আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

র‍্যাব প্রসঙ্গ

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা । ২০০৪ সাল থেকে র‍্যাব নামক এই বর্বর বাহিনী স্ট্যাবলিশমেন্টের এক অংশের সরাসরি সমর্থনে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা শুরু করে । গত ৯ বছর যাবত র‍্যাব নামক খুনে এই বাহিনীর হাতে ২০০০ এর মত রাজনৈতিক কর্মী বিনা বিচারে মৃত্যুর মুখে পড়ে আদালত , সংবিধান , আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী নয় পশ্চাৎদেশ দেখিয়ে ছেড়েছে , পশ্চাৎদেশ দেখিয়ে ছাড়ছে । এই ২০০০ রাজনৈতিক কর্মীই কেবল র‍্যাবের আক্রমনের ভিকটিম নয় । ভিকটিমদের পরিবার – পরিজনও সমভাবেই বরং অনেকাংশে বেশী ভয়াবহভাবেই র‍্যাবের এই নৃশংসতার ভিকটিম ।

কেননা তাদেরকে প্রিয়জনের সেইসব নৃশংস হত্যার দগদগে ঘা নিয়ে তো বেঁচে থাকতে হয়ই এবং পূর্বের চেয়েও তাদের জীবনসংগ্রাম অনেক বেশী সংকটে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে । এই দেশে যারা স্ট্যাবলিশমেন্টের হালুয়া-রুটির ভাগ থেকে বঞ্চিত সেইসব মানুষদের জীবন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই পাখির পালকের চেয়েও হালকা , রুটির টুকরার চেয়েও সস্তা বলেই বিবেচিত হয়ে এসেছে । বিরুদ্ধ মত সহ্য করার নূন্যতম ক্ষমতা যেই রাষ্ট্রের হর্তকর্তারা রাখেননা , যেই সমাজের প্রতিটি আনাচে-কানাচে বিপরীত মতের বিরুদ্ধে আমাদের মস্তিষ্কে সেলফ-প্রোক্লেইমড ওয়ার সিল মারা আছে সেই দেশে কথায় কথায় গণতন্ত্র মারানো হয় । শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কর্পোরেট অফিস থেকে শুরু করে কাপড় কাচার ঘাট পার হয়ে তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনসমূহ , এনজিও , সুশীল সমাজ , বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র গণতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়েও ক্রসফায়ার থামানো যায়নি , থামানো যায়না । তুমি , আমি , আমরা পার্কে বাদাম খেতে খেতে হাঁটি , গলায় টাই বেঁধে অফিসে গিয়ে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা আধুনিক বাবু বনে যাই , লুকিয়ে – চুরিয়ে বেশ্যাবাড়ি গমন করে অবশেষে ‘ মানুষ একটি সামাজিক জীব ‘ আপ্তবাক্য মনে রেখে দৈনন্দিন জীবনে হাজারো সামাজিকতা সম্পন্ন করেও ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে একটা মিছিল করবার সাহস করিনি ।

তুমি , আমি , আমরা পত্রিকায় ক্রসফায়ারের ঘটনা শুনলেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি । শত আধুনিকতার মাঝে ডুবে থেকেও সযত্নে লালিত হারামীপনার কারণে আমাদের মনে হয় র‍্যাবের ক্রসফায়ারে ক্রিমিনাল এনিহিলেটেড হচ্ছে । তুমি , আমি , আমরা অবশেষে চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে প্রগতিশীলতা মারাই । আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি বাজারে নিলামে তুলেও মস্তিষ্কে পাঁচ কেজি সলিড বিষ্ঠা প্রবিষ্ট থাকবার কারণে খেয়াল থাকেনা সক্রেটিস , প্লেটো , এরিস্টটল , ম্যাক্স ওয়েবার , ফ্রান্সিস বেকন , রেনে দেকার্ত , স্পিনোজা , ডেভিড হিউম , হেগেল , ফয়েরবাখ , মার্ক্স , এঙ্গেলস কেউই বলে যাননি র‍্যাব নামক বর্বর বাহিনী তৈরী করে গণতন্ত্র মারানো যায় । এটা সম্ভবই নয় আদৌ ।

আজন্ম লালিত সামন্তবাদের যেই চাষাবাদ করে চলেছি আমরা নিরন্তর তাকে নির্মূল তো করা যায়ইনা বরং পরিপুষ্ট করা হয় র‍্যাবের ক্রসফায়ার সমর্থন করলে , র‍্যাবকে সমর্থন করলে । আমাদের সমকালীন সাহিত্যে লেখার বিষয় হিসাবে র‍্যাবের ক্রসফায়ারের ভূমিকা কি ? প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ র‍্যাব নিয়ে লেখেন ‘ হলুদ হিমু কালো র‍্যাব ‘ তাও সেটা তার মজ্জাগত স্যাটায়ারের চেয়ে বেশি কিছু নয় । বাকিরা তাও লিখবার কষ্ট করেননা । স্থূল , নীম্ন রুচির পাঠককে নারী শরীরের নানাবিধ বাঁক চিনিয়ে অবশ করে দেওয়া , ইনিয়ে-বিনিয়ে দেশাত্মবোধক কাব্য রচনা করা , আধুনিকতার পাঠে সুসজ্জিত হয়েও নোংরা কিন্তু নির্মন বাস্তব , ক্লেদাক্ত তবুও সমাজের পঁচা-গলা চরিত্রকে উন্মোচন করে দেওয়া চিত্র থেকে দূরে থেকে এলিটিজমের আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , অর্থনীতিবিদ , এনজিও কর্মী , বিভিন্ন আইন সংস্থা , মানবাধিকার সংস্থার কর্মী থেকে শুরু করে প্রধান পর্যন্ত মোদ্দাকথা সবাই র‍্যাব বিষয়ে সাইলেন্স বজায় রেখে এসেছেন ।

হঠাৎ করে র‍্যাব কর্তৃক লিমন নামের এক ছাত্রের পা হারিয়ে ফেলার ঘটনা এবং তার পরবর্তী নানাবিধ সময়ে আমাদের আহা – উহু , আমাদের মেঠো মেঠো সমালোচনা , মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খানকে পুতুপুতু ভাষায় হৃদয়হীন , নিষ্ঠুর বলা ইত্যাদি ইত্যাদি জাতীয় ধ্যাষ্টামী স্রেফ মিডিয়ার ব্যাকিঙের কল্যাণে সম্ভবপর হয়েছে । কর্পোরেট মিডিয়া তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই লিমনের ঘটনাটিকে লাইমলাইটে এনেছে । লিমনকে , তার পা হারানোর ঘটনাকে মিডিয়া তার স্বীয় স্বার্থে বেশ্যার মত ব্যবহার করে এসেছে , ব্যবহার করে আসবে । সেই মচ্ছবে মিডিয়ার সাথে সাথে আপামর টগবগে ঘিলুওয়ালা সবাই যোগ দিয়ে নিজেদের হ্যাডম জাহির করেছে , করবে । লিমন তোমার শত্রু এরা সবাই ।

দুঃখিত লিমন , তোমার পা হারাবার ঘটনা এবং গতকাল তোমাকে মিজানুর রহমান খান র‍্যাবের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে বিচারব্যবস্থা , আদালত , আইন-কানুন , সংবিধান এসবের বিরুদ্ধে একটা বাক্যও খরচ করে তোমার সিমপ্যাথাইজারের দলে শামিল হয়ে তোমার শত্রুদের কাতারে নিজের নাম যুক্ত করতে চাইনা । তুমি শত্রু চিনে নিতে শেখো । কালো পোশাকের র‍্যাব ছাড়াও আমলা , মন্ত্রী , শিল্পপতি , মিডিয়া , বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , সরকারী চাকুরে , হ্যান্ডসাম বেতনের শহুরে মানুষ মোদ্দাকথা র‍্যাবের বিরুদ্ধে , ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে নিরাপদ গন্ডিতে থেকে যারা সোচ্চার হবার ভান করে মাত্র তারা প্রত্যেকেই তোমার শত্রু । কোন শত্রুকেই তুমি ক্ষমা করোনা । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.