সত্য প্রকাশে সংকোচহীন
প্রশাসন থেকে যোগাযোগ করা হয় পত্রিকা অফিসগুলোতে। ভিসি সরাসরি দেখা করেন সম্পাদকদের সঙ্গে। সাক্ষাতের বিষয় হয়Ñ ‘আপনার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আমার কথা শোনে না। উল্টাপাল্টা নিউজ করে। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা মিডিয়া জগতের একটি গুর“ত্বপূর্ণ সংযোজন।
সাংবাদিকতা এখন সম্মানজনক পেশা। পার্টটাইম জব হিসেবে সাংবাদিকতা শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে কিছুটা এগিয়েই রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সব ধরনের সংবাদই তুলে ধরতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের সংবাদের সরব উপ¯ি’তি অদক্ষ মিডিয়া কর্মীদেরও দক্ষ করে তোলে।
পড়ার পাশাপাশি সাংবাদিকতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খোঁজ রাখা হয়ে যায় পেশাগত দায়িত্বের কারণে। সবার কাছে সাংবাদিক শিক্ষার্থীদের গুর“ত্ব বেড়ে যায়। বেশ খাতিরও জোটে। তবে সৎ ও ব¯‘নিষ্ঠ সাংবাদিকতায় বরাবরই প্রভাবশালী একটি অংশের বিরাগভাজন হতে হয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হ”েছ যাবতীয় অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়া।
অস্ব”ছতার কারণে প্রশাসনের স্বৈরাচারী হওয়ারও সুযোগ থাকে।
ই”ছামতো প্রশাসন পরিচালনায় সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় সাংবাদিকরা। একাডেমিক ক্যারিয়ার, চাকরির প্রলোভন, আর্থিক সুবিধা প্রদান প্রভৃতি দিয়ে যদি তাদের ম্যানেজ করা না যায়, তবে বিপত্তি প্রশাসনের। সংবাদ ও মিডিয়াকে থোরাই কেয়ার করার মানসিকতা থাকলেও একটু ভয় যেন মনে রয়েই যায়। ক্ষোভ বাড়ে তাদের প্রতি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির তিন বছর সফলভাবে অতিক্রম করলেও কিছু মৌলিক বিষয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অযোগ্যদের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় ও স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেন, নিজের অনৈতিক আচরণ, পদোন্নতিতে অনিয়ম, ছাত্রলীগের অপকর্মে পৃষ্ঠপোষকতাসহ নানা অভিযোগের খবর প্রকাশিত হলে সাংবাদিকরা হয়ে ওঠেন ভিসির প্রধান প্রতিপক্ষ। সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের নিহত হওয়ার পর ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজ। দিশেহারা হয়ে পড়েন উপাচার্য। কাছে টেনে নেন কর্পোরেট হাউসের কতিপয় সাংবাদিককে, যাদের আর্থিক সুবিধা দেয়ার কথাও শোনা যায়।
উপাচার্যের নিবিড় সান্নিধ্য পেয়ে এসব সাংবাদিক ভুলে যান নীতি-নৈতিকতা। তাদের রিপোর্টে শিক্ষকদের ভিসিবিরোধী আন্দোলন হয়ে যায় জামায়াতের আন্দোলন। তাদের মাধ্যমে ম্যানেজ করা হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরও। ব্যবহার করা হয় চাকরির প্রলোভন আর আর্থিক লেনদেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নির্বাচিত সেক্রেটারি হওয়ায় প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্তা ডেকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশাসনের সম্পর্ক গিভ অ্যান্ড টেকের।
’ সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য আমার চাহিদা জানতে চাওয়া হয়। বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করি তা। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের শায়েস্তা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয় বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকদের। ব্যবহার করা হয় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সাংবাদিক শিক্ষকদের।
প্রশাসন থেকে যোগাযোগ করা হয় পত্রিকা অফিসগুলোতে। ভিসি সরাসরি দেখা করেন সম্পাদকদের সঙ্গে। সাক্ষাতের বিষয় হয়Ñ ‘আপনার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আমার কথা শোনে না। উল্টাপাল্টা নিউজ করে। ’
পত্রিকা চলে নিজস্ব গতিতে।
সাংবাদিকরা নীতিতে অটল থেকে নিউজ করেন অবিরত। ভিসি বাধ্য হন বিকল্প ব্যব¯’া গ্রহণে। ৪০ বছরের ইতিহাস ভঙ্গ করে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেন। নিজে পৃষ্ঠপোষক হয়ে আশীর্বাদপুষ্ট সাংবাদিকদের দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিপক্ষ হিসেবে তৈরি করেন বিকল্প সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়মিত অনুদান দীর্ঘ ৩ বছর থেকে সাংবাদিক সমিতিকে দেয়া বন্ধ করা হয়।
আটকে দেয়া হয় বিশেষ অনুদানের কম্পিউটারটিও।
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাই সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ। এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘটনা ঘটে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির নেতৃত্বে প্রেস ক্লাব বন্ধ করে দেয়ার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি মানববন্ধন করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহারে মামলা করা হয় সাংবাদিকদের বির“দ্ধে।
ফলাফল কী?
প্রলোভন আর ভয়ে নীরব নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা নীতি আর আদর্শের জায়গা থেকেই সাংবাদিকতা করবে। যুগে যুগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বিষয়টি অনুধাবন করা জর“রি।
ইমদাদ হক : সাধারণ সম্পাদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।