সুখীমানুষ
আজ কালের কণ্ঠে আমার এই লেখাটি প্রকাশ হলো।
শওকত ওসমান : সার্থক কথাশিল্পী
'এবার যেখানে যাবো/অসম্ভব ফিরে আসা। ' আজ ১৪ মে। ১৯৯৮ সালের এই দিনে কথাশিল্পী শওকত ওসমান মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু ফিরে আসাটা তাঁর জন্য অসম্ভব হয়নি।
তিনি ফিরে ফিরে আসেন প্রতিনিয়ত আমাদের মন ও মননে। যাঁকে নিয়ে কথা বলছি, তিনি নিজেকে মনে করতেন ঝাড়ুদার। সমাজের সব জঞ্জাল লেখনীর মাধ্যমে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবেন_এ ব্রত থেকেই বলতেন তাঁর এই পরিচয়। যেমন করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে কলমপেষার মজুর মনে করতেন। তাঁর আসল নাম শেখ আজিজুর রহমান।
লেখালেখির নাম শওকত ওসমান। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি। পড়াশোনা করেছেন মক্তব, মাদ্রাসা, কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর কর্মজীবনও শুরু করেন কলকাতায়ই। পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় ছিলেন লেখক।
গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, আত্মজীবনী, স্মৃতিখণ্ড, শিশুতোষ ইত্যাদি বিষয়ে লিখেছেন অনেক। তবে কথাশিল্পের ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থান কতটা সুদৃঢ় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি একজন সার্থক কথাশিল্পী। তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ শওকত ওসমানকে বলতেন 'অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ'।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি চলে আসেন পূর্ববঙ্গে। কলকাতায় থাকতেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন বেশ কিছু লেখা দিয়ে। যেমন_'বনি আদম', 'ওটেন সাহেবের বাংলো', 'তস্কর-লস্কর' ইত্যাদি। পাকিস্তান আমলে জামাল উদ্দিন ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। নিয়মে বেশ কঠোর স্বভাবের লোক।
ছাত্ররা তাঁর কাছে একদিন বিচার দিল যে বাংলা ক্লাসের টিচার তাদের কিছুই পড়ান না, শুধু গল্প করেন। অধ্যক্ষ সাহেব তখন টিচারের নাম জানতে চাইলে ছাত্ররা বলল, 'শওকত ওসমান'। জামাল উদ্দিন সাহেব গম্ভীর হয়ে বলেছিলেন, শওকত ওসমানকে পড়ানোর জন্য রাখা হয়নি। তিনি ঢাকা কলেজে আছেন_এটাই অনেক বড় গর্ব। পড়ানোর জন্য অন্য টিচার তো আছেনই।
বাস্তবিক অর্থে তিনি এক 'বিলাসী' গল্পই শেষ করতে পারতেন না দুই বছরে। অন্য টিচারদেরই পড়াতে হতো বাংলা। ছাত্রদের তিনি 'স্যার' সম্বোধন করতেন এবং আপনি করে বলতেন। প্রায়ই সাতসকালে প্রিয় ছাত্রদের ফোন করে বলতেন, 'স্যার, কেমন আছেন?' আর ঘনিষ্ঠজনদের বলতেন, 'ভ্রাতঃ, প্রাতঃস্মরণীয় হও। ' তিনি স্পষ্টভাষী ছিলেন।
বনগাঁয়ে এক সাহিত্য সভায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইসলামিক আধ্যাত্মিক কথা শুরু করায় ২৩ বছরের যুবক শওকত ওসমান দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, 'সাহিত্যের কথা বলুন, আমরা ধর্মের কথা শুনতে আসিনি। ' তাঁর বিখ্যাত সব সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম হলো_'জননী', 'ক্রীতদাসের হাসি', 'জাহান্নাম হইতে বিদায়' ইত্যাদি। তিনি স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকসহ (১৯৮৩) বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২), আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৬), পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৭)_এমন আরো অনেক পুরস্কার পান। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি সবার খোঁজখবর নিতে ছুটে যেতেন। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠস্বর বরাবরই ছিল উচ্চ।
প্রতিবাদী এই মহতীর প্রয়াণ দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করি।
মো. জাহাঙ্গীর হোসেন
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।