আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশু পরিবার ছেড়ে পালাচ্ছে শিশুরা নোয়াখালী সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

সমাজসেবা অধিদপ্তরের নোয়াখালীর উপ-পরিচালক (ডিডি) আবু আহমেদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগ উঠেছে। যোগদানের পর থেকে তিনি এমন কর্মকান্ড করে আসছেন। ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আবু আহমেদ কক্সবাজার থেকে বদলী হয়ে নোয়াখালী জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি সরকারি শিশু পরিবারের শিশুদের যৌন হয়রানি, অধিনস্থ মহিলা কর্মচারীদের যৌন হয়রানি, কর্মচারীদের ইচ্ছামত বদলী, ঘুষ গ্রহনসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছেন। আর তার এসব অপকর্মের মদদ দিচ্ছেন সদর ইউনিয়ন সমাজ কর্মী সামছুদ্দীন ও ফরিদা আক্তার।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, ডিডি তার পছন্দ অনুযায়ী সূর্বণচর ইউনিয়ন সমাজকর্মী সুলতানা রাজিয়াকে টি.আই করে সরকারি শিশু পরিবারে নিয়ে আসে। সেখানে তার মাধ্যমে আবু আহমেদ এতিম অসহায় মেয়েদের তার সমাজসেবা কার্যালয়ের পাশে শয়ন কক্ষে নিয়ে আসতেন। কখনো শিশু পরিবারের ভিতর সুলতানার কক্ষে মেয়েদের এনে যৌন হয়রানি করতেন। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পরিদর্শনের নিয়ম থাকলে ও আবু আহমেদ সন্ধ্যার পর শিশু পরিবারে ঢুকতেন এবং গভীর রাতে বের হতেন। গত ৩ বছরে ডিডির হাতে শিশু পরিবারের অন্তত ২০ জন শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিশু পরিবারের ০৫নং রুমের সদস্য বেগমগঞ্জের পশ্চিম একলাশপুর গ্রামের মৃত লুৎফুর রহমানের মেয়ে শারমিন আক্তার জানায়, সুলতানা রাজিয়ার মাধ্যমে ডিডি তার বান্ধবী ফেন্সী, মিশু, মিতা,সাথী, আফরোজা, রাজিয়া, নুর নাহার, মুন্নি, জেসমিনসহ আরো অনেক মেয়েকে বিভিন্ন সময় বিকেলে একা তার কক্ষে যেতে বলে। কখনো সুলতানার কক্ষে যেতে বলে। যাওয়ার পর তাদের বিভিন্ন অশ্লিল ছবি দেখাত এবং তাদের যৌন হয়রানি করত। যাদের স্বাস্থ্য ভাল তাদের একেক জনকে একেক দিন করে যেতে বলত। তাদের দিয়ে তার শরীর ম্যাসাস এবং যৌন হয়রানি করত।

বের করে দেয়ার ভয়ে, কেউ কিছুই বলতনা। শারমিন আক্তার আরো জানায়, ২০১১ সালে একদিন তার বান্ধবী মিশুর মাধ্যমে ডিডি তাকে তার কক্ষে যেতে বলে। সে ডিডির কক্ষে গেলে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। এরপর সে শিশু পরিবার ছেড়ে পালিয়ে আসে। শারমিনের মা ছামেনা বেগম জানায়, প্রথমে বুঝতে পারিনি মেয়ে কেন চলে এসেছে।

বাড়িতে চলে আসার পর মারধর করে সেখানে পাঠাই। কিছুদিন পর যখন আবার চলে আসে তখনও যাওয়ার জন্য চাপ দিলে তাকে মেরে ফেললেও সে ওখানে যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তার বড় বোনের নিকট ডিডির যৌন হয়রানির কথা খুলে বলে। সে থেকে মেয়েকে আর যেতে দেননি তিনি। শারমিনের বড় ভাই সাহাব উদ্দিন জানায়, লম্পট ডিডি তার বোনের গায়ে হাত দেয়ায় তার বোন পালিয়ে চলে এসেছে।

অনন্তপুর গ্রামের জাহানারা সাবরিন নামের অপর এক নির্যাতিতা মেয়ে জানায়, সে শিশু পরিবারের ১নং রুমে থাকত। ডিডি রুমমেটদের মাধ্যমে তার কক্ষে যেতে বলে। যাওয়ার পর সে তার শরীর ম্যাসেস করার জন্য বলে এবং নানান কুরুচিপূর্ণ কথা বলে। পরে আবার অন্যদিন যেতে বলায় সে না যাওয়ায় তাকে ’ফলাফল খারাপ’ অজুহাত দেখিতে শিশু পরিবার থেকে বের করে দেয়। সাবরিনের মা সোলেমা খাতুন জানায়, স্বামী দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর মেয়েকে শিশু পরিবারে দিয়েছি।

সে খুবই সহজ সরল হওয়ায় ডিভি তাকে টার্গেট করে। তিনি আরো জানান, মাঝে মধ্যে পরিবারের ভিতরে তার মেয়েকে দেখতে গেলে অনেক মেয়ে ডিডির অপকর্মের কথা বলত। জাহানার খালা আসমা জানায়, সে তার সমবয়সী হওয়ায় তার কাছে অনেক কথা বলেছে। ডিভি তাকে কি কি বলেছে কি কি করেছে এসব বলে সে কান্না করে। সারমিন ও জাহানারা জানায়, তাদের মত অনেক মেয়ে পালিয়ে এসেছে অথবা ডিডির কথা না শোনার বের করে দেয়া হয়েছে।

অধিনস্থ মহিলা কর্মচারীদের যৌন হয়রানি ঃ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মহিলা ইউনিয়ন সমাজকর্মী জানায়, আবু আহমেদের হাতে বহু মহিলা ইউনিয়ন সমাজকর্মী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। শুধু তাই নয় তার বন্ধু খ্যাত সামছুদ্দীনের হাতে ও বহু মহিলা কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বদলীর ভয় দেখিয়ে আবু আহমেদ একা বিকেল ৫ টার পর তার কক্ষে দেখা করতে বলতেন। কখনো দুপুর বেলায় নির্জন সময়ে ডিডি ও সামছুদ্দীন মহিলা কর্মীদের কুপ্রস্তাব দিতেন। এতে রাজি না হলে তাকে বদলীসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হত।

একেক দিন একেক নারী কর্মীকে সামছুদ্দীনকে দিয়ে ফোন করাতেন। ইচ্ছামত বদলী ঃ অধিনস্থ কর্মচারীদের আবু আহমেদ ইচ্ছামত বদলী করতেন। নিজের অন্যায় আবদার না শুনলে সে কর্মীদের হাতিয়া কোম্পানীগঞ্জ অথবা অন্য কোন উপজেলায় বদলী করতেন এবং উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট মিথ্যা রির্পোট দিতেন। কখনো নিজের ইচ্ছায় কখনো তার বন্ধু সামছুদ্দীনের ইচ্ছার কারণে বদলী করা হত। গত ২০১১ সালে ১ বছরে আবু আহমেদ ২৬ জন কর্মীকে ৪৬ বারের অধিক বদলি করেন।

একাধিক কর্মীকে ৪ বার করে বদলী করেন। অপর দিকে তার পাছন্দের কর্মীদের প্রেষনের নামে তার পছন্দের জায়গায় বদলী করেন। ২০১১ সালের কর্মী বদলীর এক তালিকায় দেখা যায় ইউনিয়ন সমাজকর্মী রিতা মজুমদারকে ৪ বার, এবিএম আবদুল মতিন চৌধুরীকে ৩ বার, ফিল্ড অফিসার মো. হাফিজুর রহমানকে ২ বার,ইউনিয়ন সমাজকর্মী নজির উল্যাহকে ২ বার, অফিস সহকারী সৈয়দ সিরাজুল ইসলামকে ৪ বার, আবদুর রহিমকে ৫ বার, এমএলএসএস নিজাম উদ্দিনকে ০২ বার, আদম আলীকে ৩ বার, আবু তাহেরকে ২ বার, টিআই শাহিন আক্তারকে ২ বার,নৈশ প্রহরী আকবরকে ০২ বার বদলী করা হয়। অপরদিকে তার পছন্দের সামছুদ্দীন, ফরিদা আক্তার, রাজিয়া সুলতানকে অন্য উপজেলা থেকে বদলী করে সদর উপজেলায় নিয়ে আসে। শাহীনা আক্তার নামের এক প্রশিক্ষককে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জে বদলী করা হয় পরে আবার সোনাইমুড়িতে বদলী করা হয়।

সেখানে পদ না থাকায় বেগমগঞ্জে বদলী করা হয়। সে কোম্পানীগঞ্জে তার এলসিসি আনতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করে। তার মৃত্যুর জন্য ডিডিই দায়ী বলেই তার সহকর্মীদের দাবি। বদলী বাণিজ্য ঃ কর্মীদের নিকট থেকে বদলীর হুমকি দিয়ে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আবু আহমেদ সামছুদ্দীনকে দিয়ে কর্মীদের নিকট ফোন করাতেন বদলী ঠেকানোর জন্য তার সাথে দেখা করতে বলতেন।

উপজেলা অনুযায়ী টাকা দিতে হত। হাতিয়ায় বদলী ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি টাকা দিতে হত। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা দিতে হত। এমনি করে ডিডি ও সামছুদ্দীন বদলী বাণিজ্য করত বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা জানায়। বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অংকের টাকা আদায় ঃ বিভিন্ন অজুহাতে অধিনস্থ কর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করত ডিডি আবু আহমেদ।

তার ছেলে আবু ছায়েদ রাহি ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)তে ইলেকট্রিক এণ্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে পড়াশোনা করছে। ছেলের টিউশন ফি’র নামে কয়েক মাস পর পর কর্মীদের নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করে। এছাড়া তার মেয়ে রিক্তার বিয়ের সময় প্রত্যেক কর্মচারীদের নিকট থেকে ২ হাজার টাকা করে বাধ্য করে আদায় করে। ডিডির সাথে সামছুদ্দীনের সখ্যতা ঃ ডিডির সাথে সামছুদ্দীনের সখ্যতা দীর্ঘদিনের। একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সাথে একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সম্পর্ক শুধু অফিস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকার কথা থাকলেও ডিডির সাথে সার্বক্ষনিক চলাফেরা করত সামছুদ্দীন।

অফিস ছুটি শেষে গভীর রাত পর্যন্ত ডিডির সাথে আড্ডা দেয়। ডিডিকে বিভিন্ন সময়ে তার মনোরঞ্জণের ব্যবস্থা এবং টাকা দিয়ে নৈকট্য লাভ করে। সামছুদ্দীন ডিডিকে যা বলে তাই শুনেন। সামছুদ্দীনের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে ও ডিডি তার কোন ব্যবস্থা নেননি। নোয়াখালী সমাজসেবা কর্মচারীদের প্রশ্ন ডিডি কে? সামছুদ্দীন না আবু আহমেদ! অফিস সময়ে নিজ কক্ষে অবস্থান ঃ জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক কার্যালয়ের ঠিক দক্ষিণ পাশেই তার থাকার রুম।

অফিস চলাকালীন সময়ে সে নিজ কক্ষে অবস্থান করে। এছাড়া অফিস চলাকালীন সময়ে কখনো কখনো লুঙ্গি গেঞ্জি পরে থাকে। যা সরকারি চাকুরী বিধি বর্হিভূত। এ সব ব্যাপারে উপ-পরিচালক আবু আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি কাজকে ভালবাসেন বিধায় তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ হাছিল করতে না পারায় তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা বানোয়াট গল্প তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে সামছুদ্দীনের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠো ফোনে (নাম্বার-১৮২৯৯১৬০৫৮) ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন সমাজকর্মী ফরিদা আক্তার জানান, তিনি পূর্বে কবিরাহাট উপজেলায় ছিলেন। বর্তমানে সদর উপজেলার নোয়ান্নই,কাদিরহানিফ ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কখনো সামছুদ্দীনের সাথে একত্রিত হয়ে কোন কর্মীকে বদলীর ভয় দেখিয়ে ফোন করেননি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.