আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মহত্যার আগে/ ইলিয়াস কমল

আমি আমার পৃথিবীর রাজা

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা বাদ্ধ হয়েই নিতে হলো। হয়তো তার কাছে আর কোনও বিকল্প ছিলো না। বা বিকল্পগুলো তার কাছে ঠিক বিকল্প হয়ে দেখা দেয় নি। অথবা বিকল্প হয়তো ছিলো, কিন্তু তার কাছে সে পৌঁছতে পারেনি। আর সকল যন্ত্রণার কারিগর এসে তাকে মুক্তি দিয়ে দিলো এই বলে যে, তুমি এখন আত্মহত্যা করতে পারো।

বাঃ চমৎকার সমাধান! এই সমাধান তো আমি জানতাম বলে মনে হচ্ছে। ভাবে ছেলেটি। কিন্তু মনে পড়েনি কেন? এ এক অদ্ভুত সমস্যা। বেশ কিছুদিন যাবতই তা হয়ে বেড়াচ্ছে। ঠিক সময়ে ঠিক বিষয়টি মনে পড়ে না।

মনে পড়ে এমন সময় যখন আর কিছু তার করার থাকে না। তখন নিজেকে শান্ত্বনা দেয়ার মতোকরে বলে- আরে, আমি জানতাম তা হবে। সত্যি সত্যি তাই হলো। নিজের শেষ সিদ্ধান্তটা নেবার সময়ও মনে হয়েছিলো এমনই হতে পারে। কিন্তু না।

এই সিদ্ধান্তটা সে নিজে নিজেই নিতে পেরেছে বলে সে এখন দাবী করতে পারছে। আর মৃত্যুর পূর্বে এটাই তার সান্তনা। আত্মহত্যার জন্য সর্বোত্তম পন্থা কি? কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় বা চিন্তার খোরাক হবে? একবার মরে কি আর সেই সিদ্ধান্তটা ভুল বলে প্রমাণ করা যায়? যদি মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসি তবে কেমন হবে? আমি কি তবে মৃত্যু অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে পারবো? আমার কি আবার মৃত্যু আসবে না? আমি কি তখন মৃত্যুকে ভয় পাবো। মৃত্যু কি রহস্যময়? কি রহস্য তার ঝোলায় পুরে আছে? কেমন হতে পারে আমার মৃত্যু পরবর্তি দিন? আদৌ কি আছে সেইসব? যদি আর কোনোকিছু না থাকে? তবে সেই চীর যৌবনা নারীর কি দেখা পাবো? এইখানে কি তখন পুলিশ আসবে? তারা আমাকে নিয়ে কি ভাববে?- এইসব নানা ভাবনা পেয়ে বসেছে ছেলেটিকে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

একবার এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আবার এখান থেকে ফিরে আসতেও তার ইচ্ছে করছে না। কি হবে এই জীবন দিয়ে, যেখানে নিজের স্বত্তার নির্মাণই সে দেখতে পাচ্ছে না। ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। ঘর হতে বেড়িয়ে আসে শহরতলীর এক কোণে থাকা বিমর্ষ ছেলেটি। পকেট হাতরিয়ে দেখে কত টাকা আছে? শ তিনেক হবে।

এই দিয়ে দুই ধরণের আত্মহত্যার পথ আবিষ্কার করা যায়। এক. পঞ্চাশ টাকা লাগবে মোটা দড়ি কিনতে লাগবে মাত্র সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। দুই. ধানক্ষেতে দেয়ার বিষ। যা কিনা কিনতে লাগবে ২০০ টাকা। কিন্তু রাতে না খেয়ে মরব? তারপরও এর ভেতরই রাতের খাবার টাকা সহ দুইটা আয়োজনই সম্পন্ন হলো।

এবার বাড়ি ফিরে শুধু কাজ সমাধা করা। সব কিছু নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয় ছেলেটি। পথে মনোলোভা রেস্টুরেন্টে খায়। অনেক দিন পর সেখানে আজ রাতে খাওয়া হলো। বেড় হয়ে দেখে পকেটে অবশিষ্ট আর একটি টাকাও নেই।

আবার বাড়ির দিকে রওনা। ফিরতে ফিরতে ভাবে কখন ঘটানো যায় ঘটনাটা? সন্ধ্যা রাতে, মাঝরাতে, না ভোর রাতে? কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারে না সে। বাড়ির কাছে এসে পরেছে। তালা খুলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। ভাবে শেষ রাতেই শেষ করবে তার জীবন।

ঘুমিয়ে পড়ে এক সময়, ভাবে, কাল সকালের সুর্যোদয় আর দেখা হবে না। ভাবতে ভাবতে ঘুম এসে যায় চোখে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।