আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই! আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে........২
রনির পাগলামি আর আমার সুতো ছেড়ার টান......... দুই ই সমান তালে চলছিল। ঘুম থেকে চোখ মেলেই সে আমার সাথে কথা বলে , ঘুমতে যাবার আগে একটা গুডনাইট উইশ কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুধু "ভালবাসি" বলার জন্য একটু সময় নিয়ে বাথরুমে ঢোকা শুরু করল। যেন এর কোন ব্যত্যয় হলে সৃষ্টি কর্তা তার মনুষ্য জনম ডিসমিস করে দেবেন। আমি বুঝতে পারলাম আমার ভাষায় পাগল, ম্যানারলেইস, বেশি কথা বলা, জীবনের হিসেবে ভীষন কাঁচা, প্রেমের পাঠে অপটু ছেলেটার রক্তের হিমোগ্লোবিনে আমি অক্সিজেন হয়ে মিশে গিয়েছি।
অতঃপর আমি আমার ছন্নছাড়া সূতো ছিড়তে চাওয়া মনটার পিঠ চাপড়ে বললাম "ধিরে সোনা, তাকিয়ে দ্যাখ, যা চেয়েছিলি পেয়েছিস!" মন আমার শান্ত হতে শুরু করল। এক সময় মনে হল এই ছেলেটার "করুম, দিমু, খামু" যেগুলোকে আমি রেলওয়ে বস্তির ভাষা বলি সেগুলো না শুনলে কেমন যেন অস্থির লাগে। বুঝলাম ওর এই সব বিগড়ে যাওয়া স্বভাবগুলোকেই আমি ভালবাসি। খেতে খেতে খাবার মুখে নিয়ে গম গম করে কথা বলা, চুল না আচড়ানো, ঘুম থেকে ঊঠে ফ্রেশ না হয়ে আমার সাথে কথা বলা (ইয়াক) শব্দ করে খাওয়া, সুন্দর করে শান্তি নিকেতনি টানে কথা না বলতে পারা, কথায় কথায় "শালা" "আবার জিগায়" বলা গুলোই ওর বিশেষত্ব! ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে সোজা সাপ্টায় বলে দেয়া "যদি আমারে ছাইড়া যাও, যেই হালারে বিয়া করবা, অরে আগে খুন করুম, তারপর তুমার সামনে আমি মরুম, বুঝবা বাইচা থাকা কত কষ্ট!" এমন সব কথা শুনলেই একই সাথে আমার কান্না পেত, সাথে হাসিও! মনে হত কান টেনে বলি "তোমার মত গাধা পেলে কে আর শুধু শুধু মানুষ খুঁজবে? গাধার পিঠে চেপেই জীবনটা কাটিয়ে দেবে!" কথায় কথায় রেগে ফেটে পড়াটা ওর স্বভাব ছিল (এখন ঠিক হয়ে গেছে, আমার রাগ সামলাইতেই শেষ)। তাই ডাকতাম গাব্বার সিং।
গায়ের চামড়ার নীচে মেলানিন একটু বেশি বলে কাল্লু মিয়া বলেও ডাকতাম। ওর কালো রং নিয়ে কি যে ভয়াবহ মশকরা আমি করি! কোনদিন ওকে বলা হয়নি, এই কাল ছেলেটার অন্তরে এক ফোটা মেলানিনও সৃষ্টিকর্তা মেশাননি!
আমার বেসামাল দিনগুলোতে আমি পরকে নিয়ে যতটা না খেলেছি তার থেকে বেশি খেলেছি নিজেকে নিয়ে। আমি একটা প্রশ্নের উত্তর খুজতে কতবার এই মরণ খেলায় নেমেছি তা শুধু আমি জানি। "আমার কি নেই, যার জন্য আমাকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় একলা দাঁড় করিয়ে রেখে পালিয়ে যাওয়া যায়?" --- এর উত্তর বারবার পেতাম, আবার নতুন করে প্রমানের জন্য উঠে পড়ে লাগতাম। দিনের শেষে ক্লান্ত হতাম, কিন্তু স্বস্তি মিলত না! এ খেলা থেকে রেহাই পেতে কি না করেছি।
সাইকিয়াট্রিস্ট নামক কিছু এক্সপেরিমেন্ট ফ্রিক কে হাজার হাজার টাকা দিয়েছি! রোজ রাতে একটা করে স্লিপিং পিলের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছি। কাজ হয়নি! আমি রনির জন্য কিছু করতে পেরেছি কি না সেটা সেই ভাল বলতে পারবে, কিন্তু আমি জানি ও আমাকে সেই "নিজেকে নিয়ে মরণ খেলার" মাঠ থেকে বাইরে এনে একটা খোলা আকাশ দিয়েছে, একটা পড়ন্ত বিকেল দিয়েছে, একটা উতলা হাওয়ার গান দিয়েছে! আমার কাছে একটা সমীকরণ কেমন করে যেন মিলেই গেল, আমি আগে যা বিশ্বাস করতাম সেটা ঠিক নয়। আমি বিশ্বাস করতাম দুজন পোড় খাওয়া মানুষ একে অপরের কাছে আসলে কেউ কাউকে ছেড়ে যেতে পারেনা। ভুল ছিল সে তত্ব! দুজন পোড় খাওয়া না, দুজন নষ্ট হওয়া মানুষ যখন দুজনের কাছে আসে তখন সৃষ্টিকর্তাও হাল ছেড়ে দেন তাদের আলাদা করবার! দুটো ভীষণ ভাল মানুষ, কিংবা গড় পরতায় ভাল মানুষ এক জায়গায় হলে তাদের নষ্ট হয়ে যাবার, ভালমানুষী ভালবাসায় ও সন্দেহ ঢুকে পড়বার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু এখানে? কাভি নেহী! এমন বেহুশ, পাগলপারা ভালবাসার কথাগুলো প্রাইভেসির দোহাই দিয়ে লুকিয়ে রাখতে কেমন যেন স্বার্থপর মনে হয় নিজেকে!
মাঝখানে জানুয়ারির শেষের দিক থেকে রনি প্রায়ই খুব অসুস্থ থাকত। জ্বর, ঠাণ্ডা লেগেই থাকে।
আমাকে বলে "সামান্য জ্বর, ঠান্ডা"। আমি খুজতে থাকি, বুঝতে পারি "এ সামান্য কিছু না"। এভাবে চলছিল মিথ্যের বেসাতী। রনির অনেক কিছুই অনেক ভাল পারলেও, মিথ্যে কথাটা একদমই গুছিয়ে বলতে পারেনা। তাই আজ এক কথা, কাল এক কথার বৈপরীত্য আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছিল কিছু একটা গড়বড় হয়েছে কোথাও! কিন্তু এটা নিয়ে বেশি ভাবাভাবি কিংবা ঘাটাঘাটি কোনটাই আমার পোষাচ্ছিল না।
কারন রক্তের প্লাটিলেট আশংকাজনকভাবে কমছিল আমার। ব্লগেরই এক পরিচিত বন্ধু (ইমির) হবু ডাক্তারের পরামর্শে পিজির ডা. ফারহানার কাছে গেলাম। একই টেস্ট রিপোর্ট! রনি কে চেপে গেলাম। ভারি ইঞ্জেকশন আর ক্লান্তি আমাকে খেয়ে ফেলছিল যেন। এর মধ্যে জানতে পারলাম, এবার রক্ত নিতে হবে শরীরে! কিভাবে রনিকে জানাব বুঝতে পারছিলাম না।
বড়'দা বারবার তাড়া দিচ্ছিল রনিকে জানাতে। আমি পারছিলাম না। কারন আমি তখনও জানতাম না, আমি ঠিক হব কি না! এখানে একটা কথা বলে নেই, আমার রক্তের এই সর্বনাশ একটা ভুল চিকিৎসার ফল। ল্যাব এইডের যে দামী সাইকিয়াট্রিস্ট মহিলাকে দেখিয়েছিলাম, তিনি আমাকে গিনিপিগ মনে করে এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে ভুল ওষুধ দিয়েছিলেন। বাকিটা গুছিয়ে বলতে পারব না, ডাক্তারদের ভাল জানার কথা এসব।
এর মধ্যে রনির অসুস্থতা আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল। জানি এখন আমি যা লিখব তাতে অনেকেই ধাক্কা খাবেন, কিন্তু এই ব্যাপারটা আমি আজ পর্যন্ত শুধু কো ইন্সিডেন্স হিসেবে নিতে পারিনি। অনেক চেষ্টা চরিত করে আমি জানতে পারি আমার আর রনির অসুখের মুল একই। আমার প্লাটিলেট স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম, আর ওর বেশি, অনেক বেশি! আমি যেদিন প্রথম আবিস্কার করলাম আমার খুব আধুনিক মনটাও নড়ে চড়ে ঊঠে বলল "এ কেমন করে হল? এ কি কোন ইঙ্গিত?"!
রনি আর মেঘার (আমার বান্ধবী) একদিন চ্যাট হচ্ছিল ফেইসবুকে। সেদিন আমিও এখানে বসে রনির আইডিতে লগ ইন করেছিলাম।
তখনই সামনে আসে সব আমার। (স্যরি রনি, স্যরি মেঘা তোমাদের সব কথা সেদিন আমি লাইভ দেখছিলাম এখানে বসে)। সেদিনি জেনেছিলাম ওর অসুখের কথা। এটাও জেনেছিলাম এই ছেলেটা শুধু কথাচ্ছলে না, সত্যি আমাকে পাগলের মত ভালবাসে! কাঁদলাম আর চ্যাট ফলো করতে থাকলাম। তারপর মেঘা কথা শেষ করে চলে গেল।
আমি ফোন দিলাম রনি কে। গালি দিলাম, বকলাম, চিৎকার করলাম কেন আমি জানতে পারিনি এসব সে নিয়ে। সাথে নিজের অসুখের কথাও বললাম। বললাম আমরা সেরে উঠব খুব জ্বলদি, তবে কেন এই লুকোচুরি! আমরা কথা দিলাম দুজনকে, যাই ঘটূক আমরা কেউ কাউকে কিছুই লুকাব না! সেই থেকে রনি আমার সবচে' ভাল বন্ধু, স্মার্টলী বেস্ট ফ্রেন্ড!
মার্চের শুরুর থেকেই রনি খুব বেশি অস্থির হয়ে যেত। যেন তক্ষুনি আমাকে না পেলে সে সব উলটে পালটে দেবে।
কি ওর ভয় ছিল তা আমি নিজেও জানিনা! হঠাত মার্চের ১০ তারিখের দিকে বলল "আমি পরের সপ্তাহে আসছি"। অথচ কথা ছিল ও এপ্রিলের শেষে আসবে! আমি ভাবলাম বোধ হয় অতি আবগের কথা! কিন্তু ১৬ তারিখে সে ঠিক টিকেট কেটে ফেলল। আমি ব্লগীয় ভাষায় তব্দা খেলাম। ১৬ তারিখ থেকে ২০ তারিখ ল্যান্ড করার আগ পর্যন্ত কি সময় আমার গেছে তা আমি হয়ত কোনদিন কাউকে কোন ভাষাতেই বোঝাতে পারব না।
বাকিটা পরের ২ পর্বে! একটা সুইট গান শুনতে শুনতে ঘুমোতে যান সবাই!
(ফাট্টু) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।