আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের ফরেন পলিসি'র সম্ভাবনা ও বাস্তবায়ন, একটি সমসাময়িক বিশ্লেষন!!!

অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই আগামী সপ্তাহটি বাংলাদেশের ফরেন পলিসি সেক্টরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনাময় হতে পারে! তবে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সরকারের প্রস্তুতিহীনতা দেখে হতাশ হতে হয়। যেখানে আমাদের সামনে সুযোগ রয়েছে ফরেন পলিসি'র মাধ্যমে একটি ডাইনামিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার, সেখানে আশ্চর্য্য রকমের মিসবিহেভের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নিজেদের ব্যার্থতা প্রকাশ করছি! বর্তমান সরকারের আমলে বেশ কয়েকবারই কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি প্রয়োগ করার সুযোগ এসেছে। কিন্তু প্রতিবারই কোন না কোন সরকারী উষ্কানীমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দল রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থির করে রেখেছিল। যার ফলে সরকার কতটুকু আন্তরিকভাবে কাজ করতে পেরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এই মে মাসের শুরতেই কয়েকটি শক্তিধর রাষ্ট্রের কয়েকজন ব্যাক্তির সফরের গুরুত্ব ও সম্ভাবনার আলোচনায় এই পোস্ট, কারন ঢাকা'র জন্য বিশেষ গুরুত্ববহন করছে এসব সফল।

আসছে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী। ভারতের অর্থমন্ত্রী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র, পতাকা সম্পর্কিত ভাতৃত্বও রয়েছে। বাংলাদেশে'র প্রথমদিকের বন্ধুপ্রতিম দাতা রাষ্ট্র এবং উন্নয়ন সহযোগী। তো এই জাপানেরই উপপ্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসছে।

ঐতিহাসিক সম্পর্কের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যাবস্থা'র ভবিষ্যত মেট্রোরেলে'র অর্থের যোগান দেয়ার কথা এই জাপানেরই সংস্থা জাইকা'র। ৪৫ বছরের মেয়াদে ০.০১ % সুদে!!! কিন্তু প্রথম আলো'র খবর দেয় যে এই অর্থছাড় আটকে গেছে! পরে অবশ্য আনঅথেন্টিক সোর্সের তথ্য ভুল ছিল বলে ক্ষমাপ্রার্থনা করে, কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের টাকা'র মত এই টাকাও আটকে যেতে পারে! কারন, প্রথম আলো'তে যা রটে তার কিছু না কিছু ঘটে! জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রীর এই সফর, মেট্রো রেলে'র ফান্ড নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সামনে এটি একটি বিরাট অপর্চুনিটি! কিন্তু রাজনৈতিক এবং দেশের সার্বিক যেই পরিস্থিতি, জাপান সরকার এমন অবস্থায় কতটুকু কনভিন্সড হবে বলা যাচ্ছে না। এটা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পারফর্ম্যান্সের উপর নির্ভর করছে। আশা করতে পারি মে মাসেই মেট্রোরেলের টাকা নিশ্চিত হবে। কোন কারনে এটা ব্যার্থ হলে মানে মেট্রোরেলে'র টাকা আটকে গেলে তা হবে সরকারের সুনিশ্চিত ব্যার্থতা।

ভারতের প্রণব বাবু আসছেন, এই প্রতিবেশি দেশের প্রভাব আমাদের উপর অপরিসীম। সরকারের মাই ডিয়ার দেশটা'র নাক উঁচু আচরন দেশবাসী'কে ক্ষুদ্ধ এবং সবার সামনে আওয়ামী লীগকে বিব্রতই করেছে শুধু। ১০০ কোটি রুপী ঋন দিয়ে মহজনী শর্ত স্থাপন, বর্ডার কিলিং এবং তিস্তা সিনক্রিয়েটের পর তাদের কাছ থেকে কামনা এবং প্রাপ্তি'র হিসাব জটিল হয়ে গেছে। দেশে এবং অনলাইনে নাকি কাঁচা ক্রুসেডার ঘোরাফেরা করে তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলবো না। আর আসছেন যুক্তরাষ্ট্রে'র হলিউডি সুপার মিনিস্টার ইউ,এস সেক্রেটারী অব স্টেট হিলারি ক্লিনটন।

৯৫ সালে যিনি ২ মেয়ে সহ দিনাজপুরে এসে শাড়ি পড়ে ঘুরে গেছেন বন্ধু ডঃইউনুসের গ্রামীন প্রকল্পে। আমাদেরও ছোটবেলার আন্টি ইমেজের এই মিসেস ক্লিনটন। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তেমন কোন তাৎপর্যপূর্ণ অফিসিয়াল সম্পর্ক নেই। সরকারী পর্যায়ে খুবই ঢিলা এবং ট্র‌্যাডিশনাল যুক্তরাষ্ট্র-গরীব রাষ্ট্র সম্পর্ক! যা যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লীপনা এবং আমাদের অপরের প্রতি মুখাপেক্ষিতাই প্রকাশ করে। এরই মধ্যে গ্রামীন ব্যাংক সিনক্রিয়েট এবং বিরোধী দলের উপর দমন পীড়নের মাত্রা'র সাথে সাথে সরকারী বাহিনীর ধারাবাহিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নিজ অবস্থানে কঠোর ও যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার বিপরীতে দৃঢ় অবস্থানের কারনে ২ দেশের সম্পর্ক বেশ নাজুক।

এরমাঝেই যুক্তরাষ্ট্র এসেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে। তারা চায় নিরাপত্তা বিষয়ক অফিসিয়াল চুক্তি স্বাক্ষর করতে!!! বঙ্গপোসাগরের নিরাপত্ত সম্পর্কে মার্কিনিরা চিন্তিত। যার প্রকাশ ঘটেছে গত ১৯ এপ্রিলের একটি মিটিংয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপদেষ্টারা বাংলাদেশকে দক্ষিন এশিয়ার স্ট্র‌্যাটেজিক্যালি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ বলে ঘোষনা দিয়েছে! দিবে নাই বা কেন, ভারত স্বাতন্ত্র বজার রাখতে চায়, মায়ানমার চীনের কথা শুনে, পাপীস্তান বেলাইনের চলে গেছে, শ্রীলংকা-নেপাল-ভুটানের নিরাপত্তার গ্যারান্টর ভারত। সুতরাং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এলাকায় বাংলাদেশই পারে ন্যায্য বিনিময়হারের ভিত্তিতে মার্কিনিদের প্রবেশের ব্যাবস্থা করে দিতে! বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল এই সময়ে বাংলা-মার্কিন সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার।

কিন্তু এই মুহুর্তে বাংলাদেশ এমন কিছু করতে মোটেও প্রস্তুত নয় বোঝা যাচ্ছে। তাই এই দফায় লো প্রোফাইল বজায় রেখে তাদের ভারী অফারগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াটাই উত্তম মনে হয়। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সব ধরনের ইস্যুতে শুধুমাত্র গ্রাহক হিসেবে আচরন করে। সকল দেশের সাথেই একটা অলিখিত ভালবাসা বজায় রেখে যতটুকু পারে দান-খয়রাত গ্রহন করে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি'র মতন কিছু একটা করা মানে আন্তর্জাতিক রাজনীতি'তে অবস্থান গ্রহন করা! অতি কাছের সুপার পাওয়ার চায়না এবং প্রতিবেশি সুপার পাওয়ার ভারত থাকতে অতলান্তিকের ঐপাড়ের দেশের সাথে বঙ্গপোসাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মত নজীরবিহীন সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়! এছাড়াও রাশিয়া-ইরান-মধ্যপ্রাচ্য সহ সকল অঞ্চলের সাথে আমাদের নিরপেক্ষ সম্পর্ক বিঘ্ন হবে যদি মার্কিনিদের সাথে নিরাপত্তা বিষয়ক চুক্তি করি।

এমন পরিস্থিতিতে হিলারী'র সফরের আগমুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী চমৎকারভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের দাবী পুণরায় তুলে ধরেছেন! ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে আমাদের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং মার্কিন বাজারে আমাদের মত গরীব দেশগুলোর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের কথা স্মরন করিয়ে দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে প্রধানমন্ত্রী'র "শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারে"র দাবী মার্কিন সরকারের কাছে পৌছে দেবার কথা বলেছেন যার মাধ্যমে একটি গিভ & টেক কন্ডিশন তৈরী হয়েছে!!! এছাড়াও সরকার কোন রকমের চুক্তি করার জন্য প্রস্তুতির অভাবও তুলে ধরে চুক্তি করা থেকে দুরে থেকে নিরাপদ অবস্থান নিচ্ছে বলে আশা করা যায়। তবে, হিলারী ক্লিনটনের সফর সরকারের চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে পারে ডঃ ইউনুস এবং সুশীল সমাজ। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে এসেছে আমাদের বেসরকারী ব্যাক্তি-সংগঠনগুলোই, এবারও এবং আগামীতেও এটা কন্টিনিউ করলেই আমাদের জন্য ভাল! কারন এই সম্পর্ক ভালভাবে হালচাষ করার ক্যাপাসিটি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেই। বরং উল্টাপাল্টা চুক্তি'র বাঁধনে জড়িয়ে পড়লে বিপদ হতে পারে! সুতরাং দেখা যাচ্ছে আমাদের জন্য জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রীর সফরটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! একমাত্র তার কাছ থেকেই কিছু পাওয়ার আশা রয়েছে। আর বাকী দুইজনের কাছ থেকে কোন কিছু প্রতিশ্রুতি না করে পার পেয়ে যাওয়াটাই সৌভাগ্য বিবেচিত হবে!!! তবে, নিশ্চিতভাবে সরকারের জন্য একটা মাথাব্যাথা'র কারন হয়ে উঠছে ঘরোয়া রাজনৈতিক পরিবেশ!!! কিছুদিন আগে ফরেন পলিসি'র ব্যার্থতা দেখা দিয়েছিল শুধুমাত্র আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি'র কারনে।

তুরষ্কের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্যারিশম্যাটিক নেতা রেজেপ তায়িপ এরদোয়ান ২ দিন বাংলাদেশ সফর করেন। তুরষ্কের সরকারের সহযোগীতায় সেদেশের ব্যাবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী হয়ে উঠছে। মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিন আমেরিকায় তারা ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশেও ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক রয়েছে এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু তার সফর চলাকালীন সময়ে সরকার খালেদা জিয়াকে তার বাসভবন থেকে উচ্ছেদ করে।

রাজপথে বিশৃঙ্খলা হয় এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী তুরষ্কের প্রধানমন্ত্রীর সাথে নির্ধারিত মিটিং বাতিল করে!!! একটু ভেবে দেখেন, আপনি কারো বাসায় মেহমান হয়ে যাবার পর যদি আপনার সামনে ঐ ঘরে তুমুল ঝগড়া শুরু হয় এবং খাট-বালিশ নিয়ে ঘরব্যাপী দৌড়-ঝাপ, ভাংচুর হয় তখন সিচুয়েশনটা কি হয়??? তারপরেও, তুরষ্ক আমাদের প্রধানমন্ত্রী বুবুজান'কে ফিরতি সফরে আমন্ত্রন করেছে। সফল একটি সফর আয়োজন করেছে। যেখানে আমাদের সরকার তুরষ্কের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ইপিজেড নির্মানের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এখন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলেই আগামীতে ভাল রকমের বিনিয়োগ হতে পারে এবং বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে।

জাপান-ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মত ৩টি সর্বোচ্চগুরুত্বপূর্ণ দেশের নেতারা এমন এক সময়ে আসছে যখন সরকারী দল একের পর এক অদ্ভুদ ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে বিপর্যস্ত! যা নিশ্চিতভাবেই বিদেশীদের সামনে সরকারকে বিব্রত করবে। এবং বিরোধী দল সহানুভুতি অর্জন করবে। গুম, হত্যা'র মত ঘটনায় বিরোধীদল ৩ দেশের নেতাদের দৃষ্টিআকর্ষন করে সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরী করবে। সরকারের সার্বিক ব্যার্থতা / সফলতা'র ফলাফলের উপর এর বিরাট প্রভাব থাকবেই। সরকারের উচিত, বিরোধী দল দমনের জন্য সময়-শ্রম ও মেধা না খাটিয়ে ফরেন পলিসি নিয়ে মাথা খাটানো, যার দ্বারা সফলতা অর্জন করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারে! এটাই হতে পারে বিরোধী দলের অভিযোগের জবাব এবং জনগণের সমর্থন আদায়ের কৌশল।

কিন্তু হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসে চড়ে সরকার যেভাবে সারা দেশশুদ্ধ কামরুপ কামাক্ষা'র দিকে রওয়ানা হয়েছে তাতে শংকিত হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.