খুব সংক্ষেপে বলছি ..
দাঁড়িয়ে ছিলাম ধানমন্ডি এলাকার রোড ৫/এ, মেডিনোভার উল্টা দিকের মেইন রোডে। রাত তখন প্রায় ৯:৫০ এর মত বাজে। হঠাৎ দেখলাম, ইউ ল্যাব ইউনিভার্সিটির দিক থেকে কিছু উঠতি বয়সী ছেলে হেঁটে হেঁটে স্টার কাবাব যেদিকে, সেদিকে যাচ্ছে । একজন তরুণী দাঁড়িয়ে একটি সিএনজি অটোরিক্সার সঙ্গে কথা বলছিলেন। ছেলেগুলো তাঁর থেকে অনেক কম বয়সী হওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ তারা মেয়েটির জামার নিচ দিয়ে হাত বাড়িয়ে পাজামার পেছন ধরে টান দিল .. দিয়ে হাসতে হাসতে এগিয়ে চলল .. ঘটনার আকস্মিকতায়, অপমানে তরুণীটি হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, লজ্জায় মুখে কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।
আর সহ্য করতে পারলাম না, দৌড়ে যেয়ে ছেলেটিকে পাকড়াও করে প্রতিবাদ করলাম। নিমিষেই ছেলেটির সঙ্গী-সাথীরা আমার উপর চড়াও হল। উপুর্যপরি কিল-ঘুষি-লাথি-চড় !! আমি চিৎকার করে এর প্রতিরোধ করতে চাইলে ছেলেগুলো তাদের ইউ ল্যাবের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। আমাকে টেনে সেদিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। মেয়েটি আমার সাহায্যে এগিয়ে এসে হাও-মাও করে কাঁদতে থাকে।
আশ-পাশে এরই ভেতর অনেক লোক জমে গেছে। তারা জানতে চাইলে আমি তরুণীটিকে দেখিয়ে ঘটনা বর্ণনা করি।
এখন আমার অবাক হবার পালা ..
লক্ষ্য করি যে, ইউ ল্যাবের ছাত্র, পাশের সিগারেটের দোকানদার, ছাত্রদের গাড়ী চালক সবাই ঐ বদমাস ছেলেগুলোর পক্ষে সাফাই গাচ্ছে, কেউ কেউ ওদের সমর্থনও করছে। বলার চেষ্টা করছে, রাস্তা-ঘাটে এরকম হতেই পারে, ওরা হয়তো একটা ভুল করেই ফেলেছে, কিন্তু তা বলে আমার এত বাড়াবাড়ি করা উচিৎ হচ্ছে না, ঝামেলা না বাড়িয়ে আমি যেন তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যাই .. আর আমজনতার বিশাল এক অংশ নীরব, নিশ্চুপ। প্রতিরোধ দূরে থাক, অন্যায়ের প্রতিবাদটি পর্যন্ত কেউ করছে না।
হায়রে সুশীলতা, হায় এই একুশ শতকের সভ্যতা ..
হায় নারী নির্যাতন-হয়রানী আর ইভ টীজিং বিরোধী কঠোর আইন ..
হায়রে এই জাতির তথাকথিত জাগ্রত বিবেক ..
রেডিও-টিভি-সংবাদপত্র-ব্লগে এত প্রচার-বিক্ষোভ-আন্দোলন ..
কিছুই এই ২০১২ সনের আধুনিক ঢাকা শহরে প্রকাশ্য রাজপথে একজন তরুণীকে অপমানিত হবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারল না ....
এত বিশাল আর বড় বড় বুলি আওড়ানো সমাজের মানুষ আমরা, এর প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পাই না ..
( আমি যখন ঘটনাস্থল থেকে চলে আসছি .. তখন কিছু যুবক ছেলে আমাকে একান্তে বল্ল .. ভাই, কষ্ট নেবেন না, এখানে আমরা নিরুপায়। আশ্চর্য, এই যুবক বয়সের ছেলেগুলো তখন মেয়েটি বা আমার পক্ষে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেনি। )
তবে আমি এখন আপনাদের সাহায্য চাইছি, সামহোয়্যারের এক লক্ষ ব্লগারের সাহায্য চাচ্ছি, নিজের সীমিত ক্ষমতায় যদি পারি তবে এই অন্যায়কারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করব।
আমি প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে সামুতে ব্লগিং করি। আমি জানি, ইউ ল্যাবের অনেক স্টুডেন্টই এখানে এই ব্লগে আছেন, হয়তো এই মূহুর্তে ব্লগিংও করছেন।
তাদের কাছে, তাদের বিবেক, শিক্ষা ও রুচিবোধের কাছে আমার অনুরোধ, যদি তারা আপনাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয়-ও, তবু তারা অপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, ইভ টীজার। প্লীজ, তাদেরকে সনাক্ত করতে আমাকে সহায়তা করুন। আপনারা একটু খোঁজ করলেই হয়তো বা কালকের (১০ মে, রাত আনুমানিক ৯:৫০) ঘটনাটি জানতে পারবেন। কেননা তখন সেখানে প্রচুর লোকের ভীড় জমে গিয়েছিল, তাদের বেশীরভাগই ঐ ভার্সিটিটির ছাত্র। দয়া করে কেউ যদি তাদের সনাক্ত করতে পারেন, এইখানে এই ব্লগে ঐ জানোয়ারগুলোর পরিচয় প্রকাশ করুন, আমার সীমিত ক্ষমতায় আমি তাদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে চাই, আর ব্লগে পশুগুলোর পরিচয় দিয়ে এই অমানুষগুলোকে সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানাই।
আর একটি কথা, এটি ছাড়াও যদি কেউ কোনভাবে ঐগুলোর পরিচয় জানতে পারেন, যেমন ধানমন্ডির ঐ এলাকায় যদি কেউ থেকে থাকেন .. আর কোনভাবে ঘটনাটি জানেন, আপনারাও দয়া করে সাহায্য করুন।
এই সামহোয়্যার ইন ব্লগে লক্ষাধিক ব্লগার ব্লগিং করেন। তাঁদের বহুজনই নানাভাবে ক্ষমতাবান -- কেউবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, পদস্থ সরকারী-বেসরকারী প্রভাবশালী, কেউ কেউ রাজনৈতিকভাবে আশীর্বাদপুষ্ট শক্তিশালী মানুষ, এমনকি কেউ আবার গোয়েন্দা বিভাগের লোক। আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ, আমরা অতীতে অনেক বড় বড় আন্দোলনে গিয়েছি, জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক বিষয়ে। অনেক বিতর্ক করেছি আস্তিক-নাস্তিক, আওয়ামী লীগ-বি এন পি, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ প্রসংগে।
কিন্তু ইভ টীজিং একটি সামাজিক ও আইনের চোখে দন্ডনীয় অপরাধ। আপাত দৃষ্টিতে ছোট এই অপরাধটি সরাসরি মোকাবেলা করা না হলে, নিশ্চিতভাবে এর পরবর্তী শিকার হতে যাচ্ছেন আপনার বোন, মা, স্ত্রী, প্রেমিকা অথবা বান্ধবী। সুতরাং, প্লীজ এগিয়ে আসুন, প্রত্যক্ষভাবে, যে যেভাবে পারেন, রাজনৈতিক যোগাযোগ, প্রশাসনিক সহযোগিতা, এমনকি ঐ এলাকায় ব্যক্তিগত প্রভাব, যেভাবেই হোক প্রতিরোধ করুন । এই তথাকথিত ভার্সিটি শিক্ষিত বর্বরগুলোকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে একটি উদাহরণ তৈরী করি .. এই একুশ শতকে ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্যে কখনও কোন নারীকে লাঞ্ছিত করে পার পাওয়া যাবে না।
আমি সামুর সকল শ্রেণীর সব ব্লগারের কাছে আন্দোলনের ডাক দিয়ে গেলাম।
আসুন, এবার জ্বলে উঠি, নিজের পৌরুষের (সাহসিকতা অর্থে) কাছে আর অপরাধী হতে চাই না।
সবাইকে ধন্যবাদ। ।
মুল পোস্টের লিন্ক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।