বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... একদিন পাহাড়ের চূড়ায় সূর্যোদয়ের সময় পৃথিবীর ভারী অসুখ করলো। মাথা ঝিম মেরে ভূবন বসে রইল কৈবল্যধামে। ঋষিকেশ কি কাজে যেনো ভারী ব্যস্ত। কিন্তু রাশেদ দুলতে দুলতে ঠিকই মধুবনে গিয়ে হাজির। সেখানে কবি সৌমেন ধর একা একা বসে পাতার বাঁশি বানানোর গবেষণায় মত্ত।
সেখান থেকে কত্তো দূরে সমুদ্র? হাই তুললেই প্রতিধ্বনি হবে হয়তো। নয়তো ওরা সেখানে কি করবে শুনি? পাতার বাঁশি বোনা শেষে কবি সৌমেন কহে, বদ্দা, আঁর কবিতা খান পড়র। রাশেদকে কবিতা ধরিয়ে দিয়ে সৌমেন গান ধরলো, 'দেয়াল ধরে দাঁড়াস নে, যাবি পড়ে....'
জাফর আহমদ রাশেদ ১৯৭০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়ার গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। রাশেদের ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন।
কিন্তু অনার্স ও মাস্টার্সে দুটোতেই প্রথম স্থান থাকা স্বত্ত্বেও শিক্ষকতা পেশায় যাওয়া হল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য টিচার হতে প্রথম বিভাগ লাগবে। রাশেদ অল্পের জন্য দুটো প্রথম শ্রেণী মিস করেছে। আর ওদের ব্যাচে কেউ প্রথম শ্রেণী পায় নি। পেলে রাশেদই পেতো।
রাশেদ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাস নিয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম প্রধান কাজ। রাশেদ কবিতা লেখেন। একমাত্র মেয়ে পত্র নন্দিতা পাতাকে নিয়ে একটি মজার ছোটদের উপন্যাস লিখেছেন। কবিতার বই এখন পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে তিনটি।
'কাঁচের চুড়ি বালির পাহার', যজ্ঞযাত্রাকালে' ও 'দোনামোনা'।
শিক্ষকতায় না যেতে পারার দুঃখ নিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। দৈনিক পত্রিকার সাজিত্য পাতার সাময়িকীর দায়িত্ব পালন করেছেন প্রথম আলোতে। এর আগে ভোরের কাগজে উপসম্পাদকীয় পাতার দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম আলো বই প্রকাশের উদ্দ্যোগ নিয়ে প্রকাশনী 'প্রথমা যাত্রা শুরু করলে রাশেদ প্রথমা'র সঙ্গে জড়িয়ে যান।
বর্তমানে রাশেদ প্রথমা'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
রাশেদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০০১ সালে আমরা যখন কাঁঠালবাগান আমিন নিলয়ে থাকি। আমিনুর রহমানের নের্তৃত্ব নাট্যদল পালাকার-এর সূচনা পর্ব থেকে। রাশেদও পালাকার-ও একজন ফাউন্ডার মেম্বর। আমরা যখন আমিন নিলয় ছেড়ে ১৯ কাঁঠালবাগনে উঠলাম, তখনও রাশেদ ভোরের কাগজে।
পত্রিকার অফিসের কাজ শেষে রোজ রাশেদ আর শামিম ভাই (শামীম আহমেদ, ভোরের কাগজ) আমাদের ব্যাচেলর হাইজে আড্ডা দিতে আসতেন। শীত-গ্রিস্ম, বর্ষা-শরৎ, হেমন্ত-বসন্ত বাদ যেতো না কোনো কাল। রাশেদের বউ অলকা নন্দিতাও একজন কবি। পড়াশুনা করেছেন রাশেদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। অলকাও পাস করেছেন রাশেদের সঙ্গে।
ভোরের কাগজে তখন রাশেদের প্রায় ছয় মাস কোনো বেতন হয় না। ওদিক অলকা তখন প্রেগনেন্ট। পাতা যখন জন্মগ্রহন করলো ১৯ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে তখন রাশেদ-অলকার ভারী কষ্টের দিন গেছে। পাতার জন্মের পরপরই রাশেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে লাগলো। রাশেদ হুট করে ভোরের কাগজ ছেড়ে দিয়ে প্রথম আলো'র সাহিত্য সাময়িকীর দায়িত্ব নিলেন।
রাশেদের বাসাও ছিল কাঁঠালবাগান। পাতার জন্মের পর ছোট বাসায় চলে না, তাছাড়া আলো বাতাসের কুব দরকার। আর অলকার অফিস তখন লালমাটিয়ায়। অলকারও অফিসে যেতে ভারী দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বাসা বদল করার সিদ্ধান্ত নিলেন রাশেদ।
রাশেদ আর আমি মিলে শংকর এলাকায় কয়েকটা বাসা দেখে দুইটা মোটামুটি পছন্দ করলাম। শংকর এলাকায় আমি ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলাম। শংকরের জাফরাবাদে। সেই হিসেবে আমি শংকর খুব ভালো চিনি। দ্বিতীয় দিন গিয়েই আমরা বাসা ফাইনাল করে আসলাম।
ফিজিক্যাল কলেজের পেছনে ইত্যাদি মোরে রাশেদ যে বাসায় তখন উঠলেন, সেখানে এখনো আছেন।
কাঁঠালবাগানে আমরা একসঙ্গে তখন থাকি রাজীব নূর, খোকন কায়সার, রোকন রহমান, সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, রেজাউল কবির মাহমুদ নাছিম, পুলক বিশ্বাস, মনোতোষ তালুকদার মনি, শাহাদুজ্জামান মাসুদ, রিয়াজ শিকদার আর আমি। ঢাকা শহরে আমাদের এমন কোনো বন্ধু নেই যারা সেই বাসায় আড্ডা না দিছে। নিয়মতি যারা তখন আড্ডায় আসতেন তারা হল, শিল্পী শাহিনুর রহমান, ডাক্তার কল্লোল, গোলাম রসুল, সত্যজিৎ পোদ্দার বিপু, শামীম আহমেদ, টোকন ঠাকুর, আলফ্রেড খোকন, তরুণ সরকার, কণ্ঠশিল্পী কাজী কৃষ্ণকলি, জায়েদউদ্দীন, শিবলী সাদিক, তুহিন, রিজভী আহমেদ জনি, বড় তুহিন, খোকন মজুমদার, বাবু, তারেক সাইফুল্লাহ, আমিনুর রহমান মুকুল, নয়ন মনি চৌধুরী, অজয় দাশ, পংকজ ওয়াদেদার, ছোট জনি, জাহাঙ্গীর হোসেন রাজা, বন্ধু মিজান এবং আরো অনেকে।
.......................চলবে................. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।