বিশ্বের নিপীরিত মানুষের শত্রু একটাই এবং তদের ধরন একই, এরা রয়েছে অনেক দূরে। এই শত্রুরা রয়েছে যেখানে থেকে পুঁজিবাদী এলিটদের জন্ম, যেখান থেকে এরা সরকার প্রধানদের ব্যাবহার করে তাদের শক্তি প্রেরণ করে, আর ঐ সরকাররা তাদের তাঁবেদারি করে লাভবান হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবলিশ চত্বর অনেকটা লন্ডনের হাইড পার্কের মত। হাইড পার্কে যেমন যে বাক স্বাধীনতা আছে, তেমন আমাদের ইবলিশ চত্বরেও আছে। আরিফ আরমানের সাথে আমার পরিচয় দুই দিনের।
ক্যাম্পাসে আমাকে দেখেই বললো “চল তোকে আজ ইবলিশ চত্বরে নিয়ে যাবো”
আমি বললাম ‘ইবলিশ চত্বর আবার কোথায়। ’ কোন প্রশ্নের জবাব সে আমাকে দিলো না। হিড় হিড় করে টানতে টানতে আমাকে সে ইবলিশ চত্বরে নিয়ে গেলো। বাগান গোছের ক্যাম্পাসের মাঝ খানে যে স্থান এটাকেই ওরা ডাকে ইবলিশ চত্বর বলে। দুচারটা চায়ের দোকান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আসে পাশে।
চটপটি ওয়ালা বাদাম ওয়ালরা তো আছেই। সুন্দর সুন্দর ছেলে-মেয়েরা দল বেধেঁ আড্ডা মেতে আছে যে যার মত।
রফিক ভাইয়ের চায়ের দোকানে নিয়ে আসা হলো আমাকে। ওরা ছিলো নয় জন। সামিউল, আশফাক, হেলেন, উজ্জ্বল শরীফ, তাপসী, অঙ্কুর, উপমা, বিদ্যুৎ আর আহমেদ শাকিল।
তারুন্যের প্রভা ঠিকরে বেরুচ্ছিলো প্রত্যেকের চোখ দিয়ে। আমার সাথে পরিচয় হলো সবার। সেই শুরু। এর পর কত দিন যে আড্ডা দিয়েছি ইবলিশ চত্বরে তার কোন ইয়াত্বা নেই। রফিক ভায়ের চায়ের দোকানের চা আর আমদের আড্ডা এ-দুটো মিলে তৈরী হত বাংলাদেরশের রাজনীতির ময়না তদন্ত।
আজ,
‘তো! তিন-তিনজন বিদেশী বাংলাদেশ ঘুরে গেলো এক সপ্তাহের ভেতরে। কি ভাবে দেখছিস?’ উজ্জল শরীফের প্রশ্ন।
‘কাদের কথা বলছিস?’ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো হেলেন।
‘হিলারী, প্রণব আর জাপানের প্রধান মন্ত্রী। ’
‘হুম, চিন্তার বিষয়।
গত কয়েক বছরে কোন অনুষ্ঠান ছাড়া তিন জন সরকারী লোক বাংলাদেশে আসেন নাই, তাও আবার আমাদের রাজনৈতীক সমস্যা যখন সবচেয়ে খারাপ। ’ তাপসীর মন্তব্য।
‘ভেতরে কি অন্য কিছু ঘটছে?’
‘আমি তা মনে করি না, কারণ দেখ হিলারী ও প্রণব দুজন দুই গ্রহের বাসিন্দা, এক জন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেক জন ভারতের অর্থমন্ত্রী, হিলারির গোপন কোন উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু প্রণবের কিন্তু তা মনে হয় নেই। তাছাড়া জাপানের প্রধাণমন্ত্রীকে তো গোবেচারা প্রানী ছাড়া আর কিছুই মনে হলো না। ব্যাবসায়িক সফর ছাড়া আর কিছুই তিনি করেন নাই।
’ চশমার নিচ দিয়ে তাকালো আশফাক।
‘হিলারীরটিও কি রুটীন সফর ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। ’ বললো আশিক আরমান।
‘তোর ধারণা ভূল’ বললাম আমি ‘আমেরিকা অত নিরীহ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলে না। ইলিয়াস সহ যে সমস্ত নেতা কর্মি বি এন পি’র নিখোজ হয় এর খবর কি সি আই এ রাখে না মনে করেছিস? অবশ্যই রাখে।
এর উপর ভিত্তি করেই মাত্র এক সাপ্তাহের নোটিশে হিলারী বাংলাদেশে এসেছে। ’
‘তুই ও ভুল বললি, হিলারির সফর ঠিক হয়েছিলো গত বছরই। ইউনুসকে নিয়ে সমস্যার পর। সে বছর ইউনুস বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারে অস্বীকৃতী জানালে হিলারি সফর বাতিল করেন। কিন্তু এ বছর এসে হিলারী ইউনুসের সাথে কথা বলাছেন।
তারা যে আলোচনা করেছে তা বাঙ্গালীদের জানতে দেয়া হয় নাই। ’ সামিউলের মন্ত্যব্য
বিদ্যুত বরাবরই চুপ চাপ থাকে কিন্তু সে এবার মুখ খুললো ‘হুম ইউনুস যদি রাজনীতিতে আসতে চায় তবে তাকে আগে আমেরিকাকে হাত করতে হবে। যদি তাই হয় তাহলে ইউনুস ঠিক পথেই এগোচ্ছে। ’
‘আমার ভোট আমি ইউনুস সুদখোড়কে দেবো না’ আহমেদ সাকিল বললো।
‘সেটা তোর ব্যাপার।
’ নাস্তিক মতালম্বী হেলেন আস্তিক শাকিলকে সুযোগ পেলেই চিমটি কাটে। ‘ইউনুসের মতই যোগ্য সৎ নেতা এখন দেশ আশা করছে। ’
‘শুনলাম হিলারি নাকি মমতার সাথে দেখা করেছে সাথে নাকি চমৎকার একটা উপহার নিয়ে গেছে। ’ বললো তাপসী।
‘কি উপহার?’ সবাই এক সাথে জিজ্ঞাসা করলাম।
‘রবীন্দ্রনাথের আগুনের পরশমনি গানের লিরিক বাধাই করে নিয়েছে সূতার কারুকার্যে। ’
‘মমতা যে রবীন্দ্র ভক্ত এ তথ্য হিলারীকে কে দিলো?’
‘প্রধাণ মন্ত্রীর সেই উপদেষ্টা ছাড়া আর কে!’
‘রিজভী’
‘হ্যাঁ’
‘আচ্ছা! কিন্তু হিলারী মমতার জন্য উপহার নিলো কেন। আর আমাদের প্রধাণ মন্ত্রীই বা কি দোষ করলেন যে তিনি কোন উপহার দিলেন না। ’
‘হিলারী কি প্রধাণ মন্ত্রীকে কি উপহার দেয়ার জন্য এই দেশে এসেছিলেন? শাষানোর জন্য এসেছিলেন। এবং শাষিয়েও চলে গেলেন।
’ আশফাক বললো।
‘মমতাকে কি কনভেন্স করার জন্য উপহার দিলো হিলারী। ’
‘কেন?’
‘তিস্তার পানি!’
‘হিলারীর কি ঠেকা পড়েছে যে, তাকে তিস্তা নিয়ে বলতে যাবে। কোন ঠেকা পড়েনি। কোথায় বাংলাদেশ পানির অভাবে মরছে তাতে হিলারির কি? তাছাড়া হিলারি পানি নিয়ে কোন আলোচনা করেন নাই।
’
‘আজ অনেক হয়েছে। এবার রাখ, ক্লাসের সময় হয়েছে। ’
[আলোচিত চরিত্র কাল্পনিক। পোস্টে আলোচনাও কাল্পনিক। পাঠকেরা চাইলে ধারাবাহিক করতে পারি।
]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।