আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবার অভিমানী ছেলেটি এখনো তেমনি আছে

বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... বড়ই অভিমান নিয়ে জন্মেছি যার এখন আর কোন মুল্য নেই। বড়ই একগুয়ে আর জেদি এই আমি অপেক্ষার প্রহর গুনছি কবে অনার্সটা শেষ হয়, কবে একটা চাকুরি পাবো কবে একটা কাজ পাবো। যখন নাইনে পড়তাম স্কুলে যেতাম না, প্রতিদিন ক্লাবের লাইব্রেরি থেকে দুইটা করে বই নিয়ে আসতাম আবার পড়ে ফেরত দিয়ে আসতাম আর অপেক্ষা করতাম স্কুল জীবনটা শেষ হবে। ক্লাসে যেতাম না, যেতে ভালো লাগত না। টেনে ওঠার পর কিছুদিন ক্লাস করেই কলেজ জীবনে ঢুকে গেলাম।

এরপর স্কুলের সেই বিরক্তিকর সময়গুলোকেই তীব্রভাবে মিস্ করতে লাগলাম। আমি কোন একটা কাজে ঢুকে গেলে অনার্স লাইফটাকে তীব্রভাবে মিস্ করবো কিন্তু তারপরেও চাচ্ছি দ্রুত মুক্তি। কারন আমি কোন কাজেই ঢুকতে পারছিনা এই পিছুটানের জন্য। ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্য দিয়ে প্রতিটা দিন গুনি আর শেষ করে দেই। প্রতিটা দিন নিয়ে আসে বিশাল খরচের বার্তা যা আমার নিজস্ব প্রচেষ্টায় হয়ে ওঠে না।

এটা ওটা না পাওয়ার দুঃখ, অভিমানে রূপ নেয় আর আমি সেই অভিমান নিয়ে ভুল করে বসে থাকি। আমি জানি বাবা বেঁচে থাকলে আমার অভিমানের মুল্য থাকত। কোনকিছুই আবদার করলে বাবা সেটা দিতে চাইত না, এরপর বুকে তীব্র অভিমান নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। সিক্সে পড়ার সময় একদিন কি যেন বাবা আমাকে কিনে দেয়নি। তীব্র অভিমানে বাড়ি ছাড়ার ফন্দি আঁটলাম, ব্রডগেজ লাইনের আন্তঃনগর ট্রেনে চড়ে বসলাম ট্রেন কোথায় যায় যাক।

ট্রেনের সীটে বসে চোখ বন্ধ করে আছি ট্রেন চলছে দ্রুত গতিতে কতগুলো স্টেশন অতিক্রম করে এসেছি মনে নেই। চেকার এসে টিকেট চাইতেই আমি চমকে উঠি। আমার টিকেট নেই, মুখ দিয়ে কথাও বেরুচ্ছিলো না, গোঙাচ্ছিলাম। টিকেট চেকারের মুখ থেকে একটা শব্দ বের হলো 'ডিজ্যাবল'। পরের স্টপেজে আমাকে নামিয়ে আমার বাড়ী মুখী ট্রেনে উঠিয়ে দেয়া হলো।

ফিরে এলাম অনেক রাতে। আমার অভিমান ভরা বুক নিয়ে বাসায় ঢুকতেই আমার আব্দারওয়ালা সেই জিনিস আমার হাতে। সিক্সে পড়ার সময় ভালো স্কুলে আমাকে ভর্তি করানো হলো। সেই স্কুলের সবচেয়ে গরীব ছাত্রটি বোধহয় ছিলাম আমি। টাই পড়ে স্কুলে যাই কিন্তু পায়ে কমদামী সাদা জুতা।

বাবাকে বলতেই অপরাগতা। অভিমানে বুক ভার হয়ে আসে। সবাই কেডস পড়ে যায় আমি শুধু সাদা জুতা। পরের দিন আব্বা আমাকে কেডস কিনে দেন। অভিমান ধুয়ে মুছে তিলাইয়ে চলে যায়।

ঈদে নতুন জামাকাপড় না হলে অভিমান বুক ঠাসা থাকতো। আব্বার সামর্থ একেবারেই ছিল না, শুধু বুঝিয়ে বলেছিল অভিমানগুলো কুয়াশায় মিশে গিয়েছিল। ফাইভে যখন বুকে বল লেগে মৃত্যুর দিন গুনতাম বাবা তখন আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন আমাকে সুস্হ করে তোলার জন্য। সেই সময় টাকার টাকার টানাটানি তারপরেও আমি কিছু আলাদা খাবারের জেদ ধরতাম। বাবা যে মুল্যেই হোক আমার হাতে সেটা তুলে দিতেন।

বাবার তীব্র প্রচেষ্টায় মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছি। আমার বাবা না থাকলে সেইদিন হয়তো আমি বাঁচতে পারতাম না। দীর্ঘদিন রংপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকের তত্ত্বাবধানে থেকে সেরে উঠলাম। বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে আমি আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরে যেতে পারবো! এখনো বুকে তীব্র অভিমান নিয়ে থাকি, কাছের মানুষের সামান্য কষ্টতে না পাওয়ার ব্যর্থতায় বুকে অভিমানের পাহাড় জমে। জানি অনর্থক অভিমান।

আমার এই অভিমান ভাঙাতে বাবা আর কখনোই আসবেন না। তারপরেও সেই অনার্স প্রথম বর্ষের মত টাকা পাঠাতে দেরী হলে অভিমানে জর্জরিত হতাম ঠিক তেমনি আজ বাবার অনুপস্হিতি যখন নিজেই নিজের অভিভাবক তারপরেও অভিমান করে থাকি প্রচণ্ড জেদ নিয়ে বসে থাকি। অনর্থক এইসব কারন এখন আর কেউ আমার অভিমান ভাঙাতে আসবেনা, আমার জেদ চেয়েও দেখবেনা.. অনার্সটা কবে শেষ হবে, কবে টানাপোড়েণের এই সংসার সাঙ্গ হবে -অপেক্ষায় আছি। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো প্রতিটা দিন কিভাবে কাটবে এই আতঙ্কে কাটতো না। আমার জেদ, অভিমানের কাছে বাবাকেই হারতেই হতো [ আমার পোস্টগুলো ফেইসবুকে পেতে হলে এই পেইজটায় জয়েন করতে হবে https://www.facebook.com/dhaka.1000 ] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.