সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুকের অনুমোদনক্রমে এনএসআইকে বাদ দিয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সিআইডির তৎকালীন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ফররুখ আহমেদ চৌধুরী এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমানের আদালতে গতকাল বিকেলে সাক্ষ্য দেন ওই ঘটনায় গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটির সদস্য ফররুখ আহমেদ। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়েছে। এর আগে সকালে আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আরেক সাক্ষী পুলিশের বিশেষ শাখার তৎকালীন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও সরকারি তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব মো. শামসুল ইসলামকে জেরা করেন।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ফররুখ আহমেদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে স্বরাষ্ট্রসচিবের অনুমোদন নিয়ে এনএসআইকে বাদ দিয়ে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ’ ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল দিবাগত রাতে সিইউএফএলের জেটি ঘাটে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের সরকারি তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক। ওই কমিটির সদস্য ছিলেন ফররুখ আহমেদ।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যের শেষ পর্যায়ে ফররুখ আহমেদ বলেন, ‘কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কয়েক দিন পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কবির উদ্দিন আমাকে টেলিফোন করেন।
তিনি আমাকে জানান, শুধু চট্টগ্রামের নয়, এনএসআইয়ের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) ঢাকার সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ’ সাক্ষ্যের শুরুতে ফররুখ আহমেদ বলেন, ‘২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাটে কিছু অস্ত্র ধরা পড়ে। আমি পরদিন ২ এপ্রিল সকালে জানতে পারি। তখন আমি সিআইডির ডিআইজি পদে ঢাকা সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলাম। ’ তদন্তকালে পাঁচ সদস্যের সরকারি কমিটি চট্টগ্রাম সেনানিবাস পরিদর্শন করে জানিয়ে সাক্ষ্যে ফররুখ আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অস্ত্রগুলো পরিদর্শন করি এবং জিওসি মইন উ আহমেদের সঙ্গে দেখা করি।
আলোচনার একপর্যায়ে জিওসিকে জিজ্ঞেস করি, অস্ত্রগুলোর গন্তব্যস্থল পার্বত্য চট্টগ্রাম বা অন্য কোথাও ছিল কি না। তিনি (জিওসি) এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি। ’ ২০০৪ সালের ৫ থেকে ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামে অবস্থান শেষে ৮ এপ্রিল ঢাকা ফিরে যান বলে ফররুখ আহমেদ আদালতে জানান। তিনি সাক্ষ্যে বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার আগে সিআইডির এএসপি কবির উদ্দিনকে এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলি। ’ সাক্ষ্যে ফররুখ আহমেদ আরও বলেন, ‘এএসপি কবির উদ্দিন কয়েক দিন পর আমাকে টেলিফোনে জানায়, এনএসআইয়ের ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান এবং চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান ১০ ট্রাক ভাড়া করার ব্যাপারে জড়িত ছিল বলে সে (কবির উদ্দিন) জানতে পেরেছে।
কবির জানায়, হাফিজ পলাতক। এ বিষয়ে আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে স্থানীয় এনএসআইকে রিকুইজিশন দিতে বলি। ’ এর কয়েক দিন পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি কবির উদ্দিন আবার টেলিফোন করেন জানিয়ে ফররুখ আহমেদ বলেন, ‘কবির জানায়, এনএসআই এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে না এবং আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপস্থাপন করছে না। কবির আরও জানান, মেজর লিয়াকত (এনএসআইয়ের তৎকালীন উপপরিচালক) দায়িত্বে আছেন। সন্দেহ হয় মেজর লিয়াকত মাঠ কর্মকর্তা আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপস্থাপন করছেন না।
’ এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন বলে ফররুখ আদালতকে জানান। সাক্ষ্যে তিনি বলেন, ‘তিনি (বাবর) বলেন, “অনেক কিছুতেই জাতীয় স্বার্থ (ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট) জড়িত থাকে। সে কারণে আমাদের বুঝেশুনে কাজ করতে হবে। খোঁজ নিয়ে দেখেন ১৯৯৬ সালে এ রকম ট্রলারভর্তি অস্ত্র কক্সবাজারে ধরা পড়েছিল। কোনো মামলাও হয়নি।
স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর (স্বরাষ্ট্রসচিব) পরামর্শ মতে কাজ করুন। ”’ প্রতিবেদন তৈরির পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক কমিটির সদস্যদের ডেকেছিলেন বলে উল্লেখ করেন ফররুখ আহমেদ। তিনি আদালতে বলেন, ‘আমরা সবাই একত্র হয়ে প্রতিবেদনের ব্যাপারে আলোচনা করি। ওই সময় একপর্যায়ে কমিটির সদস্য এনএসআইয়ের পরিচালক এনামুর রহমান চৌধুরী বলেন, “সিআইডি আকবর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুঁজছে।
এ বিষয়টি কি আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করব?”’ এ প্রসঙ্গে ফররুখ আদালতে বলেন, ‘কমিটির আরেক সদস্য শামসুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামের এনএসআই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তাঁর কাছেও কিছু তথ্য আছে। ওই আলোচনায় উপস্থিত স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করে দেখবে বলে প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করতে বাধা দেন। তাঁদের বাধার কারণে বিষয়টি প্রতিবেদনে আসেনি। আলোচনার পর স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক ও রেজ্জাকুল হায়দার প্রতিবেদনে সই করেন। এরপর আমরাও তাতে সই করি।
’
এর আগে গতকাল দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আরেক সাক্ষী পুলিশের বিশেষ শাখার তৎকালীন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শামসুল ইসলামের জেরা শুরু হয়। বেলা দুইটায় তাঁর জেরা শেষ হয়। মধ্যাহ্ন বিরতির পর বিকেল সাড়ে তিনটায় ফররুখ আহমেদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে গতকাল সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১০ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।