ইতিহাস, নেই অমরত্বের লোভ/ আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ... সাউথ আফ্রিকান এয়ারওয়েজের বিমান নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে অবতরণ করল সকাল সোয়া সাতটায়। এখান থেকে কানেক্টিং ফ্লাইট ৯ টা ৫ মিনিটে, বাল্টিমোর ওয়াশিংটন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে । টিকিট কাটার সময়ই ট্রাভেল এজেন্ট সতর্ক করে দিয়েছিল এত অল্প সময়ের ব্যাবধানে কানেক্টিং ফ্লাইট না নিতে। কিন্তু ষোল ঘন্টা ভ্রমণ করে আরো চার ঘন্টা বিমানবন্দরে বসে থেকে পরবর্তী ফ্লাইটের প্রতীক্ষা করার চেয়ে ঝুঁকি নেয়াটাই মন:স্থ করেছিলাম। তখন কি জানতাম বিমান আধা ঘন্টা দেরিতে পৌঁছাবে, আর প্রাণের প্রিয় সবুজ পাসপোর্টখানা সময়স্বল্পতার অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিতে ইমিগ্রেশন অফিসারের সুদীর্ঘ জেরার সম্মুখীন করবে?
তাও ভাল কুইক কানেক্ট বলে বিশেষ ব্যবস্থা ছিল।
এখানকার এয়ারপোর্টে তিন ঘন্টার নিচে কানেক্টিং ফ্লাইট থাকলে একটি বিশেষ পাস দেয়, তীর চিহ্নিত কমলা রঙের পাসটি বিমান থেকে অবতরণের পরপরই বিমানবন্দর কর্মীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়। এটি দেখিয়ে বিশেষ পথ ধরে লম্বা লাইন এড়িয়ে ইমিগ্রেশন, নিরাপত্তা তল্লাশী ইত্যাদি দ্রুত পার হওয়া যায়। কিন্তু হা হতোম্যি, আমার সামনে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ইস্তেক হন্ডুরাসের পাসপোর্ট সুরুৎ সুরুৎ করে ইমিগ্রেশন পার হয়ে গেলেও আমার সাধের সবুজ পাসপোর্টখানা সামনে পড়তেই ইমিগ্রেশন অফিসারের চোখ সরু হয়ে গেল।
- কোর্স শেষ না করেই সাউথ আফ্রিকা যাওয়া হয়েছিল কেন?
-আজ্ঞে কনফারেন্সে যোগ দিতে
- দেখ বাপু, আমি অত শত বুঝিনা। স্টুডেন্ট আসে, পড়া শেষ করে চলে যায়।
মাঝখানে এত হ্যাপা থাকলে তা আমি সামলাতে পারিনা।
-এখন উপায়?
- উপায় যে জানে তার জিম্মায় নিয়ে যাচ্ছি, চলো।
- কিন্তু আমার কানেক্টিং ফ্লাইট.....
কে শোনে কার কথা। আমাকে ভাবলেষহীন এক মহিলা অফিসারের গ্রাসে তুলে দিয়ে সে তার বিশাল বপু নিয়ে আরেক সহকর্মীর সাথে আড্ডায় মনযোগ দিল। আর আমার ঘটে জমা হল আরেক প্রস্থ জেরা জিজ্ঞাসার লম্বা ফিরিস্তি।
- বৈবাহিক অবস্থা?
- অবিবাহিত (নেভার ম্যারিড)
- বাচ্চা কাচ্চা?
- (আরে কয় কি ) আজ্ঞে বিয়েই তো করিনি।
মহিলা যেন এমন আজগুবি উত্তর বাপের জন্মে শোনেনি, "জিজ্ঞেস করেছি ছেলে মেয়ে আছে কিনা, আর মশাই গাইছে শীবের গীত। ন্যাকা!"
- নেই।
একে একে যত প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছি, ডিগ্রি নিয়েছি তার ফিরিস্তি, আর তৎসংশ্লিষ্ট উজবুক উজবুক সব প্রশ্ন- বিশ্ববিদ্যালয় এক শহরে তো মেডিকেল কলেজ অন্য জেলায় কেন, এম বি বি এস কেমনতরো ডিগ্রি- মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট নাকি নার্সিং। ডাক্তারি ডিগ্রি হলে এম ডি নয় কেন, রেসিডেন্সি কোন বিষয়ে? তাকে যতই বোঝাই এটা ব্রিটিশ সিস্টেম, তোমাদের থেকে আলাদা- সে ততই সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
বোঝার চেষ্টা করে তাকে ভুজুং দেয়ার চেষ্টা করছি কিনা।
এরপর কনফারেন্স ব্যাগ দেখে কনফারেন্সের আয়োজকদের নাম টুকে নেয়।
-ব্যাগে লম্বা মতো ওটা কি?
-আজ্ঞে এর নাম ভুভুজেলা।
-কোন জেলা?
- এটা দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী বাঁশি।
তাও ভাগ্য ভাল ওটা বাজিয়ে শোনানোর ফরমাইশ দিয়ে বসেনি।
ওটা থেকে তো শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের করতে পারিনি বিগত দুই দিনের অক্লান্ত কসরতে। মাঝখান থেকে গাল, ঠোঁট, মাড়ি, ইস্তেক আলজিহ্বা সুদ্ধ ব্যথা হয়ে গিয়েছে।
তার এতসব নখরামি প্রশ্নের খেসারত দিতে আমার এদিকে প্লেন মিস হবার যোগাড়। মেজাজ আস্তে আস্তে চড়ছিল। সপ্তমে চড়ল একটু পরেই।
-বাপ মা কি করে?
-ডাক্তার
- ডাক্তার তো বাপু বহু পদের আছে। গরু ছাগলেরও আছে। কিসের ডাক্তার?
- মা গাইনেকলজিস্ট।
তার পানা মুখ দেখে বুঝলাম এই পদের ডাক্তারের সাথে তার ভালই পরিচয় আছে।
-বাপ?
- অর্থোপেডিশিয়ান
এবার তার মার্কা চেহারা দেখে অনুধাবন করলাম 'কুছ গড়বড় হ্যায়'।
ভাবলাম আমার বাঙ্গালি মার্কা উচ্চারণের ইংরেজি হয়ত বোধগম্য হয়নি। তাই বানান করে বললাম- O-R-T-H-O-P-E-D-I-C-I-A-N
এবার আমার আক্কেলগুড়ুম হবার পালা। চোয়াল ঝুলিয়ে বলে কিনা
-এটা আবার কিসের ডাক্তার? বাপের জন্মে তো এ নাম শুনিনি। ট্র্যাডিশনাল হিলার (কবিরাজ/বৈদ্য) নাকি?
ও মোর খোদা। মনে হচ্ছিল বলি ধরণী দ্বিধা হও।
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের ক্ষমতাশালী সরকারের সরকারী কর্মকর্তা "এ কি শোনাল মোরে? কানের ভেতর দিয়া মরমে পশিল গো, আকুল করিল মোর প্রাণ!" আর এই অসভ্যের দেশে এসেছি কিনা পিএইচডি করতে (শালা)। নিজের শরীরে সঞ্চিত সবটুকু গ্লুকোজ মুখে জড়ো করে নিজেকে কুৎসিত গালি দেয়া থেকে সম্বরণ করে কাষ্ঠ হাসি হেসে জবাব দিলাম
- আজ্ঞে না। হাঁড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ (মনে মনে- তোর মায়রে বাপ)।
[ধৈর্য্য ধরে এটা পড়ার জন্য তোহফা স্বরূপ নিচের ইউটিউব ভিডিওখানা শেয়ার করলাম; স্যাটিসফ্যাকশন গ্যারান্টীড]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।