আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার সোনার অর্ধেক বাংলা, আমি তোমায় অর্ধেক ভালবাসি

শিক্ষা যেখানে অসম্পূর্ণ, জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

আমার সোনার অর্ধেক বাংলা, আমি তোমায় অর্ধেক ভালবাসি চিরদিন তোমার অর্ধেক আকাশ, তোমার অর্ধেক বাতাস আমার অর্ধেক প্রাণে বাজায় অর্ধেক বাঁশি। । এটা একটা আক্ষেপ উক্তি। বরিশালে জন্ম নেয়া ভারতের বিশিষ্ট লেখক ২০০৫ সালে আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত মিহির সেনগুপ্তের বরিশাল আগমন উপলক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় বরিশালের এক কৃতি মুক্তিযোদ্ধা আক্ষেপ করে আজ উক্তিটি করেছেন।

তিনি আমাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে না, রবীন্দ্রনাথের গান হিসেবে উপরোক্ত উক্তিটি করেছেন। তিনি বলেছেন "১৯৪৭ এর পরে রবীন্দ্রনাথ যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো তাঁর 'আমার সোনার বাংলা গানটিকে আবার এভাবেই লিখতেন। " কী হলে কী হতো আর কী হলে কী হতো না, তা এখন বলাটা একেবারেই অর্থহীন। সত্য হলো আমরা বাঙালী থেকে বাংলাদেশী হয়েছিলাম, শুনেছি আবার বাঙালী হয়েছি। সে বাঙালীত্বও কতদিন স্থায়ী হবে তা বলা যাচ্ছে না।

যে ভাষাতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক ঐক্যকে মনে ধারণ করে আজও আমাদের প্রবীণ ব্যক্তিরা স্মৃতিকাতর হন তার কোনই মূল্য নেই এখন আর। দুদেশের সংস্কৃতির মাঝে আজ কাটাতারের স্থায়ী দেয়াল। মেশিনগান হাতে সংস্কৃতিকে পাহারা দেয় সীমান্তরক্ষীরা। ইংরেজ সরকার বাঙালীর ভাষাতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক ঐক্যকে বিভাজন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে অনেক পূর্ব থেকেই। বাংলা ছিল উপমহাদেশের ইংরেজ বিরোধী যে কোন আন্দোলনের সূতিকাগার।

কখনো কখনো আন্দোলন অন্য কোথাও থেকে শুরু হলেও তা বেগবান হতো বাংলা দিয়েই। তাই বাঙালীকে বিভাজন করার উদ্যোগ নিয়েছিল ইংরেজ সরকার। ১৯০৫ এ বাংলা ভেঙে যখন পূর্ব এবং পশ্চিমবংগ হলো, কিংবা ১৯৪৭ এ যখন ধর্মতাত্ত্বিক সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে পূর্বপাকিস্তান হলো তখনো আমাদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক বিভাজন অতটা ছিলনা বললেই চলে। '৪৭ পূর্ববর্তী বাঙালি মননে ধর্ম তার স্বরূপে কখনোই প্রকট রূপ ধারণ করেনি। তখনকার সময়ে ভারতের অনেক রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতা যতটা প্রকট ছিলো বাংলা ছিল তার থেকে অনেক ব্যতিক্রম।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) ছিল পশ্চিমবঙ্গের চেয়েও এগিয়ে। দেশবিভাজনকালীন পশ্চিমবংগ যতটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ তা করেনি। আজ আমাদের এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সংস্কৃতিতে অনেক ব্যবধান তৈরী হয়েছে। পশ্চিমবংগে এখন চলছে বলিউডি সংস্কৃতির আগ্রাসন। ওদের সংস্কৃতিতে অতটা না হলেও আমাদের সংস্কৃতিতে ধর্ম এখন একটা বড় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

সংস্কৃতিতে ধর্মীয় ব্যবধানটা তৈরী করে দিয়েছে আমাদের রাষ্ট্র। দুদেশ থেকেই লৌকিক ঐতিহ্যকে বিলুপ্ত করা এবং অলৌকিকতাকে প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতা দেখা যায়। ভাষাতাত্ত্বিক বৈষম্যও দিনে দিনে বাড়ছে। বানান রীতি, ক্যালেন্ডারসহ অনেক সাংস্কৃতিক উপাদানে রয়েছে স্পষ্ট বৈষম্য। দুদেশের সাংস্কৃতিক বিভাজনকে আরো প্রকট করে তুলেছে দুদেশের প্রকাশক/পাঠকদের পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থান।

বাংলাদেশী প্রকাশকরা ভারতীয় প্রতিষ্ঠিত কোন লেখকের বই প্রকাশ করতে মুখ চেয়ে থাকে। বাংলাদেশী পাঠকদের মন ভরাতে ভারতীয় বইয়ের ফটোকপির অভাব নেই সারাদেশ জুড়ে। দেখেশুনে মনে হয়, বাংলাদেশী লেখক/কবিদের প্রোমোট করার চেয়ে এদেশী প্রকাশক/পাঠকরা ভারতীয় লেখকদের প্রোমোট করতেই পছন্দ করে বেশি। অন্যদিকে দেশপ্রেমের ধুয়া তুলে ভারতীয় প্রকাশকরা বাংলাদেশী লেখকদের বই ছাঁপাতে একেবারেই অনাগ্রহী। ভারতে বাংলাদেশী লেখকদের পাঠক নেই বললেই চলে।

অথচ সাহিত্যমান বিচারে সাহিত্যের কোন অংশেই বর্তমান বাংলাদেশী বাংলা সাহিত্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্যের চেয়ে কম এগিয়ে নেই। এর ফলে পশ্চিমবংগের সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা যতখানি জানতে পারছি আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে তারা রয়ে যাচ্ছে একেবারেই অন্ধকারে। বর্তমান বাংলাদেশী সংস্কৃতি সম্পর্কে তাদের অনেকেই মনগড়া চিত্র ধারণ করে আছে। তারপরও প্রবীণ ব্যক্তিরা স্মৃতিকাতর হবেনই। কারণ তারা চোখের সামনে দেখেছেন কিভাবে ধর্ম দিয়ে একটি জাতিগোষ্ঠিকে বিভাজনের মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতিকে বিভাজিত করা হয়েছে।

তারা চোখের সামনে দেখেছেন কিভাবে বিভাজনের মাধ্যমে একটি সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করার খেলা চলছে। তাদের আক্ষেপ থাকবেই কারণ তারা হয়তো উপলব্ধি করেন যে দুই বাংলা মিলে একটি দেশ হলে আমরা এভাবে সাংস্কৃতিক কাঙালীত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতাম না।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.