A passionate writer আইনের জালে বাঁধা
-- হোসাইন আব্দুল হাই
চলার পথে প্রতিটি বাঁকে নানা আইনের ফাঁদে পড়তে হয় জার্মানির মানুষকে। যেখানে চুল পরিমাণও আইনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। আর সেজন্যই হয়তো প্রত্যেকেই এতোটা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করতে পারেন নিরাপত্তার অনুভূতি।
এই সমাজের আঁকে-বাঁকে ঘুরতে গিয়ে তাই প্রায়ই চোখে পড়ে চমৎকার ভদ্র বেশে পুলিশ সদস্যদের হাটা চলা। খুব অল্প-স্বল্পই দেখা মিলে এই বাহিনীর সদস্যদের।
তবে অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় তাদের জন্য নির্ধারিত ভদ্র রঙের পোশাকের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের জন্য নির্ধারিত ভদ্র রঙের কারে করে ঘুরে বেড়াতে। এমনটি খুব কমই দেখা যায় যে, কোথাও দাঁড়িয়ে তারা টহল দিচ্ছে। কারণ পুলিশ সদস্যরা একদিকে যেমন কোথাও দাঁড়িয়ে নেই, আবার অন্যদিকে যেন তারা সব জায়গায় বিরাজমান। কারণ শহর থেকে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাস-ট্রাম স্টেশন, বাজার কিংবা মোড়েই দেখা যায় পুলিশের সাহায্য চাওয়ার জন্য বিনামূল্যে ফোন করার নির্ধারিত বাক্স। সেখানে নির্ধারিত বোতামে চাপ দিলেই সাথে সাথে অপর পার থেকে পুলিশ সদস্যরা সাড়া দেবন।
আর তারপরই একটি বিশেষ সুরে ভেঁপু বাজিয়ে ক্ষণিকের মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে যাবেন জনগণের সেবক এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।
প্রায়ই মনে হয় এদেশে পুলিশ সদস্যরাই বোধ হয় সবচেয়ে সম্মানিত মানুষ। কারণ এমনটি কখনও কারো মুখে শোনা যায় নি যে, কেউ তাদের ঠোলা বলে গালি দিচ্ছে কিংবা তাদের ব্যাপারে কারো এতোটুকু নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তারা একদিকে যেমন অহেতুক কাউকে কখনই হয়রানি করে না তেমনি আবার কেউ আইন ভঙ্গ করলে এতোটুকু ছাড় নেই সেটাও সবার জানা। তাই প্রায়ই মনে হয়, এশিয়ার দেশগুলিতে সেনা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপারে অন্তত এখনও মানুষের যে একটা সম্মানসূচক দৃষ্টিভঙ্গি আছে বলে মনে হয়, এখানকার পুলিশ সদস্যরাই তার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা আর ভক্তি পায়।
তবে পুলিশের মতো পেশায় থেকে কেউ এতোটা সম্মান পাওয়ার পেছনে সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের শতভাগ দৃঢ়তা। কারণ এদেশের কোন একজন পুলিশ কিংবা কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীই এক পয়সাও ঘুষ নেন না কিংবা দেন না। তেমনি আবার কোটি টাকা দিয়েও তাদের দায়িত্ব থেকে এতোটুকু সরানো যাবে না এমন বিশ্বাস প্রায় সবার বলেই মনে হয়।
যাহোক, পুলিশ গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রতি এতোটা ভক্তি দেখে পাঠক বিরক্ত হতেই পারেন। তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে আমাদের সমাজের সেই আইনের রক্ষকদের সাধুতার কারণে।
তবুও এখানকার পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরির আরো কিছু কারণ রয়েছে। তা না বললেই নয়। যেমন প্রতিটি মানুষ এখানে নিজের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। ঠিক একইভাবে মানুষের এবং নিজেদের অধিকার ও ক্ষমতার সীমারেখার ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন পুলিশ সদস্যরাও। হয়তো কোন ব্যক্তিকে আটক কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
কাছেই কোন পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। ফলে হেঁটে যাওয়ার পথ। দেখা যায়, সেই অপরাধী কিংবা সন্দেহভাজন ব্যক্তির সাথে দুই তিন জন পুলিশ সদস্য পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছেন। শুধু পোশাকেই তাদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়। কিন্তু এছাড়া কোন ব্যবধান থাকে না তাদের মধ্যে।
অর্থাৎ কোন হতকড়া পরানো নেই। পথে নিয়ে যেতে যেতে লাঠিপেটা করা হয় না কাউকে। এমনকি আইনি অধিকার ছাড়া কাউকে স্পর্শও করে না খাকি পোশাক পরিহিত এসব সভ্য-ভদ্র মানুষগুলো।
অবশ্য পুলিশের এতোটা ভদ্রতার আরেকটি কারণ হতে পারে যে, এদেশে দৌড়ে পালিয়ে কারো পক্ষে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় নেই। একদিকে যেমন কোন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা কোন অপরাধীকে ছত্রছায়ায় রেখে রক্ষা করবে না।
অন্যদিকে এখানকার প্রতিটি মানুষের সকল প্রয়োজনীয় তথ্য সরকারের কাছে সুস্পষ্টভাবে সংরক্ষিত। অর্থাৎ প্রতিটি নাগরিকের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পুলিশের হাতে রয়েছে। দেশি হোক বিদেশি হোক প্রতিটি মানুষের হাতে রয়েছে নিজস্ব পরিচয় পত্র। এমনকি পথের ধারে যদি কেউ ছোট্ট হোক বড় হোক কোন অপরাধ করেই ফেলে, পলাতক থাকার বিন্দুমাত্র গলিপথ কারো জন্যেই খোলা নেই।
তবে আসল কথাই যাওয়া যাক।
ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ বলেই হয়তো জার্মান সমাজের আনাচে-কানাচে নানা বাহারের গাড়ির বহর চোখে পড়ার মতোই। তাছাড়া একদিকে গাড়ির সংখ্যা বেশি আবার অন্যদিকে নিরাপত্তাও বেশ ভালো বলেই হয়তো সব গাড়িকে একেবারে গ্যারেজে পুরে মানুষের চোখের আড়ালে রাখার সুযোগ এবং প্রয়োজনীয়তা দুটোই থাকে না। ফলে প্রায় সব রাস্তার ধারেই দেখা যায় গাড়ি রাখার সুন্দর ব্যবস্থা। অবশ্য ঠিক কোন জায়গায় ক'টা গাড়ি কতক্ষণ সময় কীভাবে রাখা যাবে সেটিও সুনির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো কোন গাড়িতেই কখনও কোন আঁচড় পড়ার কথাও শোনা যায় না।
আসলে মূল কথা হলো কেউ কোন গাড়িতে আঘাত করে পালিয়ে বেঁচে যাবে এমন সুযোগতো কোথাও নেই। কারণ প্রায় সর্বত্র ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার চোখ হা করে চেয়ে রয়েছে।
একদিন এক সহকর্মী এসে বললেন, আজ আমার খুব মন খারাপ। কারণ জিজ্ঞেস করতেই বললেন সেই আজব কাহিনী। তিনি গত মাসে কোন কোন দিন কোন পথে ঠিক কয়টার সময় নির্ধারিত গতির চেয়ে একটি বেশি গতিতে গাড়ি চালিয়েছিলেন তার ফিরিস্তি আজ বাসায় এসে হাজির।
এমনকি ঠিক যেই মুহূর্তে গাড়ির গতি নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সেই মুহূর্তের ছবিসহ যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জরিমানার চিঠির সাথে। আর লিখে দেওয়া হয়েছে জরিমানার পরিমাণ এবং তা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। শুধু তাই নয়, গাড়ি চালাতে গিয়ে এমন অপরাধের মাত্রার উপর নির্ভর করে গাড়ি চালকের ছাড়পত্রে যোগ হতে থাকে নির্ধারিত পয়েন্ট হ্রাসের চিহ্ন। হতে পারে চালকের ছাড়পত্র পুরোপুরি বাতিল কিংবা নির্ধারিত সময়ের জন্য স্থগিত। এমনই নানা আইনি বেড়াজালের মধ্য দিয়েই হয়তো জার্মান জাতি হয়ে উঠেছে সুশৃঙ্খলতার এক চমৎকার উদাহরণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।