skype :: hasib.zaman
আজকে আমার একটা মোটামোটি ভাল সাইজের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার ডেট ছিল। বেশ কয়েকদিন ধরে এটাকে সাইজ করার আপ্রান চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ বাবাজীর চরম যন্ত্রনায় কোড আর করতে পারি না। আমার পুরানা আমলের পিসি এন্টিভাইরাস এবং হাবিজাবি স্টার্টআপ কাজ শেষ করে দম ফেলতে না ফেলতেই চারপাশে অন্ধকার দেখি। নিজেকে কয়েকটা সুন্দরমত শব্দ শুনিয়ে গজরাতে গজরাতে বারান্দায় গিয়ে ঝিম মেরে বসে থাকি।
নিজেকে নিতান্তই অসহায় মনে হয় – কারন কারেন্ট না থাকলে আমার আর কোন কাজ থাকে না, শুধু বারান্দার গ্রিল ধরে ঝুলে থাকি।
কাল রাতে কাজ শেষ করতেই হবে – এমন ৯ নম্বর মহা বিপদ সংকেত মাথায় নিয়ে কারেন্টের সাথে রীতিমত মারামারি করে কোড করছি। ঘড়ির কাটা বারটা পার করলে ব্লগে ঢুঁ মারি। আমার প্রোফাইলের জায়গায় তিনখানা বেলুন নজরে আসে। ব্লগে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হিমালয় সেই সময়েই শুভেচ্ছা জানায়।
বেশ ভাল লাগল। ফেইসবুকের সুফলে কিংবা কুফলে অবশ্য দুইদিন আগে থেকে নানান কিসিমের মানুষজন উইশ করতেছে। এরা আগে থাকে টের পায় কেমনে আল্লায় জানে। এখানে “হ্যাপী বার্থডে” জানাতে সবার উৎসাহ সীমাহীন। ইয়াহুতে আর ঢুকি না, কারন চ্যাট করার অবস্থায় আমি নাই।
কাজকর্মে ফিরে আসি এবং সাথে সাথে কারেন্ট চলে যায়।
নেটে রেগুলার হবার পর আমার মোবাইলখানা বেকার দিন কাটায়। মোবাইলে মেসেজ লিখতে আজকাল চরম বিরক্ত লাগে। তারপরে ও মেসেজ কিছু আসছে। কাজ নাই তাই বসে বসে রিপ্লাই দেই।
বলাবাহুল্য এগুলো বেশীরভাগ এসেছে কতিপয় বালিকাদের কাছ থেকে যাদের অনেকেই ভার্চুয়াল। কাছের বন্ধুরা আছে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দৌড়ের উপরে, এরা কেউ কল দিল না।
রাত আড়াইটার সময় ৯০% কাজ শেষ হলে কারেন্ট চলে গেল। কাহাঁতক আর সহ্য করা যায়। হাল ছেড়ে ঘুম যাই।
কিন্তুক ভোর ছয়টায় জনৈকা ভার্চুয়াল বালিকার মেসেজে ঘুম ছুটে যায়। কিঞ্ছিত বিস্মিত হই । এই বালিকার সাথে সর্বশেষ কথোপকথন হয়েছে মাস দুয়েক আগে। অথচ আজ ফজরের নামাজ পড়ার পর আমার বার্থডে তার স্মরনে আসল কিভাবে?
ঘুমহীনতায় কাতর আমি সকালের ক্লাস করব না বলে একটা মহতী সিদ্ধান্ত নেই। ভোর নয়টায় মোবাইল যোগে আসল ভিলেনের আগমন।
ভীমরুল কায়েস “হ্যাপী বার্থডে” জানিয়ে দাঁতাল একটা হাসি দিল। বুঝলাম মতলব খারাপ। অপরপ্রান্তে জনপ্রিয় ফেইসবুকার মামু ভেটকি হাসি দিয়ে বলল, “দোস্ত প্রিপারেশন নিয়া আসিও। আমাদের খাওয়াইতে হবে। ” দুইমাসের টিউশনিহীন যুবকের ঘুম এবার পুরোপুরি ছুটে যায়।
বুয়েটের কোরিয়ান ল্যাবের চোখ ঝলসানো রূপের মাঝে আমার অ্যাসাইনমেন্ট খানা স্যারের সামনে পেশ করি। প্রথমেই অসমাপ্ত অংশে তার চোখ পড়ল। কাহিনী কি জানতে চাইলে বিদ্যুত মামার কথা বললাম। স্যার মাত্রাতিরিক্ত ভাল ব্যবহার করে আমাকে সমবেদনা জানিয়ে, আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই চলে গেলেন। আমি বেশী খুশী হতে পারলাম না, কারন আমার এক কপিপেস্ট ফ্রেন্ড কাজ শেষ না হবার অজুহাত হিসেবে আইপিএলের ব্যাস্ততার কথা বললেও স্যার খুশীমনে চলে গেলেন।
এত উদারতা আমার কাছে রহস্যময় লাগল।
ইতোমধ্যে লেডীকিলার (লেডীরা যাকে কিলায়) ফ্রেন্ড শুভ এবং দুজন শ্মশ্রুমন্ডিত যুবক এসে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এদের সাথে আম্পাস (বড় আকারের দৈত্য) সজীব কে নিয়ে আমরা সাতজন পুরান ঢাকার জেলখানার দিকে ধাবিত হলাম। সেখানে নান্নার বিরিয়ানী প্লাস বুরহানী দিয়ে ভোজন সারি। বন্ধুরা আমার জন্য একখান কেকের ব্যবস্থা করল।
সেটাকে নিয়ে সবাই চুপেচাপে নজরুল হলের ছাদে গিয়ে উঠলাম।
আমার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের প্রথম আকর্ষন বাংলা সিনেমার জসিমের উত্তরসুরী - মামু এবং শ্মশ্রুমন্ডিত যুবক মেরাজের যুগল নৃত্য। হাসতে হাসতে সবার দিশেহারা অবস্থা। এদের পারফরমেন্স দেখে অনেকের জোশ উঠল, আমি বাদে সবাই অর্ধনগ্ন হয়ে লাফালাফি ঝাপাঝাপি নৃত্য শুরু করে দিল। তখন কেন যেন ভীমরুল কায়েসকে সবার থেকে ভিন্ন প্রজাতির বলে মনে হল।
কেক কাটার পূর্বে শুভর জীবনের একমাত্র অবলম্বন নোকিয়া এক্সপ্রেসে আমাদের নাটিকা ধারন করা হল যা ভীমরুলের আতলামিতে আর আম্পাসের ক্যামেরাবাজিতে মোটামোটি উপভোগ্য হল। কেক খানা বেশ সুস্বাদু। সবার হা করা মুখে কেক ধরাধরি করে ফ্লাশ মারা হল বারবার। খাওয়া শেষ করেই কয়েকজন (মিনমিনা নাসিফ আর খাই খাই শুভ) ভেগে যাওয়ার প্লান করল, তারা না গেলে নাকি ছাত্রী কান্না করবে। কিন্তু পার্টির আসল অংশ তখনো বাকী।
রাত নেমে আসে তারাদের হাত ধরে। আমরা ছাদে বিছানা পেতে খালি গায়ে শুয়ে পড়ি। উপরে উন্মুক্ত আকাশ-নীল। আর নিচে আমরা কন্ঠ ছাড়ি জোড়ে। প্রথমে শিরোনামহীন, আর্টসেল আর তারপরে একে একে বাচ্চু, জেমস, হাবীব, ফুয়াদ, মনপুরা চলতে থাকে নন্সটপ।
কিছু অজানা গায়কের গান শোনা হয়। এমনকি বাদ যায় না পথিক নবী, আনিলা কিংবা মিলা। তারপর রাত বাড়ে। একটা অদ্ভুত সুন্দর দিনকে পিছনে ফেলে আমরা নেমে আসি ইট-কাঠের বাস্তবতায়।
দিগন্ত জুড়ে নীলিমার মাঝে
পলাতক সময় করে পরিহাস
স্তব্ধ নিঃশ্বাস দূরে ঠেলে
আসি আমি ফিরে বারবার
ছুঁয়ে যায় আবারো হারায়
একই আকাশে গোধূলি … …
গোধূলি - শিরোনামহীন
২২-৪-০৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।