রাইসা এখন কক্সবাজারের ঘরে ঘরে পরিচিত একটি নাম। ‘আই-জিনিয়াস গ্র্যান্ডমাস্টার’ সীলমা সুবাহ রাইসা। মেধার চমকে সারা দেশের দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে রাইসা আজ দীপ্যমান।
২২ জুন রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিযোগিতা গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উত্সবের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। পুরস্কার হিসেবে রাইসা পেয়েছে মাস্টার ট্রফি ছাড়াও শিক্ষা অনুদান হিসাবে এক লাখ টাকা, নরওয়ে শিক্ষাসফরে যাওয়ার সুযোগ ও মুঠোফোন সেট।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, গ্রামীণফোনের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা অ্যালান বোঙ্কে, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর পুরস্কার তুলে দেন।
পুরস্কার পাওয়ার পর রাইসা এই প্রতিবেদককে বলে, ‘আমি বাংলাদেশ জয় করেছি, আই-জিনিয়াস গ্র্যান্ডমাস্টার নির্বাচিত হয়েছি। কক্সবাজারের মুখ উজ্জ্বল করেছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমি আকাশ ছুঁতে চাই।
’
রাইসা আরও বলে, ‘জমকালো উত্সবে যখন আমাকে গ্র্যান্ডমাস্টার ঘোষণা করা হলো, বিশ্বাসই হচ্ছিল না, মনে হলো স্বপ্ন দেখছিলাম। আসলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। গ্রামীণফোন-প্রথম আলোকে বলব, এই উত্সব যেন অব্যাহত থাকে। তাহলে অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেটের আলোয় বিশ্ব দেখার সুযোগ পাবে। ’
২০১২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরের দুপুর।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সভাকক্ষে ইন্টারনেট উত্সবে অংশ নিতে ৪০ জন ছাত্রীর বাছাই পরীক্ষা দিচ্ছে। কয়েক শ ছাত্রীর মধ্যে এ নিয়ে হইচই। দশম শ্রেণীর ছাত্রী রাইসা শিক্ষকদের অভয় দিয়ে বলল, ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই, স্যার। আই-জিনিয়াস আমরাই ছিনিয়ে আনব। আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখব।
’
সভাশেষে রাইসা এই প্রতিবেদককে বলেছিল, ‘গত বছরের (২০১১) ইন্টারনেট উত্সবে যোগ দিয়ে একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পেরে আই-জিনিয়াস হতে পারিনি। এবার কিন্তু দেখিয়ে দেব। ’
২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়বারের মতো গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উত্সবে অংশ নিয়ে রাইসা সত্যিই দেখিয়ে দিয়েছিল, ইচ্ছা আর চেষ্টা প্রবল থাকলে আই-জিনিয়াস হওয়া কোনো ব্যাপার নয়।
রাইসার ইচ্ছা মা-বাবার মতো চিকিত্সক হওয়া। একই সঙ্গে চলবে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে নানা পাঠ।
তার একমাত্র ভাই মোশনাদ কাদেরী ঢাকা বারডেম মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
রাইসা এবার কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে বর্তমানে কক্সবাজার সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।
বাবা জি এম কাদেরী বলেন, মেয়ের ইচ্ছাকে তাঁরা প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। ভবিষ্যতেও তা-ই করবেন।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘রাইসার আই-জিনিয়াস গ্র্যান্ডমাস্টার অর্জনে আমরা সবাই খুশি। বিদ্যালয়ের হাজারো ছাত্রী খুশিতে আত্মহারা। এই অর্জন কক্সবাজারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। রাইসা আরও ভালো করবে। অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
তার মধ্যে সে প্রতিভা আছে। ঘরে ঘরে আরও রাইসা তৈরির জন্য ইন্টারনেট উত্সব অব্যাহত রাখা দরকার। ’
রাইসার সহপাঠী আলিফুন্নাহার, ধৃতি চাকমা ও নিশাত নাওয়াল ইসলাম বলে, ‘রাইসা আই-জিনিয়াস গ্র্যান্ডমাস্টার হবে, আমরা আগেই জানতাম। সে অত্যন্ত মেধাবী। আমাদের বান্ধুবী দেশসেরা—এ জন্য আমরা খুব আনন্দিত।
এখন অপেক্ষায় আছি, রাইসা কখন ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসবে। খুব নাচানাচি হবে। ’
জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (বর্তমানে রাজশাহী সরদা পুলিশ একাডেমি) সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কক্সবাজার ভেন্যুতে এই মেয়ের মেধাশক্তি দেখেই মনে হয়েছিল, সে আকাশ ছুঁতে পারবে। মেধার বিকাশ ঘটাতে হলে এই তথ্যপ্রযুক্তিকে সবার কাজে লাগানো উচিত। ’
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘রাইসা কক্সবাজারের অহংকার, আমাদের গর্ব।
আই-জিনিয়াস গ্র্যান্ডমাস্টার নির্বাচিত হয়ে সে কক্সবাজারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এতে জেলার ২৫ লাখ মানুষ খুশি। তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দিয়ে উত্সাহিত করার চেষ্টা চলছে। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।