আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইসিটি অধিদপ্তর এর বাস্তবায়নঃ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ

সরকার ঘোষিত ‘রূপকল্প-২০২১’ এর আলোকে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ প্রণীত হয়। এই নীতিমালায় "ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সেবা প্রদানের জন্য গণকর্মচারীদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও নেতৃত্ব নিশ্চিত করা" শীর্ষক ৩.৪ নম্বর কৌশলগত বিষয়বস্তুর অধীন ৯৬ নম্বর কর্ম-পরিকল্পনায় “ই-গভর্নেন্স প্রকল্পের স্থায়ীত্ব নিশ্চিতকরন ও সরকারী পর্যায়ে কর্মসংস্থান” এর উদ্দেশ্যে “সরকারী পর্যায়ে সকল প্রতিষ্ঠানে আইসিটি পেশাজীবী দ্বারা সজ্জিত আইসিটি সেল স্থাপন, এ সেলের জন্য আইসিটি সংশ্লিষ্ট পদ সৃজন এবং সরকারী পর্যায়ের সকল আইসিটি সংশ্লিষ্ট পদকে কারিগরি পদ হিসাবে চিহ্ণিত করন” এর কথা বলা হয়েছে। এই কর্ম পরিকল্পনা স্বল্প মেয়াদে (১৮ মাস বা কম) সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং পরিদপ্তরে এবং মধ্য মেয়াদে (৫ বছর বা কম) সকল জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের সরকারী সংস্থাসমূহে কার্যকর করার প্রাথমিক দায়িত্ব সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এতে সরকারি সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পোঁছানোর লক্ষ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবাসমুহ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত দপ্তর হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর গঠন করা হচ্ছে।

বিসিসি এর ওয়েবসাইটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সাংগঠনিক কাঠামো, কোন ইউনিটের কি দায়িত্ব তা অত্যন্ত সুচারুরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে অত্যন্ত মেধাভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা, কর্মকৌশল ও বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিশদ বর্ণনায় মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রম, অফিস ও প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামো ও লজিস্টিক সাপোর্টের কথা উল্লেখ রয়েছে। সম্প্রতি যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে অধিদপ্তরের ২৫০৭ জন জনবল কাঠামোর অনুমোদন প্রদান করা হয়। অনুমোদিত জনবলকাঠামো দেখে দারুণভাবে মর্মাহত হই। অত্যন্ত হতাশার বিষয়টি হলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিসিসি কর্তৃক প্রসত্মুতকৃত এই অধিদপ্তরের জন্য প্রেরিত প্রস্তাবনা ও অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী তা হয়নি এবং সরকার প্রণীত জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ এর সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

উক্ত নীতিমালায় সকল মন্ত্রণালয়ের জন্য আইটি সেলের মাধ্যমে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সেবাসমূহ ইলেকট্রিক সেবায় (অনলাইনে) প্রদান করার কথা রয়েছে। অধিদপ্তরের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সরকারের সকল পর্যায়ে কর্মরত আইটি জনবল সমবনয়ে অধিদপ্তরের অধীনে একটি তথ্য প্রযুক্তি সার্ভিস থাকবে। সকল মন্ত্রণালয়ের আইটি সেলে আইটি জনবল পদায়ন করবে উক্ত তথ্য প্রযুক্তি সার্ভিস। অথচ অনুমোদিত জনবল কাঠামোতে আইটি সেলের জন্য কোন জনবল বরাদ্দ রাখা হয়নি এবং কর্মরত আইটি অফিসারদের উক্ত সেলে সংযুক্ত করার কোন দিক নির্দেশনা নেই। এমতাবস্থায়, আইসিটি অধিদপ্তর গঠনের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে না বলে আপাতদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এই অধিদপ্তর যদি সরকারের তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ এর আলোকে দেশের মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম অনলাইন করার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখতে না পারে কিংবা মন্ত্রণালয়গুলোই যদি অনলাইন সেবা কার্যক্রমের আওতায় না আসে তবে মাঠ পর্যায়ে অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা অফিস কার্যতঃ তেমন কোন সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে না। ফলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর গঠনের মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে সফল হবে না। অধিদপ্তরের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, দেশের সকল আইসিটি জনবল একক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সরকারের মন্ত্রণালয়সমূহে যদি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিটি সেল সৃষ্টি না করা হয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ অধিদপ্তরের যদি উক্ত আইটি সেল সমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকে তবে উক্ত অধিদপ্তরে গঠনে কর্মপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের সুযোগ থাকবে না। ফলশ্রুতিতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত মেধাবী আইসিটি অফিসারগণকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য একক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে থাকার সময়োপযোগী প্রস্তাবনাটিও কাজে লাগবে না।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকারে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকারের সময়কাল প্রায় সাড়ে ৩(তিন) বৎসর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের প্রণীত জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ এর আশানুরূপ প্রতিফলন তথা সরকারের ‘‘রূপকল্প-২০২১’’ এর রূপরেখার নিরীক্ষে সরকারী প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি বাস্তব প্রয়োগ তথা সেবা কার্যক্রম ইলেকট্রনিক সেবায় রূপ নেয়নি। অবশিষ্ট মাত্র দেড় বৎসর সময়ে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক পর্যায়ের সদিচ্ছা, আন্তরিক উদ্যোগ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গৃহীত অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ ও প্রশংসনীয় তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকারি সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে, বিশ্বের সাথে তাল মিলিটে বাংলাদেশর তথ্য প্রযুক্তিকে সেই মানে উন্নীত করতে হলে দক্ষ আইসিটি পেশাজীবি গড়ে তুলতে সর্বোপরি আগামী প্রজন্মকে জনসম্পদে রূপান্তরে এই মুহুর্তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। তাই দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে কায়মনো বাক্যে আশা করি সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন হয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন হোক পূর্ণাঙ্গ আইসিটি অধিদপ্তর, কামনা করি সদাশয় সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকগণের একনিষ্ঠ ও আমত্মরিক হস্তক্ষেপ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.