আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলিয়াস নিখোঁজের অনেক কারণ

ইলিয়াস নিখোঁজের তীর কেবল সরকারের দিকে। আমরা হুজুগে বাঙালি। একটা ঘটনা ঘটলেই দুইভাগ হয়ে যাই। একদল, এটা নিয়ে রাজনীতি শুরু করি। আর একদল গুজব ছড়াই।

আমাদের দেশের রাজনীতির এই চর্চাটা আর কতোদিন থাকবে? আমরা মির্জা ফখরুলের কথা বিশ্বাস করলে কেন হানিফ সাহেবের কথা বিশ্বাস করছি না? আমরা রিজভী সাহেবের কথা বিশ্বাস করলে কেন মতিয়া চৌধুরীর কথা বিশ্বাস করছি না? ইলিয়াস আলী নিখোঁজের কারণ একটাই কেন মনে করছি। আর কারণগুলো কেন আমরা তলিয়ে দেখছি না? এরকম যদি হয় তাহলে তো সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে যাবে। এরপর যুগে যুগে মানুষ কেউ গুম বা নিখোঁজ হলে সেটা কেবল সরকারের উপর বর্তাবে। সেটা নিয়ে রাজনীতি শুরু হবে। আর সন্ত্রাসীরা নির্ভয়ে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যাবে।

কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ব্লগে ফেসবুকে পত্রিকায় ইলিয়াস আলী নিখোঁজের আরও কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের দেশের বিরোধীদলীয় নেতারা সেগুলো একবারের জন্যও চিন্তা করলেন না। একটা লোকের রাজনীতির বাইরে আরও অনেক ব্যবসা বাণিজ্য থাকে। সেগুলোর মধ্যে কোন্দল থাকতে পারে। এবং সেই ঘটনার জের ধরে সন্ত্রাসীরা তাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে। ইলিয়াস নিখোঁজে সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ-১।

সিলেট শহরে বিএনপির অনেকগুলো গ্র“প বিদ্যমান রয়েছে । যার মধ্যে একটি গ্র“পের নেতৃত্ব দেন ডাঃ শাহরিয়া এবং অন্য একটি সাবেক এমপি ইলিয়াছ হোসেন । ডাঃ শাহরিয়ার গ্র“প ছিল মূলত বিএনপির প্রয়াত নেতা সাইফুর রহমান এর অনুসারী । সাইফুর রহমান এর মৃত্যুর পর ডাঃ শাহরিয়ার উক্ত গ্র“পের দায়িত্ব নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির দায়িত্ব নিতে তৎপর ছিলেন। কিন্তু ইলিয়াছ আলী বিরোধীতা ও তার সশস্ত্র ক্যাডারদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারনে সে (ডাঃ শাহরিয়ার) সিলেট বিএনপির দায়িত্ব গ্রহন করতে পারেনি।

এমতাবস্থায় ইলিয়াছ গ্র“প ও শাহরিয়ার গ্র“প এর মধ্যে সর্বদা বিরোধ বিদ্যমান ছিল। যার ফলে ডাঃ শাহরিয়ার সিলেট শহরে নিজের আধিপত্যকে ফলপ্রসু করতে ইলিয়াছ আলীকে অপহরন করতে পারে । ২। অপরদিকে ইলিয়াছ আলীর গ্র“পের মধ্যে দুইটি উপদল বিদ্যমান রয়েছে । যারমধ্যে একটি হলো ইফতেখার আহমেদ দিনার এর নেতৃত্বে দিনার গ্র“প এবং অপরটি হলো এডভোকেট মোঃ শামসুজ্জামান এর নেতৃত্বে জামান গ্র“প ।

দিনার গ্র“প হুন্ডির টাকা ছিনতাই, মারামারি, টেন্ডারবাজি, জমিদখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতো । অপারদিকে এডভোকেট জামাল সিলেট জেলা বিএনপির সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। তার গ্র“পও হুন্ডির টাকা ছিনতাই, মারামারি ও জমিদখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ লিপ্ত থাকে । উভয় দলই ইলিয়াছ আলীর ছত্র ছায়ায় থেকে এই সমস্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে থাকে । দিনার গ্র“প এবং জামান গ্র“পের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ চলতো ।

কিছুদিন পূর্বে শওকত নামের এক সদস্য দিনার গ্র“প থেকে দল পরিবর্তন করে জামান গ্র“পে যোগদান করে । যার প্রেক্ষিতে দিনার, তার গ্র“পের আধিপাত্যকে ধরে রাখার জন্য জনসম্মুখে সিলেট শহরের উপশহর এলাকায় শওকতকে কুপিয়ে হত্যা করে। যার ফলে দিনার গ্র“প ও জামান গ্র“পের সাথে সংঘর্ষ আরও বিস্তৃত হয় । পরবর্তীতে ইলিয়াছ আলী সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়া সত্বেও উক্ত সংঘর্ষের কোন সুষ্ঠু সমাধান না দিতে পারায় জামান গ্র“প ইলিয়াছ আলীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়। অন্যদিকে দিনার শওকতকে খুন করেনি এই ব্যাপারে দাবি করে সে ঐ দিনে অর্থাৎ শওকত খুন হওয়ার দিন ইলিয়াছ আলীর সাথে সুনামগজ্ঞ ছিলো বলে দাবী করে ।

যা জনসম্মুখে ইলিয়াছ আলী অস্বীকার করে । এই নিয়ে দিনার গ্র“প ইলিয়াছ আলীর উপর চরম ভাবে মনোক্ষুন্ন হয় । অপরদিকে দিনার ইলিয়াছ আলীর সমর্থন না পাওয়ায় দিনার এর শশুর আঃ গাফফার (সিলেট জেলা বিএনপির সেক্রেটারী) এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে । যদিও আঃ গাফফার ইলিয়াছ আলীর পক্ষের লোক ছিলেন তথাপিও ইলিয়াছ আলী তার মেয়ের জামাতা অর্থাৎ দিনারকে সমর্থন না দেওয়ায় সে তার বিপক্ষে চলে যায় । পরবর্তীতে দিনার পলাতক হয় এবং তার খোজ না পাওয়ায় দিনার সমর্থিত দল ইলিয়াছ আলীকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করে ।

এ দলের কেউ তাদের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনেও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইলিয়াছ আলী নিখোঁজের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে । ৩। সিলেট-১ আসন সিলেট জেলার একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ আসন । এই আসন থেকে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ইলিয়াছ আলী বহুদিন পূর্ব থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো । কিন্ত্র সিলেট-১ আসনে তার কোন জনপ্রিয়তা নাই বিধায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তাকে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দিয়ে বরং তার পরিবর্তে শমসের মুবিন চোধুরীকে মনোনয়ন দেয়ার পরিকল্পনা করছে ।

যার প্রেক্ষিতে শমসের মুবিন চৌধুরী সিলেট-১ আসনে নির্বাচনের জন্য অতি সম্প্রতি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন । ফলশ্র“তিতে ইলিয়াছ আলীর সাথে শমসের মুবিন চৌধুরীর বিরোধ চরম আকার ধারন করে । এই কারনেও শমসের মুবীন চৌধুরী কিংবা তার দলের কেউ ইলিয়াছ আলী নিখোঁজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে । ৪। বিএনপির সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমান এর ডান হাত হিসেবে পরিচত আরিফুল হক চৌধুরী (বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি) সাইফুর রহমানের মৃত্যূর পর সিলেট বিএনপির নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছিল ।

কিন্তু তিনি বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার আসামী হওয়ায় এবং ইলিয়াছ আলীর সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারনে উক্ত এলাকার নিজের আধিপত্যকে জোরালো করতে পারছিলেন না । সম্প্রতি ইলিয়াছ আলীর নিখোঁজ হওয়ার পর সে জনসম্মুখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং নতুন ভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে । যার প্রেক্ষিতে আরিফুল হক চৌধুরী কিংবা তার দলের কেউ ইলিয়াছ আলী নিখোঁজের কারন হতে পারে। ৫। এছাড়া ইলিয়াছ আলী বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডসহ সিনিয়র নেতাদের সাথে প্রায়শই দুর্ব্যবহার করতো ।

যার ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তার উপর ক্ষুদ্ধ রয়েছে । এক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল ইসলাম এবং আমান উল্লাহ আমানসহ বেশকিছু নেতা তার প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে । এসকল ব্যক্তি বর্গের কেহ এই অপহরনের ঘটনার সাথে যুক্ত থাকতে পারে। ৬। সংসদীয় আসন সিলেট জেলা-১ এ ইলিয়াছ আলী নির্বাচন করতে ইচ্ছুক কিন্তু সিলেট বিএনপির ইলিয়াছ আলী বিরোধী পক্ষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ।

বৃহত্তর সিলেটে তার বিরোধী পক্ষ সংখ্যায় বেশি হওয়ার পরেও তার পোষ্য ক্যাডার/সন্ত্রাসী বাহিনীর কারনে আধিপত্য বিস্তার করতে ব্যর্থ হয়। ৭। সম্প্রতি সরকারের একজন উচ্চ পদস্থ মন্ত্রী তথা রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত'র এপিএস এর তথাকথিত ঘুষ কেলোৈরী ঘটনায় তিনি দপ্তর বিহীন মন্ত্রী হয়েছেন । এমতাবস্থায় সরকার একটি নাজুক পরিস্থিতি অতিক্রম করছে । কিন্তু উক্ত সময়ে বিরোধী দল জনমনে সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করতে তেমন কোন জোরালো ইস্যু সৃষ্টি করে ঘটনাটির ফায়দা লুটতে পারেনি ।

তাই বিরোধী দল অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে সরকারকে বিপাকে ফেলে নিজেদের আন্দোলনকে চাঙ্গা করার জন্য ইলিয়াছ আলীকে নিজেরাই গুম করে দিতে পারে । ৮। এছাড়া সিলেট জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া উল্লেখ্য যোগ্য কয়েকটি খুন যেমন ঃ (ক) বিশ্বনাথ উপজেলা যুবদল আহব্বায়ক নুর আলম হত্যা (২০০৬) (খ) যুবদল নেতা হরমুজ আলী খুন। (গ) ছাত্রদল নেতা ফয়েজ আহমেদ অনু। (ঘ) শিল্পপতি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানকে (২০০৪) অপহরনসহ পরবর্তীতে খুন (ঙ) ছাত্রদল নেতা লিটনকে চিরতরে পগু করার নির্দেশদাতা হিসেবে ইলিয়াছ আলীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অনেকেই দাবী করেন ।

কিন্তু ইলিয়াছ আলীর প্রভাবের কারনে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা দিতে সাহস করেনি । যারপ্রেক্ষিতে খুন হওয়া/নির্যাতিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা তাদের দলের কোন সদস্য/তাদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যে কোন গ্র“প/ব্যক্তি ইলিয়াছ আলীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অপহরনের ঘটনা ঘটাতে পারে । ৯। সিলেট জেলায় বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলা শাখা কখনো বিএনপির সক্রিয় সমর্থন পায়নি । এমনকি যুদ্ধাপরাধী বিচারসহ অন্যান্য কার্যক্রমে সিলেটের জামায়াত যখন কোনঠাসা অবস্থায় ছিলো তখন ইলিয়াছ আলী কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াত কোন সহযোগীতার আশ্বাস পায়নি ।

তাছাড়া সম্প্রতি বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সিলেট সফরকালে জামায়াত ইসলামের সাথে বিএনপি তথা ইলিয়াছ আলীর সাথে জনসভায় প্রকাশ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় । এমতাবস্থায় জামায়াত যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচাল, তাদের নেতা কর্মীদের উপর থেকে বিভিন্ন মামলা প্রত্যাহারের ইস্যু সৃষ্টি এবং সরকারকে বিব্রত করার জন্য ইলিয়াছ আলীকে অপহরন করতে পারে । লেখার সূত্র: Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.