আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝর্নার কান্নাভরা আকুতি -অন্তত এটুকু জানান আমার স্বামী বেঁচে আছে, না মরে গেছে’

‘মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে টেনে-হিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায় প্রশাসনের লোক পরিচয় দেওয়া সাদা পোশাকধারীরা। সাত মাস ধরে খোঁজ নেই। সন্তানেরা বলে আর কত দিন গেলে তাদের বাবা ফিরে আসবে। অন্তত এটুকু জানান আমার স্বামী বেঁচে আছে, না মরে গেছে। ’ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংহতি সমাবেশে কাঁদতে কাঁদতে—কথাগুলো বলছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা কে এম শামীম আকতারের স্ত্রী ঝর্ণা খানম।

সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উদ্দেশ করে তাঁর এ অশ্রুসজল আকুতি উপস্থিত সবাইকে আবেগ আপ্লুত করে দেয়। গুম, খুন, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ দেশে চলমান অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘শামীমের স্ত্রীর কান্না বলে দেয়, আমরা দম বন্ধ হওয়া এক সমাজে বসবাস করছি। শুধু শামীম নয়, বিএনপির নেতা ইলিয়াছ আলীসহ অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে। চলছে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

এ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। ’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘খুন গুমের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাথমিকভাবে সক্রিয় থাকে, তারপর আবোল-তাবোল কথা বলে ও সর্বশেষ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তেই এমনটি হয়। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তেই সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা হয়নি। ’ ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবির বলেন, ‘গুম, খুন একটি রাজনৈতিক প্রপঞ্চ।

এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সংবিধানে জানমালের নিরাপত্তা ও বড় কোনো অপরাধীকেও বিনা বিচারে শাস্তি না দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো শাসক গোষ্ঠীই সে অনুযায়ী দেশ চালাতে পারেনি। তারা রাষ্ট্রপরিচালনার যোগ্যতা হারিয়েছে। ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, ‘যেখানে বর্তমান সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করছে, সেখানে গুমের মতো আরেক মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটছে। একটিরও রহস্য উদঘাটিত হয়নি।

তাই আমরা বলছি, হয় সরকার গুম করছে, না হয় সরকারের ভিতর এমন কেউ গুম করছে, যার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ক্রসফায়ার বন্ধের কথা বলা আছে। যদি ক্রসফায়ার বন্ধে গুমের ঘটনা ঘটে, তাহলে বলতে হয়, এর চেয়ে তো ক্রসফায়ারই ভালো ছিল। ’ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ কামাল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিয়াস করিম, দৈনিক সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সংগীতশিল্পী মাহমুদুজ্জামান ও অরূপ রাহী, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলীসহ অনেকেই সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন।

উপস্থিত কর্মীদের হাতে ছিল গুম, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের প্রতিবাদ-সংবলিত প্ল্যাকার্ড। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।