ইলিয়াস আলী নিখোজ : ভবিষ্যৎ সরকারের করনীয়
ভূমিকা:
গত ১৭ এপ্রিল রাত্রে ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ী চালক নিখোজ হন। পরপর তিনদিন হরতাল দিল ইলিয়াস আলীর দল বিনএনপি। জনগণের নাভিস্বাশ উঠে গেল হরতালের কারণে। সরকারী বাহিনীর মুখে ফেনা উঠে গেল ইলিয়াস আলীকে খুজে বের করার সর্বশেষ সংবাদ জানাতে জানাতে। সাংবাদিকদের হাত ক্ষয় হচ্ছে ইলিয়াস আলীর প্রতিবেদন লিখতে লিখতে সেই সাথে ক্যামেরা ঘাড়ে করে আলেয়ার পিছনে ছুটতে ছুটতে কাধের বারোটা বেজে গেছে।
বুদ্ধিজীবিদের কলাম লিখতে লিখতে চুলগুলো আরো সাদা হয়ে গেছে। অবশেষে সকারের চৌকশ তদন্ত বাহিনী র্যাবও বেশ ফোসফাস করলো কিন্তু হদিস পাওয়া গেলনা ইলিয়াস আলীর। তাহলে কি ইলিয়াস আলী নিখোজ হননি বা ইলিয়াস আলী নামে কেউ ছিল না। অবশ্যই ছিল, আশাকরি তিনি সহিসালামতে বেচে আছেন। গুজবের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হয় যে, তিনি অচিরেই জীবিত অবস্থায় আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
গণতন্ত্র রক্ষায় তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে এমন দাবী অনেকের। তারপর আবারো দুইদিন হরতাল শুরু হলো। তবে ইলিয়াস আলীকে এখনো খুজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। হয়তো পরে পাওয়া যাবে। কিন্তু ভভিষ্যতে যদি আর কেউ এমনভাবে নিখোজ হন তাহলে তাকে কিভাবে খুজে বের করা যাবে বা এ ব্যাপারে ভবিষ্যৎ সরকারের করনীয় কি হবে, পাশাপাশি বিরোধী দলের ভূমিকা কি হবে সে সম্পর্কে কিছু ধারণা দেওয়া যেতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বর্ধিতকরণ:
বাঙলাদেশের ভবিষ্যৎ সকরারের একটি ভিন্ন ধর্মী এবং ইনোভেটিভ মন্ত্রলায় গঠন করতে হবে। যার নাম হবে "কবিরাজ মন্ত্রণালয়"। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত "কবিরাজ মন্ত্রী"র কার্যপরিধিকে ৪টি প্রতিমন্ত্রীর অধীন ভাগ করতে হবে। যেমন- "বাটিচালান প্রতিমন্ত্রী", "ঝাড়ফুক প্রতিমন্ত্রী" "গণনা প্রতিমন্ত্রী" ও "তাবিজ প্রতিমন্ত্রী"। তবে উল্লেখ্য যে, প্রত্যোকটি প্রতিমন্ত্রীর বিপক্ষে বিরোধী দলের একজন করে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করবেন যাতে উক্ত সরকারী প্রতিমন্ত্রীগণের নিয়মপদ্ধতী বা মন্ত্রসমূহের ভূল ধরিয়ে দিতে পারেন।
প্রতিমন্ত্রীগণের কার্যক্রম সম্পর্কে একটি ধারনা দেওয়া হলো;
বাটিচালান প্রতিমন্ত্রী:
এই প্রতিমন্ত্রী ইলিয়াস আলীর মতো কেউ নিখোজ হলে, সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সংগৃহিত তথ্য উপাত্তর সত্যতা যাচাই করার নিমিত্তে দেশবরেন্য বাটিচালক কবিরাজদের দিয়ে বাটি চালনা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তবে বাটিটি কোন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীর গায়ে উঠলে বা পায়ে ঠেকলে বিরোধী দলের নিজস্ব বিরোধী দলীয় বাটিচালান প্রতিমন্ত্রীর অধীন কর্মরত বাটিচালকদের দিয়ে তার সত্যতা যাচাই করার সুযোগ পাবেন।
ঝাড়ফুক প্রতিমন্ত্রী:
এই প্রতিমন্ত্রী তার অধীন কর্মরত বিভিন্ন ঝাড়ফুক কবিরাজদের দিয়ে নিখোজ ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের ঝাড়ফুক দিতে থাকবেন, যতক্ষণ না ঐ আত্মীয় স্বজনদের চোখের পানি না শুকায়। তবে সরকার ভূলমন্ত্র দিয়ে আত্মীয়স্বজনদের চোখের পানি শুকাচ্ছেন কি না তা পরীক্ষা করতে-বিরোধী দলীয় ঝাড়ফুক প্রতিমন্ত্রীর অধীন কর্মরত ঝাড়ফুক কবিরাজদের দিয়ে তার সত্যতা যাচাই করার সুযোগ পাবেন।
গণনা প্রতিমন্ত্রী:
এই প্রতিমন্ত্রী তার অধীন কর্মরত বিভিন্ন গণকদের দিয়ে নিখোজ ব্যক্তির সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গণনা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
গণনায় সরকারী দলের কেউ দোষী সাব্যস্থ হলে বিরোধী দল কোনরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারবে না শুধু মাত্র যথাযথ শাস্তির দাবী ব্যতিরেকে। তবে উক্ত গণনায় বিরোধী দলের কারো নাম আসলে-বিরোধী দলীয় গণনা প্রতিমন্ত্রীর অধীন কর্মরত গণকদের দিয়ে তার সত্যতা যাচাই করার সুযোগ পাবেন।
তাবিজ প্রতিমন্ত্রী:
এই প্রতিমন্ত্রী তার অধীন কর্মরত বিভিন্ন তাবিজ কবজের কবিরাজ দিয়ে নিখোজ ব্যক্তির অনুসন্ধান করবে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্যদের গলায় অন্তত একটি করে তাবিজ ঝুলিয়ে দেওয়া হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত নিখোজ ব্যক্তির হদিস মেলে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন সদস্য মিডিয়ার সামনে মূখ খুলতে পারবেন না। অবশ্য-তাবিজের মাধ্যমেই সকলের মুখ আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাবে।
সেই সাথে বিরোধী দলের প্রথম সারির দশ জনের গলায়ও একটি করে তাবিজ দেওয়া হবে এবং তাদের মূখও একইভাবে বন্ধ থাকবে। তবে উক্ত তাবিজের মাধ্যমে বিরোধী দলের সদস্যদের মূখ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ থাকলে বিরোধী দলীয় তাবিজ প্রতিমন্ত্রীর অধীন কর্মরত বিশিষ্ট তাবিজ কবজের কবিরাজ দিয়ে তা পরীক্ষা করা যাবে।
উল্লেখ্য- যে কবিরাজ মন্ত্রী সকল প্রতিমন্ত্রীদের সাথে সমন্বয় সাধন করবেন এবং সকল প্রকার সম্ভাবনা তার অধীন কর্মরত বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন। পরবর্তীতে সকল প্রতিমন্ত্রীর বিভাগ থেকে সংগৃহিত তথ্যের আলোকে মন্ত্রী মহোদয় একটি পূর্ণাংগ প্রতিবেদন বাঙলাদেশের সাধারণ জনগণের নিমিত্তে ফেসবুকে দাখিল করবেন। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের দ্বারা সত্যায়ন করা হবে।
পাশাপাশি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা অফেসবুকধারীদেরকে উক্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে অবহিত করতে বাধ্য থাকবেন।
কবিরাজ মন্ত্রীর মন্ত্রনালয় বহির্ভূত অন্যান্যদের দায়িত্ব নিম্নে বর্ননা করা হলো-
সরকারী বাহিনী:
কবিরাজ মন্ত্রীর কবিরাজগিরি শেষ হবার পূর্ব পর্যন্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের আংগুল চুষতে চুষতে সাদা করে ফেলবে। যখন মিডিয়ার লোকজন তাদের কোন প্রশ্ন করবেন, তখন সাথে সাথে তারা গালের মধ্যে আংগুল দিয়ে বসে পড়বেন। তাতেও যদি না ছাড়ে-তবে আংগুল গালে পুরে শুয়ে পড়বেন।
সাধারণ জনগণ:
নিখোজ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে সকলে নিজ নিজ ধর্মে প্রার্থনা করবে।
একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকার ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের অসৎ আয় থেকে তাদের সকলকে ভরণ পোষণ দিতে হবে। উল্লেখ্য-যারা এই মহত কর্মে নিজেদের অর্থ সম্পদ ব্যয় করবেন তাদের ভবিষ্যতের সকল অবৈধ আয়কে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। উক্তসময়ে সাধারণ জনগণের জন্য ঘুম হারাম বলিয়া গন্য হইবে, এবং নেতাকর্মীদের জন্য ঘুম আরাম বলিয়া বিবেচ্য হইবে।
সাংবাদিক:
নিখোজ ব্যক্তির সন্ধান জানাতে সবাই ততপর থাকবেন। বিশেষ করে যাদের কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে তাদের কথা বলানোর চেষ্টা করে কবিরাজমন্ত্রী ও বিভিন্ন প্রতিমন্ত্রীদের নেওয়া উদ্যোগের কার্যকারিতা সম্পর্কে পরীক্ষা করে তা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করবেন।
উক্ত সময়ে সকল সাংবাদিকের জন্য ঘুম হারাম বলিয়া গন্য হইবে।
বুদ্ধিজীবি ও বিশেষজ্ঞ:
এ সময় সকল বুদ্ধিজীবিদের জন্য মূখে লাগাম দেওয়া হারাম বলিয়া গন্য হইবে। কবিরাজ মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত বিভিন্ন কবিরাজদের অতীত ইতিহাস ও নিখোজ ব্যক্তির সন্ধান দাতা হিসেবে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিশ্লেষণপূর্বক কলাম লিখবেন। কোনভাবে লাগাম আটকে গেলে তা পাচ সেকেন্ডের মধ্যে খুলে ফেলতে হইবে।
বিচারকগণ:
নিখোজ ব্যক্তির সন্ধান পরবর্তী রায় সম্পর্কে তারা তাদের বুদ্ধি/জ্ঞানের শান দিতে থাকবেন।
পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্বীয় মুখের নির্দিষ্ট স্থানে হাত রেখে ঝিমাতে ঝিমাতে ঐ খানে কালচে দাগ বানিয়ে ফেলবেন, যা সকল আদালতে সত্য বলিয়া গন্য হইবে।
কবি-সাহিত্যিক-লেখক-শিল্পী:
এই সময় তারা বিভিন্ন ছড়া, কবিতা, উপন্যাস, গল্প লিখবেন যা হারানো ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনদেরকে আকৃষ্ট করবে ও পেয়ে হারানোর বেদনা ভুলতে সহায়ক হবে। তবে এক্ষেত্রে তাদের মুখে লাগাম দেওয়া একান্তভাবে বর্জনীয়।
সিনেমা ও নাট্যপরিচালকগণ:
সিনেমা ও নাট্যপরিচালকগণ এ সময় "খোজ দ্যা সার্স" চলচিত্রটিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এ ক্ষেত্রে সরকারী দল থেকে একজন নায়ক ও নায়িকা এবং বিরোধী দল থেকে একজন নায়ক ও একজন নায়িকা নিয়োগ করবে।
সরকারী দলের নায়ক জুটি বাধবে বিরোধী দলীয় নায়িকার সাথে, আর বিরোধী দলীয় নায়ক জুটি বাধবেন সরকারী দলের নায়িকার সাথে। "খোজ দ্যা সার্স"টি ফিল্ম আকারে সারা দেশের সিনেমা হলে একযোগে চলবে। আর নাট্যরূপটি দেশের সকল টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে। নিখোজ ব্যক্তির শোক ও স্মৃতি ভুলাতে উক্ত নাটক সিনেমা প্রদর্শন করে তারা জনগণের চোখে ধান্ধা লাগিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে।
উপসংহার:
উল্লিখিত আলোচনা হতে বুঝা যায় যে, আগামি দিনে কেউ হারানো গেলে বিকল্প এই পদ্ধতিতে খুজে বের করা সম্ভব্ তার জন্য প্রয়োজন সকলের আন্তরিকতা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতামূলকৈ আচরণ ও কবিরাজ মন্ত্রণালয় নির্দেশিত পথে একটি নির্দিষ্ট সময় পার করা।
২৯-৪-২০১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।