২০০৩ সালের কথা মীরপুর স্টেডিয়ামে বিশাল একটা কনসার্ট হয়ে তাতে বাংলাদেশের প্রথম সারির সব ব্যান্ড সাথে পাকিস্তানের ব্যান্ড জুনুন আর স্ট্রিংস পারফর্ম করে। সেই অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষন হিসেবে ছিল গুরু আজম খান, আর তার সাথে সঙ্গত করেন আইয়ুব বাচ্চু, ফুয়াদ নাসের বাবু, সুমন এবং সাজু। এই কনসার্টটা ছিল সম্পুর্ন বিনামূল্যে। এই কনসার্টেই প্রথম হেলিকপ্টার দিয়ে কোন ব্যান্ড স্টেজে আসে। “এম্পিফেস্ট” নামে এই কনসার্টের আয়োজক ছিল মূলত ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ’।
এটা ছিল তাদের স্পনসরে শেষ কনসার্ট। এর আগেও তারা আরো অনেক কনসার্টের ও সঙ্গীত বিষয়ক বিভিন্ন ইভেন্টের স্পনসর ছিল। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কারণে তাদের পক্ষে এহেন কর্মকান্ডে আর অংশ নেয়া হয়নি। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গীতানুরাগীদের বিনামূল্যে বা কম মূল্যে কনসার্ট দেখার সুযোগ কমে যায়। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানের স্পনসরশীপে কনসার্ট হয়, তবে সেখানে টিকিটের দাম একটা বড় বিষয়।
পাইরেসির কারনে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রথিতযশা সংগীত শিল্পীদের গানের এ্যালবাম রিলিজ প্রায় হয়না বললেই চলে। তাই তাদের গান শুনতে হয় টিভি’র লাইভ কনসার্টে অথবা স্টেজ শো-তে।
২০১২ সাল আর্মি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশন’ ও ভারতের ‘আইটিসি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি’র যৌথ আয়োজনে এবং দেশীয় বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় চারদিনব্যাপী উচ্চাঙ্গ সংগীতের উৎসব হয়। সেখানে বাংলাদেশের অল্প কয়েকজন ও ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকপাল অনেক কণ্ঠশিল্পী ও বাদ্যশিল্পী অংশগ্রহন করেন। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে শ্রোতারা বিনামুল্যে সঙ্গীতের এই মহাযজ্ঞের সামিল হবার সুযোগ পান।
অভূতপুর্ব এই আয়োজনের ব্যাপকতা আর বিশালতার কোন তুলনা হয়না। একই মঞ্চে এতজন মহান শিল্পীদের পরিবেশনা উপভোগ করা সত্যি সৌভাগ্যের ব্যাপার। এবছরও একই প্রকার আয়োজন হয় যাতে প্রায় ৩২,০০০ শ্রোতা সঙ্গীত উপভোগ করার সুযোগ পান। বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই আয়োজনে বিশেষ প্রভাব ফেলেনি। তবে পরিস্থিতি ভালো থাকলে শ্রোতার সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতো।
‘আইটিসি’ মানে হচ্ছে ‘ইন্ডিয়ান টোব্যাকো কোম্পানি’, এদের ভারতে তামাক ব্যবসাসহ অনান্য ব্যবসা আছে। এর পাশাপাশি তারা ১৯৭৭ সালে কলকাতায় ‘আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি’ (ITC Sangeet Research Academy) প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়।
যে কোন দেশে ব্যক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও রাষ্ট্রকে কর প্রদান করতে হয়। তামাককে নিরুৎসাহিত করার জন্য তাই প্রতিটি দেশে উচ্চ কর আরোপ করা হয়।
বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশে এখাতে কর বাড়ানো হয়, এবং সেটা করাই বাঞ্ছনীয়। যতদূর মনে পড়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের পরেও ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ’ এদেশে বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর আওতায় প্রচুর গাছ লাগিয়েছিল, এবং তাদের তৎকালীন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেটা ফলাও করে প্রচারও করেছে। সেটা কি তামাক আইন পরিপন্থী ছিল না? যদি সেটাকে সামাজিক তথা সেবামূলক কর্মকান্ড হিসেবে ধরা হয় তবে একই বিবেচনা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কেন? এর মানে এই নয় যে আমি তামাক বিরোধী আইনের সমর্থন করি না। কিন্তু এটি কি স্ববিরোধীতা নয়?
২০০৪ সালের ১৪ই জুন বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (WHO) কর্তৃক ঘোষিত Framework Convention on Tobacco Control-এ স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।
সেখানে বলা আছে,
"Tobacco advertising is prohibited in all print and electronic media, including at point-of-sale. Free and discounted tobacco products are prohibited. Sponsorship is prohibited; however charitable donations are permitted so long as tobacco trademarks are not used. The display of tobacco usage in mass media is prohibited, unless essential to the story and accompanied by a warning on the harmful effects of tobacco products."
বাংলাদেশের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫-এর ৫ ধারার (৩) উপধারায় বলা আছে,
"কোন ব্যক্তি সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচীর (Corporate Social Responsibility) অংশ হিসেবে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিলে বা উক্ত কর্মকাণ্ড বাবদ ব্যয়িত অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে কোন তামাক বা তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, সাইন, ট্রেডমার্ক, প্রতীক ব্যবহার করিবে না বা করাইবে না অথবা উহা ব্যবহারে অন্য কোন ব্যক্তিকে উৎসাহ প্রদান করিবেন না। "
একই আইনের ২০১৩ সালের সংশোধনীর ৩-ধারায় বলা আছে,
"All direct and indirect advertisements and promotions for tobacco products are banned. Also sponsorships and CSR (corporate social responsibly) propaganda by tobacco companies are banned. Additionally, smoking scenes in films, video documentaries or in TV dramas are a punishable offence."
বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে যা বেআইনী সেটা বাংলাদেশের পরিসীমায় দেশী-বিদেশী সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কেউ হয়তো বলতে পারেন, এখানে ‘আইটিসি’ তো স্পনসর নয়। কিন্তু তাদের আনুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত ‘আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি’ — যেখানে তাদের নাম এখনো বর্তমান সেটা কি প্রকারান্তরে তাদের স্পনসরশীপ নয়? এতে কি বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘিত হয় না?
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।