১৯৬০ সালের কোন এক মাসের কোন এক দিনে, কিশোরগঞ্জ জেলার একটি থানার পুলিশ হিসেবে চাকুরীরত এক ব্যক্তি প্রমোসন পেয়ে দারোগা হবার খুশিতে এক হাড়ি মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এমন সময় তার বড় ভাই থানায় এসে হাজির। মিঞা ভাই এসেছেন তার বড় মেয়ে ডাক্তারী ভর্তি পরীক্ষার পাশ করেছে সেই খবর নিয়ে। নতুন দারোগা সাহেব আরেক হাড়ি মিষ্টির ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত। ঠিক তখনই সিনেমার দৃশ্যের মত তার বড় ও মেঝ ছেলে সাইকেলের ঘন্টি বাজাতে বাজাতে থানার প্রাঙ্গনে প্রবেশ করল এবং খুবই উত্তেজিত অবস্থায় জানাল কিছুক্ষণ আগে তাদের একটি বোন হয়েছে অর্থাৎ দারোগা সাহেবের কন্যা সন্তান হয়েছে। দুই ছেলের পর দারোগা সাহেব কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়লেন।
থানার সবার জন্য আরেক দফা মিষ্টি আসল আর দারোগা সাহেব তার মিঞা ভাই আর ছেলেকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলেন। বাড়ি এসে আঁতুর ঘরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে যখন সদ্য জন্মপ্রাপ্ত মেয়েকে কোলে নিলেন তখনই খবর আসল তার বোন জামাই লন্ডনে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পেয়েছেন। এতগুলো খুশির খবর একসাথে আগে কেউ কখনো পেয়েছে কিনা জানা নেই তবে তার জীবনে এরকম ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তাই দারোগা সাহেব আর কোন চিন্তা-ভাবনা করলেন না মেয়েটির নাম রাখলেন হ্যাপী।
সবার জন্য খুশির আবেশ নিয়ে আসা সেই 'হ্যাপী' হচ্ছেন আমার মা।
আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি ১৯৯৭ সাল। সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী'র ছেলে আমাদের বাড়িতে অল্প কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি একদিন খুব মন খারাপ করে ভাত খাবার সময় বললেন আজ আমার মায়ের জন্মদিন। আমি প্রতি বছর এই দিনটি পালন করে আসছি শুধু এবছরই পারলাম না। ভদ্রলোক এর কথা শুনে হঠাৎ মনে হল আমার মায়ের জন্মদিন আমি পালন করি না কেন? আরও একটা বড় প্রশ্ন মনে হল আমার মায়ের জন্মদিন কবে? আমি জানি না আমার মায়ের জন্মদিন কবে?
শুরু হল জিজ্ঞাসার পালা, প্রথমে আমার নানি, তাঁর কাছ থেকে উপরের ঘটনাগুলো জানলাম সাথে আমার মায়ের ছোটবেলার আরও অনেক গল্প।
এত সব কথার শেষ কথায় কিন্তু জন্মদিনটি সঠিক মনে করতে পারলেন না। নানিকে দোষও দেয়া যায় না, ৮ সন্তানের জন্মদাত্রী মা এক সন্তানের জন্ম তারিখ মনে নাই রাখতে পারেন। তার উপর এত বছর পর। এর পর একে একে আমার খালা, মামা এবং আরও অনেকে। সকলেই উপরের ঘটনা নিজের নিজের মত করে বললেন কিন্তু কেউই সঠিক তারিখটি মনে করতে পারলেন না।
আমি ভয়াবহ ক্লান্তি নিয়ে বাবার কাছে যাওয়ার পর তিনি বললেন, তারিখ ভুলে যাওয়ার ব্যাপার আসলেই খুবই বেদনাদায়ক তবে এখন কিছু করারও নেই। তাবে তোমার আবেগের জায়গাটাকে স্পষ্টতা দিতে চাইলে বছরের কোন একটি দিন ঠিক করে নিলেই হয়। দিনটি স্পেশাল হতে হবে এমন কোন কথা নেই। মা যেহেতু তোমার তাহলে তুমিই ঠিক কর কবে পালন করবে তার জন্মদিন।
তখন প্রথম প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার এর বদৌলতে জানতে পারি মাদার'স ডে সম্পর্কে।
ঠিক করে ফেলি এই দিনই হবে আমার মা হ্যাপী'র হ্যাপি বার্থডে। আজ মাদার'স ডেতে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা আর মা'কে জানাই হ্যাপী মাদার'স বার্থডে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।