আমি জানি আমি জানি না শওকত ওসমান ।
আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক,বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাশিল্পী ,প্রাবন্ধিক শওকত ওসমান এর আজ মৃত্যু বার্ষিকী (জন্ম ২। ১। ১৯১৭ -মৃত্যু ১৪। ৫।
১৯৯৮)। ঢাকা কলেজে তার বাংলা ক্লাশ ছিল আমাদের সবচেয়ে প্রিয়। কেননা তিনি কোনদিন বই খুলে পড়াতেন না, মুল বিষয়ের আগে তার অবতরণিকা পাঠ দিতেই অধিকাংশ দিনের ঘন্টা পেরিয়ে যেত। চল্লিশ মিনিটে মধ্য প্রাচ্য থেকে প্রাচীন ভারত হয়ে গ্রীস ও আজকের আধুনিক জগৎ পরিভ্রমন । আমাদের সবাইকে সম্বোধন করতেন ‘স্যার’ বলে ।
বলতেন ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে জীবনের পাঠ নেবার এখনই সময় । তবে জীবন কে ফাঁকি নয়। কেননা জীবন তো একটাই। মুক্তচিন্তারও পাঠ তার কাছেই পাওয়া । বলতেন-‘ মুহাম্মদ যদি বরিশালে জন্ম নিতেন তাহলে স্বর্গের বর্ণনায় পানির নহরের ছড়াছড়ি থাকতো না ,বরং চাওয়া হতো শুকনো ডাঙ্গা,বরিশাল বাসীর জন্য যা স্বর্গ ।
আরব মরুভুমিতে পানি নাই । তাই তাদের কল্পনার স্বর্গ কেবলই পানিই পানি। ’
তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি- ক্রীতদাসের হাসি ,জননী, জাহান্নম হইতে বিদায় প্রভৃতি
পুরস্কার- আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরমেন্স পদক, একুশে পদক, নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক, মুক্তধারা পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, টেনাশিস পুরস্কার, মাহবুবউল্লাহ ফাউন্ডেশন পদক এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন।
তার নানা ছাদের কিছু লেখার আংশিক নমুনা । ।
পোট্রেট গ্যালারি । শওকত ওসমান
‘ভাষা সৈনিক অজিতকুমার গুহ । বিরলপ্রজ লেখক , সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ, খ্যাতিমান অধ্যাপক । ১৯৬০ সাল । গৃহবন্দী ,সার্বক্ষনিক পুলিশের নজরে ।
শিল্পাচার্য্য কামরুল হাসান তার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন । তাকে পুলিশ জেরা করছে-
-উনি আপনার কে হোন ?
-আমার দাদা ।
-দাদা মানে ?
-দাদা মানে বড় ভাই, অগ্রজ ।
-অগ্রজ ?
-হ্যাঁ । ’ কামরুল হাসান উত্তর করলেন ।
-আপনার নাম তো কামরুল হাসান ? আমরা জানি শিল্পী ?
-জ্বী ।
-কিন্তু প্রফেসর গুহ তো হিন্দু ।
-নিশ্চয়ই ।
-আপনি মুসলমান , কিন্তু হিন্দু কি করে আপনার দাদা হয় ?¬
-হয়। হয়।
সকলে তা বোঝে না ।
আমাকে দেয়া অটোগ্রাফের খাতায় লেখেন-
‘মুসলমানেরা বোঝেনা যুগের ফারাক-
তাই স্বদেশের শ্যামলিমা ছেড়ে,
শোনে মরুভূমির ডাক । ’ - শওকত ওসমান
রনেশ দাশগুপ্ত মৃত্যুর পর তার উদ্দেশে লেখেন-
‘মানুষ হিসেবে তোমার সীমানায় পৌঁছাব
এমন স্পর্ধা কখনও করিনি পোষন,
গৌরী শৃঙ্গের পানে বিস্ময়াহত চেয়ে থাকি ।
তোমার স্মৃতি চিরকাল
বহন করে সঞ্জীবনি গুন,
আহা হতে পারতাম যদি
তোমার মত মালাউন । শওকত ওসমান ৪।
১১। ৯৭
শ্রদ্ধেয়া বেগম সুফিয়া কামাল
প্রীতিভাজনেষু(ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক)-
‘আপনার একজোড়া বোরখার মধ্যে
প্রথমটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে লেগেছিল কত বছর ?
সে কাহিনী আমরা জানি ,
সেটা গিয়ে পড়েছিল মরদদের মগজের উপর।
দ্বিতীয়টা কোথায় করলেন স্থানান্তর ?
তাড়াতাড়ি বলুন, বড় দরকার আজ,
ওটা শো কেসে ধারণ করবে
বাংলাদেশের যাদুঘর ’। ।
কিছু -‘শেখের সম্বরা ।
শওকত ওসমান
রসুল বলেছিলেন মাথায় টুপী পরতে, মুসলমানেরা টুপী পরলো মগজে ।
আরবী নাম তৌবা ,সংস্কৃত নাম তৌফা
‘অসহায় সে দেশে আল্লাহ্,
সরকার যে দেশে মোল্লা ।
হিন্দু মুসলমান হওয়ার আগে
মানুষ হওয়া লাগে।
‘তোমরা আমার সরকার
তাদের কিন্তু দরকার
আল-বদর, রাজাকার’
কর্মের অপর নাম ধর্ম, জানে গুণীজন,
গ্রহণ-কালে দুই হাতে যেন রমণীর স্তন।
মৃত্যুর আগে লিখে যান-
'এবার যেখানে যাবো
অসম্ভব ফিরে আসা
কাঁকড়ার মত অগ্রে-পশ্চাতে
জেনো বিচরণ-শীল
অনুজের প্রতি তার ভালবাসা।
'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।