ইদানিং Cool Generation যুগ চলিতেছে। চারিদিকে Cool-এর ছড়াছড়ি। Cool গাই এবং গ্যলদের কোন কিছুই আর ভালো লাগিতেছে না, সব কিছুই Cool Cool লাগিতেছে। আমার অষ্টম বর্ষীয়া কন্যার সহিত কিছুদিন আগে সঙ্গীত লইয়া আলাপন হইতেছিল। কথা প্রসঙ্গে সে আমাকে জানাইয়া দিল Michael Jackson-এর সে একজন fan।
আমি কহিলাম তাহার সঙ্গীত তোমার ভালো লাগে? সে স্পষ্ট জানাইয়া দিল He is so cool! আবহাওয়া তেমন গরম না হইলেও কুল কুল করিয়া ঘাম গোসল দিতে হইল!! বিষয়টা মোটেই Cool বোধ হইল না।
যাই হউক, আমাদের কালে সব কিছুই ভালো লাগিত। অধিক ভালো লাগিলে কেহ জানাইতে কসুর করিতাম না “দারুন” – দারুন খেলা, দারুন স্বাদ, দারুন পোশাক, আর চোখের দেখা? সেতো ছিল ‘কি দারুন দেখতে’!
সেই কালে Cool Generation-এর ন্যায় আমরা নগদে কোন পয়সা-কড়ি তেমন একটা পাইতাম না। কালে ভদ্রে সিকি-আধুলি জুটিত; পাঁচ পয়সা এবং দশ পয়সার কদর ছিল। ইহাও মনে করিতে পারি টাকার মূল এককটি তখনও পুরোপুরি হারাইয়া যায় নাই।
জ্বী হ্যাঁ, আমি এক পয়সার কথাই কহিতেছি। কয়েকটি এক পয়সা জমাইয়া নগদে দোকানে যাইয়া রঙ-বেরঙের বুনবুনি খরিদ করিয়া চক্ষু এবং জিহ্বার রসনা মিটাইয়াছি। সেই রসনার স্বাদ হাল আমলের Cool Generation কিরূপে Gems-এর ভিতরে পাইবে?
সেই কালে পাঁচ পয়সার আইসক্রীমটি রঙ্গীন ছিল। কিন্তু বেশী বিকাইত দশ পয়সার সাদা আইসক্রীম; ইহা ছিল অধিক শক্ত, সহজেই গলিয়া পড়িয়া পয়সা নষ্টের কারণ হইত না। বোধকরি ইহাতে স্যাকারিন নামক বস্তুটির মাত্রাও ছিল কম, ফলে স্বাদটি তেতো মিশ্রিত ছিল না।
২৫ পয়সা দিয়া দুধমালাই আইসক্রীমটি মাঝে মধ্যে খরিদ করিবার সামর্থ্য হইত। একবার দুধমালাই আইসক্রীমটি খরিদ করিবার পর দৌড়াদৌড়ি খেলিবার জন্য ডাক পড়িলে, হাতে আইসক্রীম লইয়া দৌড়াইয়া জুত পাইতেছিলাম না। দৌড়ের গতি বৃদ্ধির জন্য দৌড়াইতে দৌড়াইতে হস্তের অর্ধেক মাত্র আস্বাদিত কিংবদন্তীতুল্য আইসক্রীমটি ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়াছিলাম। তাহাতে যেরূপ বীরত্ব অনুভব করিয়াছিলাম সেই চিন্তা করিলে আমার শার্টের কলার এখনও ভাঁজ খুলিয়া খাড়া হইয়া যায়।
মূল বক্তব্যে আসি।
তালেব আলীর (তাহার সম্বন্ধে এখানে কিছু বলা হইয়াছে Click This Link) জমিজমার এক প্রান্ত শেষ হইয়াছিল ৪ নম্বর রোড বরাবর। সেই ৪ নম্বর রোডের এক প্রান্তে ছোট পরিসরে একটি ত্রিভুজাকৃতির দোকান ছিল। দোকানটির কোন কালেই বিক্রি-বাট্টার পসার ছিল না। কিন্তু সেইখানেই বস্তুটি পাওয়া যাইত। আমি সেও গুট্টু কালে নিত্যদিনের বৈকালিক ভ্রমণে উক্ত দোকানের সম্মুখ দিয়া গমনাগমন করিতাম আর চাহিয়া চাহিয়া দেখিতাম! জ্বী, ঠিকই ধরিয়াছেন! দেখিতাম কাচের বয়ামে রাখা বড় বড় ‘বাবর বিস্কিট’ যার একটির নগদ মূল্য ছিল ১০ পয়সা।
বিস্কিট আর আমার চোখের পারস্পরিক দৃষ্টি আদান-প্রদানে মাঝে মাঝেই আমি ইহার স্বাদ আস্বাদন করিতাম। ইহা মনে করিবার কোন কারণ নাই যে বিস্কিটটির স্বাদ দারুন কিছু ছিল। বরং ১০ পয়সায় উক্ত আকৃতির বিস্কিট সহসাই পাওয়া যাইত না, ইহাই ছিল বিশেষত্ব।
ঘটনাক্রমে একদিন আমি পুরোদস্তর একটি টাকার মালিক। বৈকালিক ভ্রমণে পাঠশালার মাঠে গিয়াছি, উদ্দেশ্য যথারীতি ঘুরাঘুরি; খেলাধূলায় মন, আগ্রহ, দক্ষতা কোন কিছুই ছিল না।
এক বন্ধুবর আমার নিকট কিছু পয়সাও পাইত, তাহাকেও পয়সা ফিরাইয়া দিয়া ঋণ হইতে মুক্ত হইবার বাসনাও মনে মনে পোষণ করিতেছিলাম।
সেই ক্ষণে নিজেকে আবিষ্কার করিলাম ত্রিভুজাকৃতির দোকানের সম্মুখে এবং বাবর বিস্কিট যথারীতি আমার দিকে ন্যাক্কারজনকভাবে চাহিয়া আছে! প্রেমিকও বোধকরি প্রেমিকার সহিত এইরূপ ছ্যাবলামী করে না। ঋণদাতা বন্ধুকেও সেই স্থলেই পাওয়া গেল। কিন্তু তাহাকে তাহার পয়সা ফিরাইয়া দিয়া ঋণমুক্ত হইতে চাহিতেছি শুনিয়া তাহার সেকি অট্টহাসি! আমি বুঝিতে অক্ষম হইলাম ইহাতে হাসির কি আছে? ইহা মোটেই Cool ছিল না!
যাই হউক, বন্ধু স্থান ত্যাগ করিলে আমার হুশ হইল। পুরো একখানা টাকা দিয়া দশখানা বাবর বিস্কিট কিনিয়া দুই পকেট ভরিয়া ফেলিলাম।
নিজেকে রাজা বোধ হইল। পৃথিবীতে সহসাই এমন কর্ম সংঘটিত হয় না। ইহা ছিল এক দারুন অনুভূতি! হস্তে একখানা বিস্কিট লইয়া দিলাম একটা কামড় বসাইয়া।
অদ্যকার যুগের Cool Generation-এর গাই এবং গ্যলেরা এখন নানবিধ Cookie খায় বটে, ইহাদের মূল্যটিও অনুমান করিতে কষ্ট হয় না। আমি ইহাও অনুমান করিতে পারি এই সমস্ত Cookie খাইতে খাইতে তাহারা সহসাই তাহাদের Coolness হারাইয়া ফেলে এবং Bored হইয়া নতুন Cool কিছুর অনুসন্ধান করে।
কিন্তু সেই কালের স্বাদবিহীন ১০ পয়সার বাবর বিস্কিটের মাঝে যে দারুন অনুভূতি এবং আবেগ ছিল তাহা আজও আমার হৃদয়ে জাগ্ররুক আছে কোনরূপ Coolness ছাড়াই। এই Cool Generation-কে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিতেছি, পারিলে তোমরা এমন একখানা বাবর বিস্কিট বা অন্যকিছু লইয়া আস যাহা দুই দিন বাদেই Coolness হারাইয়া Boredom আনে না।
আছে কেহ, এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করিবে?
সিঙ্গাপুর
এপ্রিল ১৩, ২০১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।