বার রেখে দিলেন।

বাড়ি এসে সব ঘটনা মা আর বাবাকে বলার পর তারা মেয়েকে নিয়ে গর্ব করলেন। পরদিন বিকেলে তিথির মা তিথিকে সাথে নিয়ে সেই ভদ্রমহিলাকে দেখতে গেলেন। ভালই খাতির হয়ে গেল তিথির মা আর সেই ভদ্রমহিলার মাঝে। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে চলে এসেছে তাহসিন। এসে মায়ের কাছ থেকে সব বর্ণনা শুনে বেশ অবাক হয়ে বলল এই যুগেও এমন মানুষ আছে যে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে।

একরকম শ্রদ্ধাবোধ কাজ করতে লাগলো তিথির জন্য। তাহসিন খুব গম্ভীর স্বভাবের ছেলে চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে এসবের খবর রাখে না। কে কি করল বা কে বলল তাতে তার কোন মাথা ব্যথা নাই। কিন্তু কেন যেন তিথির ব্যাপারটা মাথা থেকে সরাতে পারছে না। ছুটিতে আছে তেমন কিছু করারও নেই, অলস বসে থাকতে ভাল লাগছে না।

তখনি ফেসবুকএ লগিন করে দেখে অনেকগুলো নোটিফিকেশন আর ম্যাসেজ জমে রয়েছে। "ক্ষণিকের অতিথি" এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। এত বিরক্ত করে যেকোন ছবি বা স্ট্যাটাসই আপলোড করুক না কেন লাইক আর কমেন্ট করবেই। চ্যাটিংএ এত বিরক্ত করে মেয়েটা। তাহসিনও হুম, হ্যাঁ, না ... বলে উত্তর দিয়ে কেটে পড়ে।

সেইদিন হঠাৎ করে তাহসিনের মা এসে বললেন, তোর জন্য একটা মেয়ে ঠিক করেছি। তোর পছন্দ হলেই বিয়ে। তাহসিন বলল, তোমরা পছন্দ করলেই তো হল, আমার আবার পছন্দ করতে হবে কেন? তাহসিনের মা বললেন, আমার তো খুবই পছন্দ। মেয়েটা একটা অপরিচিত মানুষের জন্য এত কিছু করল, তাকে অপছন্দ করি কেমন করে? তোর বাবাও মেয়েটাকে পছন্দ করেছেন। তারও ইচ্ছা এই মেয়ের সাথেই তোকে বিয়ে দিবেন।

চল তাহলে আজ মেয়েটাকে আংটি পরিয়ে আসি। তাহসিন বলল ঠিক আছে যাব। তাহসিন একবারও জানতে চাইল না মেয়েটি কে বা কি করে? তিথির মা আর তাহসিনের মা এইকদিনে ভালই বন্ধু হয়ে উঠেছিলো। তারা এই বন্ধুত্বকে তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ের মাধ্যমে আরও পাকা করতে চাইলেন। তাদের বাবারাও একমত পোষণ করলেন।

ওইদিকে তিথির মাও বললেন, আজ তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। তোর সেই আনটি তোকে বেশ পছন্দ করেছে তার ছেলের জন্য, ছেলেও ভাল মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে ভাল পোস্টে চাকরি করছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল ঢাকাতেই থাকে। তাই আমি আর তোর বাবা দ্বিমত করিনি। তোর কি ইচ্ছা? তিথি বলল, তোমরা যা ভাল মনে কর তাই কর।

কিন্তু সামনে আমার সেমিস্টার ফাইনাল এখন বিয়ে করতে পারব না। তিথির মা বললেন, আরে এখন কে বিয়ে করতে বলছে তোকে। আজ তো কথা বার্তা পাকাপাকি করতে আসবে। তোর পরীক্ষার পরই বিয়ে হবে। তিথি তখনও ছেলেটির নামধাম জানত না।

একবার জিজ্ঞেসও করেনি। এইদিকে ফেসবুকএ পরিচয় হওয়া সেই মানুষটির কথা মনে পড়ছে তিথির। আসলেই তাকে অনেক ভাল লাগতো তিথির। লোকটা স্বল্পভাষী আর গম্ভীর হলেও ভালো মানুষ বটে। এখনকার সময়ে এমন মানুষ খুব কমই দেখা যায়।

কি আর করা এতদিন তো ছাই চাপা দিয়ে রেখেছিল তার ভাললাগাকে, আজ নাহয় পাথর চাপাই দিবে। এসব যখন ভাবছিল তিথি, মা এসে তাকে বলে গেল তৈরি হয়ে নিতে, ওরা যেকোনো সময় এসে পড়বে। মাগরিবের পর পর তিথির সেই আনটি আঙ্কেল সাথে নাতনী তাবাররু, তাদের বড় মেয়ে তারানা আর ছেলে তাহসিন এল। তিথিরা যৌথ পরিবার বলে এই নিয়ে তার কাজিনদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। সারা বাড়ি জুড়ে কোলাহল আর তাহসিনকে ঘিরে নানানরকম কৌতূহল।

ছোট ছোট ভাই বোনগুলো বেশ বিরক্ত করছে তাহসিনকে। এরই মধ্যে তিথিকে আনা হল। তাহসিনের বেশ পছন্দই হল তিথিকে। আর তিথি??? সে কি করবে বুঝতে পারছে না, হাসবে না কাঁদবে!!! নাকি লাফ দিয়ে বলে উঠবে আরে আপনি? আপনি তো সেই লোক, "তাহসিন আব্দুল্লাহ" আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড, আমার প্রথম ভাল লাগা। তিথি নিজেকে একটা চিমটি কাটল, নাহ তার মানে সে স্বপ্ন দেখছে না।

সত্যি এমনটা ঘটছে। তার বিশ্বাসই হতে চাইছে না। সৃষ্টিকর্তা তার জন্য এত বড় সারপ্রাইজ রেখেছিলেন, ভাবতেই কেমন সৃষ্টিকর্তার প্রতি মাথা নত হয়ে এল আর চোখ জলে ছল ছল করে উঠল কৃতজ্ঞতায়। সে আজ অবিশ্বাস্য রকমের খুশি। কিন্তু কাওকেই বুঝতে দিল না সে।

এমনকি তাহসিন পর্যন্ত বুঝতে পারেনি, যদিও তাহসিনের বোঝার কথাও না। কারন "ক্ষণিকের অতিথি" মেয়েটার নামধাম বা দেখতে কেমন কিছুই জানে না। তিথির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোন ছবি না থাকায় এমনটা হয়েছে। যাইহোক শেষপর্যন্ত তারা বিয়ের দিনক্ষণ পাকাপাকি করে তিথিকে আংটি পরিয়ে চলে গেলেন। সেইদিনই রাত এগারটার দিকের কথা, তিথি তাহসিন দুজনেই অনলাইনে আছে।

তিথি তাহসিনকে নক করে বলে উঠল, কি পাত্রি কেমন দেখলেন? তাহসিনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, সে কয়েকবার লেখাগুলো পড়ল। কিছুতেই বুঝতে পারছে না এই মেয়ে জানল কেমন করে? তখন তাহসিন জবাবে লিখল, মানে? তিথি লিখল মানে আজ আপনি পাত্রি দেখতে গিয়েছিলেন না? তো কেমন দেখলেন? মেয়ে খোঁড়া নাকি বুচি নাকি কানি? তাহসিন জবাবে, আপনি জানেন কেমন করে? আর সে যেমন খুশি তেমন হোক তাতে আপনার কি? শুনুন আপনি আমাকে এতদিন অনেক জ্বালিয়েছেন কিছু বলিনি, কিন্তু আজ আপনি আমার ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলাচ্ছেন। আপনি দয়া করে আমাকে আর নক করবেন না, যদি করেন আমি আপনাকে আনফ্রেন্ড করতে বাধ্য হব। তিথি- যাক আপনি তাহলে হুম, হ্যাঁ ছাড়াও কথা জানেন দেখছি। কতগুলো কথা শোনালেন আমাকে, আমি তো ভেবেছিলাম সারাজীবন হুম, হ্যাঁ শুনেই কাটাতে হবে।

আর কি দরদ সেই মেয়ের জন্য। বিয়ে না হতেই এত দরদ?? জনাব বিয়ের পর তার জন্য এত দরদ থাকবে তো? তাকে খোঁড়া, কানি বলাতেই একেবারে আনফ্রেন্ড করার হুমকি?? ভয় পেয়েছি সত্যি। তাহসিন- কে আপনি? এভাবে কথা বলছেন কেন? আর আপনি আমার সম্পর্কে এত কিছু জানেন কেমন করে? তিথি- আপনার ফোনে রিং হচ্ছে, আপনার বউ ফোন করেছে কথা বলুন। ফোন সাইলেন্ট থাকায় এতক্ষন খেয়াল করেনি তাহসিন আর দেখল সত্যি তিথি ফোন করেছে। আচ্ছা কে এই মেয়ে? এই মেয়ে তিথি নাতো? ফোন রিসিভ করে তাহসিন বলল, তিথি কেমন আছো? আর তুমি কি ক্ষণিকের অতিথিকে চেন? আমার ফেসবুক এর ফ্রেন্ড লিস্টে আছে।

সে জানে কেমন করে এত কিছু জানে আমাদের বিয়ে কথা? তিথি- আপনি থামবেন, এত প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিব কেমন করে? আমাকে বলতে দিন। জি ওই মেয়েকে আমি চিনি, সেই মেয়ে আর কেউ না আমি নিজেই। আর আমি ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? এভাবে কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিল। মাঝে মাঝেই তাদের কথা হতে লাগলো।

একজনের ভাল লাগা মন্দ লাগা সব কিছু জেনে নিল। গত ১৮ই মার্চ তিথি আর তাহসিনের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের রাতেই হঠাৎ করে তিথির মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এল। তিথি তাহসিনকে বলে উঠল, আমার সম্পর্কে তোমার এখনও একটা জিনিস জানা বাকি আছে, আসলে তোমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে একজনকে পছন্দ করতাম। ফেসবুকে তার সাথে পরিচয়, খুব ভাল মানুষ সে।

এমন মানুষ আজকাল ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুজেও পাওয়া যাবে না। আজ থেকে আমরা বাকি জীবন একসাথে কাটাবো তাই আমি কিছুই লুকোতে চাইনি। আর এজন্যই শুরুতেই বলে দিলাম। তাহসিন বেশ অবাক হয়ে গেল, বলল তুমি তাকে এত পছন্দ করতে তো আমাকে বিয়ে করলে কেন? তাকে বিয়ে করলেই পারতে। আমি তো জানতাম তোমার এই বিয়েতে মত আছে।

তুমি আমাকে আগে বললে না কেন? আমি নাহয় সবাইকে বলতাম তোমাকে আমার পছন্দ হয়নি, তখন কেউ তোমাকে আর দোষ দিত না। তিথি বলল তুমি অর্ধেক কথা শুনেই রিঅ্যাক্ট কর কেন? আগে পুরো কথাটা শোন। আমি তাকে কখনোই বলিনি আমার ভাল লাগার কথা। আমি জানি সে কিছুতেই রাজি হবে না। তাই আমার সেই ভাল লাগাকে পাথর চাপা দিতে যাচ্ছিলাম।

কিন্তু তার কিছুক্ষন পরেই আমি দেখলাম আমার ভাল লাগার মানুষটি আমার সামনে উপস্থিত। তাহসিন- মানে? তিথি- এখনও বোঝো নাই? তুমি এত বোকা কেন? আরে সেই মানুষটার নাম তাহসিন আব্দুল্লাহ। মানে তুমি। এরপর তাহসিন বলল যাক বাবা বাচা গেল, আমি তো আর একটু হলেই হার্ট ফেল করতাম। দুজনেই হেসে উঠল।

ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল সেইদিন। তাহসিন বলল আজ আর অফিসে যাব না। তিথিও বলল ভালই হবে, আজ তাহলে ভুনা খিচুড়ি রাঁধি সাথে গরু মাংস, বেগুন ভাজা, আর আঁচার, এই বলে তিথি চলে গেল রান্না ঘরে আর তাহসিন রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে লাগলো... "হে ক্ষণিকের অতিথি এলে প্রভাতে কারে চাহিয়া ঝরা শেফালির পথ চাহিয়া ॥ কোন্‌ অমরার বিরহিণীরে চাহ নি ফিরে, কার বিষাদের শিশিরনীরে এলে নাহিয়া ॥ ওগো অকরুণ, কী মায়া জানো, মিলনছলে বিরহ আনো। চলেছ পথিক আলোকযানে আঁধার-পানে মনভুলানো মোহনতানে গান গাহিয়া"

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।