জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
এবার বন্ধু দিবস এগিয়ে এল।
ভালোই হয়েছে। বন্ধুত্বের কথা আগাম বলে দেয়াই ভালো। আজ বলব সেই সব বন্ধুর কথা যাদের সাথে এখন তেমন যোগাযোগ না হলেও তাদের খুব মিস করি।
মোশারফ হোসেন :
ভদ্রলোকের নামটা এই।
কিন্তু কলেজ জীবনে তাকে কেউ নাম ধরে ডাকে নি। সবাই বলত মশা। সেই মশার সাথে পরিচয় স্যারের ব্যাচে পড়তে গিয়ে।
ক্লাস টেনে পড়ি। বিজ্ঞান বিভাগে।
গোসাই স্যার খুব বিখ্যাত। তার কাছে পড়লে ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া খুবই সোজা। গেলাম তার কাছে।
পড়া শেষ করে বেরিয়ে এলাম। আমি তখন একটা সাইকেল ব্যবহার করতাম।
একটা লিকলিকে চশমা পরা ছেলে এগিয়ে এল আমার দিকে। সে আমার সাইকেল ধরে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল - তুমি কি খানপুর থাক ?
না, খানপুরের পাশে থাকি।
তোমার সাইকেলে যাওয়া যাবে ?
যাবে, তবে আমি ঠিকমতো চালাতে পারি না। পড়ে গেলে দোষ নাই।
ও আমার কথা শুনল না।
উঠে পড়ল আমার সাইকেলের পেছনে। বড় রাস্তায় এসে মোড় ঘোরার পরই বলল, সাইকেল থামাও।
রাস্তার পাশে নিয়ে সাইকেল থামালাম - কী ঘটনা ?
ও আমার কথার জবাব না দিয়ে দৌড়ে রাস্তার মাঝখানে চলে গেল। কুড়িয়ে নিল জ্যামিতি বক্স। সেটা বাসের চাপায় চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।
সাইকেলে চড়ার আনন্দে অথবা ভয়ে ওর হাত থেকে জ্যামিতি বক্সটা পড়ে গিয়েছিল।
সেই থেকে শুরু। ও এখন পর্যন্ত আমার বন্ধু। মাঝখানে ২২ বছর কেটে গেছে।
কত আনন্দ বেদনা স্মৃতি ওকে ঘিরে।
প্রেম, বিয়ে, বেড়ানো, ভর্তি পরীক্ষা, আড্ডা মিলে হাজার হাজার স্মৃতি।
বন্ধু তোকে খুব মিস করি।
মোতালেব হোসেন :
লোকটি সহজ সরল। মোশারফ হোসেনের বড় ভাই এবং চাচাতো ভাই। সেই হিসেবে আমারও বড় ভাই হওয়ার কথা।
কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে উনি আর বড় ভাই থাকেন নি, বন্ধু হয়ে গেছেন। এখনও ভাই বলে ডাকি, কিন্তু আমরা দু'জনেই জানি, আমরা বন্ধু।
এক সময় উনি মেসে থাকতেন। মেসে থাকিনি বলে আমার আক্ষেপ ছিল। তার মেসে থেকে সেই আক্ষেপ ভুলেছি।
রাতের পর রাত তার সাথে তাস পিটিয়ে আড্ডা দিয়েছি। কত তুচ্ছ ঝগড়া হত তার সাথে।
মাঝে মাঝে দু'জনে বসে পড়তাম রেল লাইনের ধারে। বাতাস খেতাম আর আড্ডা দিতাম। নানা বিষয়ে সেই আড্ডা।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত।
আমার বড় ভাই ও বন্ধু সে। তাকে খুব মিস করি।
সাইফুল ইসলাম মাহমুদ :
বয়সে আমাদের জুনিয়র। কিন্তু এক সাথে চলতে চলতে বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম।
অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ ও মেধাবী। কিন্তু খুবই খামখেয়ালি। বাস্তবতার চেয়ে এক কল্পনার জগতে ডুবে থাকতে পছন্দ করত। আর খুবই ফাজিল ছিল ও। ওর সাথে আড্ডা দিলে জানা যেত কত অজানা বিষয়।
অনেক দিন দেখা হয় না ওর সাথে। ওকেও মিস করি খুব।
নুরুল আলম খান মিল্কি :
ঢাকায় থিয়েটারে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুবাদে ভদ্রলোকের সাথে পরিচয়। চরম রসিক মানুষ। বয়সে আমার অনেক সিনিয়র।
কিন্তু ক্লাসমেট হিসেবে মিশে গিয়েছিলেন আমাদের সবার সাথে।
থিয়েটার স্কুলের ক্লাস শেষে বহুদিন গেছি, তার ফার্মগেটের মেসে। আড্ডা চলেছে রাতের পর রাত। মজার মানুষ।
তাকে খুব মিস করি মাঝে মাঝে।
আরও অনেক অনেক বন্ধুর কথা বলা যেত। কিন্তু তাতে করে লেখার কলেবর বড় হবে। তবে অনেকের সাথে যোগাযোগ হয়। মোবাইল ফোনের যুগ হওয়ায় অনেকের সাথে যোগাযোগ আছে। অনেকের সাথে সামনা সামনি কথাবার্তাও হয়।
তাই তাদের মিস করার কিছু নাই।
আর সামু ব্লগে এসে আমার অনেক বন্ধু হয়েছে। তাদের জানি না, দেখিনি কোন দিন, নামও জানি না, নিক জানি কেবল। তাতেই কত আপন মনে হয় সবাইকে।
আজ বন্ধু দিবসে আমার বন্ধুদের জানাই শুভেচ্ছা।
সবাই ভালো থাকুক। বন্ধু হিসেবে এর বেশি কিছু চাওয়ার নাই।
এই জীবনে ভালো বন্ধুর চেয়ে বড় কোন পাওয়া আর হতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।