আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের লাকী ভাই

I'm your fool... Come on, teach me the rules" লাকীকে আমরা লাকী ভাই ডাকি তার ভাল্লুক ভাল্লুক কিউট ভাবটার জন্য। সে আসলে ভাই না, আপু। একদিন লাকী ভাইকে ডাইনিং হলে খালা সলিড মাংস দিলো। সে আবার সলিড মাংস খেতে পারে না। এজন্য খালাকে বললো ওটা বদলিয়ে তাকে যেন হাড়আলা মাংস দেয়া হয়।

ঐ সময় ওখানে ছিল এক জুনিয়র। সে সবসময়ই তাড়াহুড়ার মধ্যে থাকে। খুবই অস্থির একটা মেয়ে বলা যায়। সে লাকী ভাইকে তার ব্যাচমেট মনে করে বললো, তুমি ওটা না নিলে আমি নিয়ে নেই? এটাই ছিল ঐ জুনিয়রের অপরাধ। তুমি বলার অপরাধ।

এই অপরাধ অবশ্য আমাদের সাথে করলে আমরাও রাগ হই। কিন্তু ঠিক তখন, যখন কোনো জুনিয়র আমি যে সিনিয়র এটা জানার পরও কোনো রকম পার্মিশন না নিয়েই তুমি বলা শুরু করে। কিন্তু ঐ মেয়েটার দোষ ছিল না। সে লাকী ভাইকে তার ব্যাচমেট মনে করে তুমি বলে ফেলেছে। সিনিয়র জানলে তুমি বলতো না।

আর সব সিনিয়রদের সাথে যে ওরা পরিচিত হবে এরকম সময়ও তখন ওরা পায়নি। ইউনিতে তখন ওরা নতুন এসেছিল। লাকী ভাইয়েরও ব্যাপক সমস্যা আছে, সে কখনোই কোনো মিটিং-এ থাকে না। আমিও মিটিং-এ থাকিনা, তবে একবার হলেও মুখটা দেখিয়ে চলে আসি। মিটিং-এ যাবার কথা বললেই সে নেকো নেকো গলায় বলতো, আঁমাঁর পঁরীঁক্ষাঁ তোঁ... এরকম করতে থাকলে জুনিয়ররা তাকে চিনবে কি করে! আর তার চেহারাটা দেখলে মনে হবে সে এবার ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠেছে লাকী ভাইকে তুমি বলার সময় লাকী ভাই মনে করেছিল ও বোধহয় সিনিয়র আপু হবেন।

কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন জানতে পারলো ওটা একটা জুনিয়র মেয়ে তখন সে চূড়ান্ত রকমের হাওকাও লাগিয়ে দিলো। একটা মিটিং-ই ডেকে বসলো। সেখানে আমাদের ব্যাচের মেয়েরা আর ঐ জুনিয়রটা ছিল। এই টাইপ মিটিং-এ সাধারনত জুনিয়ররা খুব কান্নাকাটি করে থাকে। কারণ পুরো একটা ব্যাচের আপুদের ঝাড়ি খেয়ে হজম করা তো আর চারটি খানি কথা না! আমাদের ব্যাচে সেরকম ঝাড়ি দেয়ার কেউ নাই।

চার পাঁচজন ধমক দিলো। সবশেষে লাকী ভাই চ্যাঁওম্যাঁওচ্যাঁও করে হালকা কান্না কান্না গলা করে বলছিল, বুঝিছো তুমার চলাফিরা কিন্তু ভালু না। আমি তো তুমাকে দেখি ভয়ি পেয়ি গেছিলাম। কেন তুমাকে দেখি আমার এরাকম মুনে হবে? ভালুভাবে চলতি পারো না? আমরা সিনিয়র আপুদেরকি দেখলি মাথা নিচু করি করি হাঁটতাম। বুঝিছো তুমি এরাকম করো না আর.... মিটিং-এ যারা যারা ছিলাম, সবাই শুরুতে খুব সিরিয়াস মুডে ছিলাম, শেষে লাকী ভাইয়ের চ্যাওম্যাও শুনে প্রায়ই হাসিখুশি হয়ে যাচ্ছিলাম।

তার বলার ধরণটা এতোটাই মজার ছিল যে তা অভিনয় না করে বোঝানো সম্ভব না। কিন্তু লাকী ভাইয়ের ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে এবং পুরো ব্যাচের ভাবমূর্তি নষ্ট হবার ভয়ে সবার নিজেকে সামলিয়ে নিতে হয়েছে লাকী ভাইয়ের জন্য এরকম ঘটনা নতুন না। সে প্রায়ই জুনিয়রদেরকে সিনিয়র মনে করে। পরে যখন জানতে পারে তখন সে চ্যাওম্যাওচ্যাও করে বলে, উরি আল্লা! আমি তো তুমাকে দেখি ভয় পেয়ি গেছিলাম! লাকী ভাইকে একবার আমি আর আনিকা RAG দিয়েছিলাম। অবশ্য আমি RAG দিয়েছি বললে ভুল হবে।

আমি শুধু একটু তাল দিয়েছি। যা করার আনিকাই করেছিল। একদিন আমি আর আনিকা রিডিংরুম ফাঁকা থাকায় গল্প করছিলাম। হঠাত সেখানে গিয়ে লাকী ভাই খুবই অসহায়ের মতো ভাব করে বিকট চিতকার দিয়ে পড়তে লাগলো। আমরা দুইজনই বেশ অবাক হলাম।

তবে গল্প চালিয়ে যেতে লাগলাম আস্তে আস্তে। কিছুক্ষণ পর লাকী ভাই বই থেকে মুখ উঠিয়ে আনিকার দিকে ইশারা করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, এটা কে রে? আমি বললাম, আরে ইনি তো আমাদের ডেপ্টেরই! ফোর্থ ইয়ারের আপু। এই হলেরই তো। চিনিস না? লাকী ভাই তখন চেয়ারে হেলান দিয়ে খুবই অবাক হয়ে গেছে টাইপ ভাব করে বলতে লাগলো, আমাদের হলের! আগে তো দেখিনি! আনিকার তখন চুলের অবস্থা ছিল শকলাগা শকলাগা চরম ভয়ংকর। আর তার এ্যাটিটিউডই একটু আলাদা শক লাগা চুল নিয়ে সে একটা মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে বললো, কোন ডিপার্টমেন্ট তুমি? সিনিয়ার ভাইয়া আপুদের সাথে পরিচিত হবার সময় সালাম দিতে হয় জানোনা না হয় মানলাম।

আপনি করে যে বলতে হয় এটাও কি জানো না? আমি দাঁড়িয়ে আছি আর তুমি বসে বসে কথা বলছো! এইটুকু ভদ্রতাও শেখো নাই? লাকী ভাই প্রায়ই কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, ভুল হয়ে গেছলো আপু আমার। মাফ করে দেন। আমার একটু মায়া লাগলো কারণ এতোটা সিরিয়াস কিছু হয়ে যাবে আমি ভাবিনি। আমি হাসতে হাসতেই বলে দিলাম, লাকী ভাই ও দুষ্টামী করছে। কিন্তু তারপরও সে ফুপাতে লাগলো।

আনিকা এতোটাই ফাজিল যে তারপরও তাকে ছাড়েনি। আরো জোরে মাথা ঝাকুনি দিয়ে বললো, এই মেয়ে আমি কি এমন বলেছি যে তুমি ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলে? ন্যাকামি করবা ভাইয়াদের কাছে। ভাইয়ারা ন্যাকামি খুবই পছন্দ করে। আপুদের কাছে ন্যাকামি করো না। এই ঘটনার পর লাকী ভাই আনিকাকে দুই চোখে দেখতে পারেনা।

যদিও প্রমিজ করেছিলাম যে এই ঘটনা কাউকে বলবো না, কিন্তু সেই প্রমিজ আর রাখা গেল না একটা বিশেষ কারণে আরেকদিন সকালবেলায় ক্যান্টিনে নাস্তার সময় লাকী ভাই পরোটা নিচ্ছিলো। পাশে ছিলাম আমি আর আরেকটা জুনিয়র। পরোটার তেল শুষে নিতে প্লেটের উপর আর পরোটার তলায় একটা পেপার দেয়া হয়। পুরানো খবরের কাগজ আরকি। ওটা টিস্যু পেপারের পরিবর্তে দেয়া হয়।

সেই পেপারটা লাকী ভাইয়ের প্লেট থেকে টান দিয়ে নিয়ে ঐ জুনিয়র জোরে জোরে পড়তে লাগলো। আমি তো অবস্থা দেখে অবাক। আর লাকী ভাই হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। তারপর রাগে গজরাতে গজরাতে খাবারের কাউন্টারে প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে ক্যান্টিরের ছেলেটাকে বললো, এই পরোটা আমি খাবো না! ছেলেটা ঐ জুনিয়রটাকে বললো, তাহলে আপনি নেন? সেও রাগে চোটপাট দেখিয়ে বললো, ঐ ঠান্ডা পরোটা আমিও খাবো না! লাকী ভাই চিল্লিয়ে উঠে বললো, তাহলে ঐ কাগজ তুমি কেন সরাইলা? জুনিয়রটা বললো, কারণ ওখানে একটা ইমপর্টেন্ট নিউজ ছিল। লাকী ভাই বললো, ঐ ইমপর্টেন্ট নিউজের সাথে তুমি ঐ পরোটা খাবা সেই বেয়াদবও সমানে চিল্লাতে লাগলো যে সে ঠান্ডা পরোটা খাবে না।

আমি পরোটা নিতে গেলে লাকী ভাই বাঁধা দিয়ে বললো, তুই কেন খাবি! ও নষ্ট করেছে ওটা! ও খাবে! আমি বললাম, আমার সময় নেই। পরীক্ষা আছে। আমার উচিত ছিল একটা ঝাড়ি মারা। কিন্তু মারতে পারলাম না। কড়া দৃষ্টিতে কটমট করে তাকালাম।

খেতে বসলাম আর ভাবলাম, এখন ঠান্ডা পরোটা খেলি না! কিন্তু কয়দিন পর বাধ্য হয়ে পচা পরোটাও খাবি! হলে থাকলে সবই খেতে হবে! আমি বুঝলাম না যে, পড়ার জিনিসের তার এতোই অভাব পড়লো যে তার ঐ কাগজ নিয়ে পড়তে বসতে হলো! পড়বি তো পড়, পড়তে গেলি লাকী ভাইয়ের প্লেট থেকে নিয়ে! লাকী ভাইয়ের সাথেই কেন বারবার এমন হয়! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.