স্যাটেলাইট সিটি মূলত বড় শহরের অদূরে গড়ে ওঠা পরিকল্পিত উপশহর যেখানে নগরজীবনের সকল সুযোগ সুবিধা থাকবে। সেখানে শহরতলী, বাণিজ্যিক এলাকা, হাসপাতাল, শপিং মল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ, পার্ক সহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকবে। স্যাটেলাইট সিটি এর নাগরিকদের আবাসন এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। অন্য কথায়, নগরের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভিত্তি স্যাটেলাইট সিটির অভ্যন্তরেই গড়ে উঠবে এবং নিকটবর্তী বড় শহরের উপর নির্ভরশীলতা হবে সামান্য। তাছাড়া নিকটবর্তী দুই-তিনটি স্যাটেলাইট সিটি নিয়ে একটি আলাদা শহরও গড়ে উঠতে পারে।
কেন স্যাটেলাইট সিটি?
বড় শহরের উপর আবাসন এবং কর্মসংস্থানগত চাপ কমানোই স্যাটেলাইট সিটির মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি এর মাধ্যমে শহরমুখী মানুষের ঢল রোধ করা সম্ভব হবে। বড় শহরের বিকেন্দ্রীকরণ হলে তার আশেপাশের অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। বড় মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে জনসংখ্যা এবং জীবিকার চাপ যত বাড়তে থাকে এর বাসিন্দাদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা তত কঠিন হয়ে পড়ে। বড় শহরকে কেন্দ্র করে একাধিক স্যাটেলাইট সিটি গড়ে উঠলে এ সমস্যাগুলি অনেকটাই কমে যাবে।
আমাদের প্রেক্ষাপট
ঢাকার ধনী থেকে নিম্নবিত্ত যেকোনো শ্রেণী-পেশার মানুষকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা এক বাক্যে স্বীকার করবে ঢাকা দিনদিন বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হচ্ছে। গরম, লোডশেডিং আর মাত্রাহীন ট্রাফিক জ্যামে ঢাকার মানুষের অবস্থা তথৈবচ। তারপরও মানুষ এই সমস্যা জর্জরিত নগরীতে টিকে আছে শুধুমাত্র জীবিকার কমবেশি নিশ্চয়তা থাকার কারণে। ঢাকার ধারণ ক্ষমতার তিন-চারগুণ জনসংখ্যা এর সমস্যাগুলির প্রধানতম কারণ। ঢাকায় আধুনিক জীবনযাপনের স্বাদ আছে সত্যি, কিন্তু একই সাথে এও সত্যি লোকে-লোকারণ্য ঢাকায় নিরুপদ্রব জীবনের স্বাদ পাওয়া এখন দুষ্কর।
যানজটে প্রতিদি কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে, গাড়ির জ্বালানী পুড়ছে, লোডশেডিংয়ে নগরজীবন স্থবির হয়ে থাকছে। এত সব সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঢাকা এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু এভাবে যে খুব বেশিদিন চলা সম্ভব না তা বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখে না।
সমাধান: স্যাটেলাইট সিটি
স্যাটেলাইট সিটি তৈরি হলে ঢাকার উপর জনসংখ্যার চাপ অনেকটা কমবে। স্বল্প এবং মধ্য আয়ের মানুষের আবাসন সংকট দূর হবে। পাশপাশি রাজধানীতে যানজট এবং জীবিকার চাপ অনেকাংশে কমবে।
উপশহরগুলি ঢাকা এবং ঢাকামুখী মানুষের মাঝে বাঁধ হিসেবে কাজ করবে। ঢাকায় ঢোকার পূর্বে জীবিকার সন্ধানে আসা এই মানুষগুলি সেখানে আশ্রয় নিবে এবং বসতি গড়বে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে। স্যাটেলাইট সিটিগুলোয় নতুন নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। সঠিক পরিকল্পনা মাফিক এগুলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এই পরিকল্পিত উপশহরগুলোতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।
এতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তাছাড়া রাজধানীর বিকেন্দ্রীকরণের ফলে বিনিয়োগের প্রভাব ধীরে ধীরে মফস্বল এবং গ্রামাঞ্চলের দিকে ত্বরাণ্বিত হবে।
বাস্তবায়ন
স্যাটেলাইট সিটির জন্য প্রচুর অর্থ এবং জমির প্রয়োজন। প্রকল্পের জন্য ঢাকার বাইরে চারটি স্থান ঠিক করা হয়েছে যেখানে খাস জমি অধিগ্রহণ করে উপশহরগুলো বানানো হবে। অর্থের যোগানের জন্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ভারতের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাহারা গ্রুপ এই স্যাটেলাইট সিটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গিয়েছে (তথ্যসূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা এবং দৈনিক প্রথম আলো)। সাহারা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানের এদেশে আসতে চাওয়া বেশ ইতিবাচক এবং এতে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। দেশের অর্থনীতিতেও তা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে। সরকারি তত্ত্বাবধানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে দ্রুততম সময়ে এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলেই তা ঢাকাবাসীর জন্য মঙ্গলজনক হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।