আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিরে দেখি হিয়ার মাঝে -২

-

সিকোয়েন্স- প্রথম দেখা । দৃশ্যপটঃ ১ ওপেনিং শট - লং শটে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ীর জ্যাম। জুম ইন-সারি সারি গাড়ীর ছাদ ছুঁয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্টে এসে ফ্রেম স্থির হবে। সাথে সাথেই লাল বাতি হলুদ হয়ে সবুজ হবে। সেটঃ আউটডোর-মগবাজার আড়ং।

লিংকঃ প্রতীক্ষা মেইন গেট এর সামনে দাঁড়ানো ছিল আকাশ। সাদা একটা ফতুয়া আর নীল রং এর জীন্‌সএ ও’র পুরা ক্যাজুয়াল লুক। তার হাতের ব্যাগে রয়েছে- একটি আর্চিস কার্ড, কিছু চকলেট, আর এক গুচ্ছ অর্কিড । দোকানদার'দের কটাক্ষ অগ্রাহ্য করে তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছে প্রতিটি উপহার; নীলিমার যোগ্য করে তুলবার জন্য। আকাশ আরেকবার হাতঘড়ির দিকে তাকাবে- পৌনে বারটা বাজে।

নীলিমার আসার কথা বারো’টার দিকে। ওদের কলেজে কিসের নাকি সংবর্ধনা আছে। কাল ফোনে কথা বলার সময় আকাশ মনে মনে এক লক্ষবার ধন্যবাদ দিয়েছে অধ্যক্ষ স্যারকে। দেড়টা নাগাদ ফ্রেমে আসবে একটি হূড লাগানো রিক্সা। চুরি যাওয়া সময়ের সাথে বোঝাপড়ারত আকাশ ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখবে সেদিকে।

যাত্রী নামতে বেশ খানিকটা বিলম্ব হওয়ায় ও বুঝে নিবে তার প্রতীক্ষায় অবসান ঘটলো অবশেষে। ও এগিয়ে যাবে। (কিছু কিছু প্রতীক্ষা অতি দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও এমন মধুর হয়ে মিশে থাকে হৃদয়ের ক্যানভাসে। ) অবশেষে নামবে নীলিমা। হাল্কা নীল একটা ড্রেস পরেছে ও।

চুমকি আর সাদা-কালো সুতার কিছু কাজ করা। সাধারন সাজ, খোলা চুল আর ওর সপ্রতিভ চেহারা-সব মিলিয়ে একটা সম্পুর্ণ ছবির ফ্রেম ! দৃশ্যপটঃ ২ ওপেনিং শট-সিড়ি বেয়ে ক্যামেরা উঠে আসবে উপরের তলায়। তারপর আইসক্রীম পার্লারের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে সোজা কাউন্টারে যেয়ে থামবে ফ্রেম। সেটঃ ইনডোর-আইসক্রীম পার্লার এ এক প্রান্তের একটি টেবিল, পেছনে জানালা। সে সময়ে পার্লারে তেমন লোকজন ছিলনা।

লিংকঃ অনুরাগের ছোঁয়া কাট টু কাট ফ্রেমে আসবেঃ আকাশ আর নীলিমাকে দেখা যাবে - মুখোমুখি বসা। ভ্যালেন্টাইন কাপ -চকলেট ফ্লেভার অর্ডার করলো আকাশ। দুজনেই নিশ্চুপ কিছুক্ষন। তারপর নীরবতাকে ছুটি দিয়ে আকাশ গলা পরিষ্কার করে নিবে। একে একে তার উপহার গুলো এগিয়ে দিবে নীলিমাকে।

আর সাথে মাখিয়ে দিচ্ছে খানিকটা ভুমিকা। ‘ফুল’- মনের আনন্দ প্রকাশের এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই প্রকৃতির বুকে। অকৃত্রিম। ‘চকলেট’- সুস্বাদু বটে। আর এর উপাদান রক্তে মিশে সুগার এর পরিমান বাড়িয়ে দেয়, মন চনমনে হয়।

দু-বন্ধু’র মধ্যকার দূরত্ব কমে আসার সম্ভাবনা শতকরা আশি ভাগ। এরপর, কার্ড- ‘Special way to say something special to someone special.’ (তোতা পাখির মত শোনালো ওকে। তারপর মুচকি হেসে বললো ) -ব্যাটাদের দাম বেশী, তবে লেখা গুলো চমৎকার। (নীলিমা হাতে নিয়ে চোখ বুলাবে) ফ্রেমে জুম ইন-কার্ড। “Every Time I Try To Walk Away... Something Makes Me Turn Around And Stay. I Can’t Tell YOU Why…..! ” নীলিমা বিস্মিত হয়ে চোখ তুলে তাকাতেই আকাশ বলে উঠবে- আজকের শেষ নিবেদন- জুয়েলারী বক্স।

আমরা জানি, মেয়েদের প্রিয় গহনা। আর তাদের প্রিয় জিনিষগুলো সযত্নে তুলে রাখবার অভিপ্রায়ে এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠা। (নীলিমা লাজুক ভঙ্গিমায় মাথা দোলাবে- বলবে) -অনেক ধন্যবাদ আকাশ। সত্যি খুব সুন্দর সব গুলো উপহার। আর তার থেকেও প্রানবন্ত ছিল তোমার বর্ননাটুকু।

('এক্সকিউজ মি স্যার' বলে ফ্রেমে ডান দিক থেকে এই সময়ে ওদের অর্ডার অনুযায়ী আইসক্রীম সার্ভ করা হবে। ) এবারে দেখা যাবে- নীলিমা ওর হাতব্যাগ থেকে রাংতা পাতায় মোড়ানো একটা বক্স বের করবে। আকাশের দিকে বক্সটা বাড়িয়ে দিয়ে ও বলবে- -নাও খুলো । বক্সটা খুলে আকাশ দেখবে- একটা হাত ঘড়ি। রোলেক্স-ব্ল্যাক ডায়াল।

উত্তরে- সুন্দর। থ্যাংক্স। (নীলিমা যোগ করবে)- তোমার মত অত সুন্দর করে তো বলতে পারবনা। তবে আমি চাই, এটা তোমাকে ক্ষনে ক্ষনে মনে করিয়ে দেবে - তুমি আমার। শুধুই আমার।

আকাশ নিষ্পলক কিছুক্ষন নীলিমা’র পানে চেয়ে রইলো। তারপর নীলিমার হাত দুটি ধরবে আলতো করে। (অনুরাগের ছোঁয়া যেন খেলে গেল দুটি প্রাণে। ) ক্লোজ আপ শটে আকাশ আর নীলিমার উদ্ভাসিত চোখ আসবে ফ্রেমে। তারপর টেবিলে ফোকাস হবে ক্যামেরা।

উপহার গুলোর উপর চোখ বুলিয়ে আইসক্রীম কাপ দুটির কাছে এসে থেমে যাবে ফ্রেম- ততক্ষনে সেই চকলেট ফ্লেভার আইসক্রীম নিজের সহ্যক্ষমতা পাড়ি দিয়ে ফেলেছে। তার লক্ষ কোটি অনু-পরমানু নিজেদের বন্ধন শিথীল করে সম্পূর্ণ তরলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে! এরপর ফ্রেম সুপার ইম্পোজ করে আরো ফোকাস হয়ে চলে যাবে ডিপ এ। অ্যানিমেশনে দেখা যাবে অনু- পরমানুদের দৌড়াদৌড়ি। আর, সাথে বুদবুদ আকারে ভাসতে থাকবে দুটি টকটকে লাল রঙা সচল হৃৎপিন্ড ! শেষে, ডিসল্ভড হয়ে পুরা ফ্রেম লাল হয়ে...ফেড আউট। ।

পরিশিষ্টঃ আবহ সঙ্গীতঃ যন্ত্র সঙ্গীত -একটুকু ছোঁয়া লাগে। আলোক সজ্জাঃ আউটডোরে গণগণে সূর্য আর দোকানের (জেনারেটর কতৃক) ইন্টেরিয়র লাইটিং। ক্যামেরাঃ পাঠকের দৃষ্টি। কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ আর্চিস কার্ড, চকলেট, অর্কিড গুচ্ছ, আইসক্রীম পার্লার এর সেলস ম্যান এবং জনৈক রিক্সাচালক ভাই। বিশেষ ধন্যবাদঃ ব্লগার ছন্ন ছাড়ার পেন্সিল কে।

( যে আমার পাগলামি বিভাগের সব লেখার প্রতি বিশেষ অনুরক্ত)। পরিকল্পনা আর পরিচালনাঃ উত্তরাধিকার। ছবিসূত্রঃ Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.