ক্লিন'স অল্টারনেটিভ ওয়ার্ল্ড
গতকাল হঠাৎ করে এই প্রশ্নটা আমার মাথায় আঘাত করলো। আমি তিতুমীরের জীবন নিয়ে একটা লেখা পড়ছিলাম। বাচ্চাদের জন্য লেখা। সেটা পড়তে পড়তে আবার তার বাঁশের কেল্লার প্রসংগ আসলো। আর আচমকা আমার মাথায় উদিত হলো- তিতুমীর কী স্টুপিড ছিলেন।
নইলে কী করে কামান-বন্দুকধারী ইংরেজবাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি বাশের কেল্লা বানিয়ে যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন দেথতে পারেন? উচ্চমার্গের ননসেন্স না হলে এ রকম কাজ কেউ করতে পারে না।
তারপর থেকই আমি ভাবছিলাম- আসলে কেন তিতুমীর এতো ডেসপারেট একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? সে ভাবনার ফসলটাই সবার সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি। কারণ, আমি তিতুমীরের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে তাৎপর্য উপলব্ধি করেছি- সেটা সকল সময় আর সকল সমাজের জন্য প্রযোজ্য। সে জন্যই বিষয়টা সবার জানা দরকার।
তিতুমীর যে প্রেক্ষাপটে বিদ্রোহ ঘোষনা করেছিলেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইংরেজদের দোসর এদেশীয় জমিদারগণ সাধারণ মানুষের ওপর বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার চালাচ্ছিল। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনটা ছিলো অত্যন্ত তীব্র। এ অবস্থায় কোথাও না কোথাও থেকে একটা প্রতিবাদ আসা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিলো। তিুতমীর ছিলেন সেই অনিবার্য সংগ্রামের নেতা। তিনি এই সংগ্রামের ব্যর্থ পরিণাম সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন।
কিন্তু ঐ সংগ্রাম না করে তার কোন উপায় ছিলোনা।
এমন অবস্থায়- যখন পরাজয় অবশ্যম্ভাবী কিন্তু সংগ্রামও অনিবার্য তখন মানুষের হাতের আঙ্গুলগুলোও স্টেনগান হয়ে ওঠে। তিতুমীরের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিলো। কিছু চাষাভুষা নিয়ে তিনি একটা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন। জয় তার প্রাপ্য ছিলোনা, কল্পনাতেও ছিলোনা।
কিন্তু যুদ্ধটা ছিলো অপরিহার্য। আর তাই যুদ্ধের প্রস্তুতিটাও অবশ্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তখন সেনাপতি হিসেবে নিজের সৈন্যদের মনোবল চাঙা রাখার জন্য একটা অভিনব কিছু করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো। এই অভিনবত্বেরই প্রমাণ তার বাশের কেল্লা। এ কেল্লা নির্মানের মধ্য দিয়ে তিনি তার আকাঙ্খা বাস্তবায়নে মনের উদগ্র বাসনা প্রকাশ করেছিলেন।
তার কাছে কামান নেই, তার কাছে দূর্গ তৈরীর সরঞ্জাম নেই। শুধু সংগ্রামী মনটাই আছে। সেই সংগ্রামী মনের প্রকাশই ছিলো নারিকেল বাড়িয়ার বাশের কেল্লা। এবং এর মাধ্যমে নিজের সংগ্রামী চেতনাকে তিনি অনেকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। হাতের কাছে যা কিছু আছে তাকেই মনের জোড়ের সংগে জুড়ে দিয়ে একটা শক্তি তৈরী করো- এই ছিলো তার বার্তা।
তার সেই বার্তা পড়েই পরবর্তীতে উপমহাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন এতো শক্তিশালী রূপ নেয়। সুতরাং, একটা সুচনাকে ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যময় করার সব উপাদান তিনি বাশের কেল্লা নির্মানের মাধ্যমে করেছিলেন।
তিনি স্টুপিড ছিলেন না। তিনি পরাজয় নিশ্চিত জেনে একটা বিশাল ঘটনার সূত্রপাতটাকে তাৎপর্যময় করে তুলতে চেযেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ভবিষ্যতদ্রষ্টা অপরিনামদর্শী সংগ্রামী।
তিনি সকল যুগের সংসপ্তকদের আদর্শ।
ক্লিন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।