আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্ধেক জীবিত অর্ধেক মৃত

সময়ের সাথে...... লিমনের কাটা পা মানবাধিকারের পঙ্গুত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এখন নিখোঁজ ইলিয়াস আলী হয়ে উঠছেন সত্য ও ভরসার গুম হওয়ার প্রতীক। দেশটা হয়ে পড়ছে প্রবাদকথিত সেই অন্ধকার ঘর, যেখানে লুকিয়ে আছে হুলো বিড়ালেরা। তাদের আলোয় আনা যাচ্ছে না। কিন্তু তাদের কাজের কুফল দেশসুদ্ধ সবাই ভোগ করছে।

কিংবা তারা বাইরেই বেরিয়ে পড়েছে, দিনদুপুরে নামাচ্ছে অন্ধকার। আমাদের সবাইকে ঢোকাচ্ছে সেই ঘরে, যেখানে মানুষ মরে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে, গুম হয়ে যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে না কিছুই। সত্যহীনতায় মানুষ চলতে পারে না। সরকার সত্য জানাবে, এমন ভরসা লোপ পাওয়ায় সত্যের সম্পূর্ণ বেসরকারীকরণ ঘটে গেছে।

ইলিয়াস আলীকে নিয়ে প্রচারিত অজস্র গুজবের ভেতর থেকে তাই মনমতো ‘সত্য’ বেছে নিচ্ছে মানুষ। সত্য জানার ও প্রতিষ্ঠা করার সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হলো রাষ্ট্র। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই আমলে জাতীয় গুরুত্ববহ কোনো ঘটনা সম্পর্কেই সরকার আমাদের ‘সত্য’ জানাতে পারেনি। তাহলে কি সত্যের ক্ষমতায় তারা ভীত। যে সরকার সত্যকে ভয় পায় বা গুম করে, মানুষ তাদের ভয় পাওয়া শুরু করে।

পাশাপাশি, এ রকম সরকারের পরিণতি নিয়েও আমাদের ভীত হওয়ার কারণ থেকে যায়। এ রকম সরকারকেই ‘অকার্যকর’ বলা হয়। মানুষের অধিকার রক্ষা এবং রাষ্ট্রের সুব্যবস্থাপনার দিক থেকে তাঁরা যতই অকার্যকর হোন, সমস্যা সৃষ্টির ব্যাপারে এই সরকার কিন্তু অতিকার্যকর। সেই অতিকার্যকারিতার ফলই আমরা এখন হাতেনাতে পাচ্ছি। দেশটাকে যেন ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বিরাট কালো ঘরে।

তার ভেতর ভীত মানুষেরা অপেক্ষা করছে, কখন কী ঘটে, কার ওপর ঘটে, কী আছে দেশের ভাগ্যে, এর পরে কী? এমন বাস্তবতা ডাচ পদার্থবিদ এরভিন শ্রয়েডিংগারের বদ্ধ ঘরে বন্দী বিড়াল পরীক্ষার কথা মনে করায়। অন্ধকার ঘরে স্টিলের খাঁচায় একটি বিড়াল আর একটি ফাঁদ রাখা হয়। বিড়ালটির দুটি সম্ভাবনা, ফাঁদে পড়ে সে মারাও যেতে পারে, আবার ফাঁদ থেকে দূরে থেকে বেঁচেও যেতে পারে। অঙ্কের হিসাবে একেই বলে ফিফটি-ফিফটি সম্ভাবনা। অর্থাৎ বিড়ালটা অর্ধেক জীবিত, অর্ধেক মৃত।

গুম, রহস্যজনক মৃত্যু আর বেওয়ারিশ লাশ হওয়ার এই বাস্তবতায় এভাবে আমরাও শ্রয়েডিংগারের বিড়ালের মতোই অর্ধেক জীবিত অর্ধেক মৃত। ব্যক্তি বা নাগরিকের জীবন এবং রাষ্ট্রীয় ভবিতব্য আজ একবিন্দুতে চলে এসেছে। এত মৃত্যু, এত অবিচার, এত মিথ্যা নিয়েবেশি দিন আমরা চলতে পারব না। এ রকম অবস্থায় সত্যই আমাদের সহায়। এই সহায় যদি আমরা না পাই তাহলে প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের মতো করেই বলতে হবে, ‘সত্যবাবু মারা গেছেন।

’ তিনি অবশ্য একা যাননি, সহমরণের পথে রাজনীতি তাঁর অনুগামীহয়েছে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.