রাজা
‘ইহুদী-খ্রিস্টানদের চালুকৃত বচন, ‘লাকী সেভেন আনলাকী থারটিন সত্য নয়। বরং সেক্ষেত্রে লাকী থারটিন আনলাকী সেভেনই সত্য। ’
লাকী সেভেনবাদীরা গত বছর জুলাইয়ের ৭ তারিখে ৩টি ৭ এক সাথে পাওয়ায় অর্থাৎ ০৭.০৭.০৭ ঈসায়ী তারিখে ৭ প্রেমী হিসেবে উচ্ছ্বল হয়ে পড়ে। এই দিনে বিয়ের হিড়িক লেগে যায়। এমনকি অনেক সন্তানসম্ভবা মা’রাও এদিনে ডেলিভারী করাতে চান।
নানা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইহুদী-খ্রিস্টানদের কাছে ‘সাত’ সংখ্যাটি সমাদৃত। ইহুদীদের কাছে সাত সংখ্যাটি সমাদৃত হওয়ার কারণ হলো- ১. তাদের কথিত ‘গড’ সপ্তম দিনকে পবিত্র করে সেদিনে বিশ্রাম গ্রহণ করেন। হিব্রু ভাষায় যা সাবাথ নামে পরিচিত। ২. তাদের দৃষ্টিতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য সাত দিনের প্রয়োজন। ৩. তাদের স্যাবাটিক্যাল প্রতি সাত বছরে একবার আগমন করে।
৪. তাদের জুবিলী বৎসর সাত বার সত্তর বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর আগমন করে। ৫. তাদের তাওরাত শরীফ-এ সাত বার ও সাত সপ্তাহের কথা বলা হয়েছে। ৬. ইহুদীদের বিয়ে অনুষ্ঠানে সাতটি স্ত্রোত্ববাক্য পাঠ করা হয়ে থাকে। ৭. তাদের বিয়ের পর সাতদিন উৎসব পালিত হতো। ৮. তাদের কাছে সাত জন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।
যথা (ক) হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস্ সালাম, (খ) হযরত ইসহাক আলাইহিস্্ সালাম, (গ) হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্্ সালাম, (ঘ) হযরত মুসা আলাইহিস্্ সালাম, (ঙ) হযরত হারুন আলাইহিস্ সালাম, (চ) হযরত দাউদ আলাইহিস্্ সালাম। (ছ) হযরত ইউসুফ আলাইহিস্্ সালাম। (৯) তাদের কথিত ‘গড’ ইহুদীদেরকে বলেন যে, তোমরা যখন ইসরাঈলে প্রবেশ করবে তখন সাতটি জাতিকে স্থানচ্যুত করবে, যথা- (ক) হিট্টি, (খ) গিরগেসাইট, (গ) অ্যামোরাইট, (ঘ) ক্যানানাইট, (ঙ) পেরিজাইট, (চ) হিভাইট এবং (ছ) জেবুসাইট। (১০) তাদের প্রথানুযায়ী মুখম-লের সাতটি গহব্বর, দু’চোখ, দু’নাসারন্ধ, দু’কান এবং মুখকে বলা হয় সপ্তপ্রদীপ। (১১) তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিতে সাত শাখা বিশিষ্ট ঝাড়বাতি জ্বালানো হয়।
(১২) ১৯৪৭ সালের সপ্তম মাসের সপ্তম দিনে ইউরোপীয় ইহুদীরা অ্যাক্সোডাস জাহাজে ফ্রান্স থেকে ইসরাঈলের উদ্দেশ্যে পাড়ী জমিয়েছিলো
ইহুদীদের পাশাপাশি খ্রিস্ট ধর্মীয় তত্ত্বেও সাত সংখ্যাটি সমাদৃত ও সম্মানিত।
(১) খ্রিস্টানদের কাছে সাত সংখ্যাটি সপ্ত মানবগুণ সংখ্যা নিদর্শক। যথা- সতীত্ব, সংযম, বদান্যতা, পরহিতকরণ, ধৈর্যশীলতা, উদ্দীপনা, নম্রতা। (২) তাদের কথিত যিশু বলেছিলো, পিটারের উচিত, সে ব্যক্তিকে ক্ষমা করা, যে তার বিরুদ্ধে সত্তর বার সাতটি গুনাহ করে। (৩) তাদের দৃষ্টিতে ভয়াবহ পাপের সংখ্যা সাত।
(৪) প্রতিটি ভয়াবহ পাপের জন্য পারগ্যাটোরী পর্বতে রয়েছে সাতটি বেদী। (৫) নিউ টেস্টামেন্টে ‘ম্যাথিউ এর গসপেল’ (১৮ঃ২১) অধ্যায়ে পিটারের প্রতি কথিত যিশুর নির্দেশ ছিলো, সাত বার করে সত্তর বার ক্ষমা করার। (৬) তাদের মতে হযরত মরিয়ম আলাইহাস্্ সালাম-এর জন্য সাতটি আনন্দ ছিল। যথা- (ক) পুনর্জন্ম, (খ) রাহেব বা পাদ্রি কর্তৃক দর্শন, (গ) যিশুর জন্ম যিশুর জন্য নৈবদ্য আনয়নকারী, (ঘ) পূর্ব দেশের তিন জ্ঞানী ব্যক্তি, (ঙ) জেরুজালেমের মন্দিরে যিশুপ্রাপ্তি, (চ) খ্রিস্টের পুনরুত্থান, (ছ) হযরত মরিয়ম আলাইহাস্ সালাম-এর জান্নাতে প্রবেশ।
রোমান ক্যাথলিজমে হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম-এর সাতটি শোক বিষয় ছিলো, (ক) সাইমন-এর ভবিষ্যৎ কথন, (খ) মিশরাভ্যন্তরে উড্ডয়ন, (গ) যিশু খ্রিস্টের জেরুজালেম মন্দিরে হারানো তিন দিন, (ঘ) যিশুর ক্রুশ বহন, (ঙ) ক্রুশে যিশুকে বিদ্ধকরণ, (চ) মৃত যিশু কোলে মেরীর মূর্তি (নাঊযুবিল্লাহ) (ছ) যিশুর তথাকথিত পুণ্য সমাধির যবনিকা পাতন।
(নাঊযুবিল্লাহ)
লিউক-এর গসপেল অনুযায়ী যিশুর পথ ৭৭ তম সরল পথ।
উপরোক্ত তথ্য বর্ণনা সাপেক্ষে ইহুদী-খ্রিস্টানরা ‘সাত’কে অধিক মূল্যায়ন করে থাকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিষয় সম্পৃক্ত থাকার ফলেই। কিন্তু এ সবকিছুর মূল যে কথা তা হলো, তাদের কথিত ‘গড’ এর প্রথম অক্ষর ‘জি’-এর অবস্থান ইংরেজী বর্ণের ক্রমিক অনুযায়ী সপ্তম। পক্ষান্তরে আনলাকী থারটিন বলার পিছনে কারণ হলো, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক অর্থাৎ মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদ্যাক্ষর ‘এম’ হলো ইংরেজী ১৩ তম বর্ণ। এটাই তাদের লাকী সেভেন এবং আনলাকী থারটিন-এর মূল রহস্য।
সংখ্যা হিসেবে ৭-এর প্রতি কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু ইহুদী-নাছারারা যে অর্থে তাকে লাকী বলে, সেদিক থেকে ৭ই আনলাকী এবং ১৩ই লাকী। কারণ, ৭ হলো ওদের গড-এর ‘জি’ সাথে সম্পৃক্ত। উল্লেখ্য, গডে বিশ্বাস করার অর্থ হলো শিরক করা। কারণ, ‘গড’ এর রয়েছে গডেস।
এতে আল্লাহ পাক-এর সাথে শরিক করা হয়। যে শিরক করবে সে জাহান্নামী হবে। আর জাহান্নামী হওয়াটাই ‘আনলাকী’ বা কুভাগ্য তথা বদনছীবের বিষয়।
এবং ১৩ হলো ‘এম’ বা নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের সাথে সম্পৃক্ত সংখ্যা।
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মান করা আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যিনি সম্মান করবেন তিনি জান্নাতী হবেন। আর জান্নাতী হওয়া হলো সৌভাগ্যের লক্ষণ। সে হিসেবে ‘এম’ এর নাম্বার বা ১৩ তম সংখ্যাকে সম্মান ও মুহব্বত করা সৌভাগ্য বা লাকী হওয়ার বিষয়।
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনার্থেই ইহুদী-নাছারাদের প্লেনে, রেলে, জাহাজে, হোটেলে ১৩ নম্বর কোন সিট বা রুম রাখে না। এর মূল হলো, ইংরেজী ‘এম’ এর নাম্বারের প্রতি তাদের বিদ্বেষ।
ইহুদী-নাছারারা খুব সূক্ষ্মভাবে মুসলমানদের দ্বারাই ইসলামী বিষয়গুলোর অবমাননা করিয়ে নিচ্ছে। মুসলমানরা গাফিল ও অজ্ঞ থাকায় তা বুঝছে না।
বলেছেন
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।