কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম গত ১৮ এপ্রিলের কথা। সন্ধ্যার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টিতে একটি হার্ডওয়্যার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কারণ- হঠাৎ শুরু হওয়া বৃষ্টি। কিছুক্ষণ পর একটা মিরপুর রুটের বাস সামনের রাস্তায় এসে থামল। বাস থেকে সমুদ্রজয়ী (!) শেখ হাসিনাকে সম্বর্ধনা দিয়ে ফেরা যুবলীগের নেতাকর্মীরা (আসলে অল্প বয়সী মিরপুরের উঠতি সন্ত্রাসী গ্রুপ) ধুদ্ধার নামতে শুরু করল।
বৃষ্টি তখন বেশ জোরেই হচ্ছিল। বাসের সামনে ছিল একটা আখের রস বিক্রেতার ঠেলাগাড়ি। ঠেলাগাড়িতে রস তৈরির জন্য কিছু আখ 'ছিলে' রাখা ছিল। এক 'সোনার ছেলে' কোন কথা নাই- একটা আখ টেনে নিয়ে বের করে নিল। পাশের দোকানে দাঁড়ানো আখের রস বিক্রেতা ছেলেটি সেটা দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে আখটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করল।
ব্যস! আর যায় কোথায়! এত সাহস!- সোনার ছেলেদের কাজে বাধা! শুরু হল মাইর! চার পাঁচজন মিলে একটা ছেলেকে তারই আখ দিয়ে মারতে শুরু করল। কোত্থেকে এক মহিলা ছুটে এসে ছেলেটি বাঁচানোর চেষ্টা করল! সোনার ছেলেদের কাছে হাতজোড় করে মাফ চাইল। বুঝলাম- মহিলাটি বিক্রেতা ছেলেটির মা। কিন্তু সোনার ছেলেরা একেকজন রাজপথের লড়াকু সৈনিক! বিশ্বজয়ী বীর! ৪/৫ জন মিলে একটা নিরীহ ছেলেকে পরম সুখে 'ধোলাই' করতে লাগল। সেই মাইর থেকে ছেলেটির মা-ও বাদ গেল না।
মারতে মারতে ছেলেটিকে একটি দাঁড় করিয়ে রাখা মটর সাইকেলের উপর ফেলে দিল। ছেলেটি সাইকেলটিসহ মাটিতে পড়ে গেল। কাছেই একটা ফার্মেসিতে দাঁড়ানো মোটরসাইকেলের মালিক হইহই করে উঠল। ফার্মেসীর সামনে দাঁড়ানো কয়েকজন সাধারণ মানুষ ও মোটর সাইকেলের মালিক এবার ঐ বৃষ্টির মধ্যেই ছেলেটি বাঁচানোর জন্য সোনার ছেলেদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করল। তাতে সোনার ছেলেরা একটু পিছু হটল!
দেখতে পেয়ে আশেপাশে বিভিন্ন দোকানের সামনে দাঁড়ানো বাকী সোনার ছেলেরা এবার একজোট হয়ে ঐ লোকগুলোর উপর চড়াও হল।
মোটর সাইকেল মালিক অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে এক দোকানের ভিতর ঢুকে পড়ল। এবার সবাই মিলে ঐ আখের রস বিক্রেতাকে টানাহেঁচড়া শুরু করল।
একটু পর সোনার ছেলেদের নেতা গোছের একটা এসে প্রথমে যেই সোনার ছেলে আখ টান দিয়েছিল- সেটাকে চড়থাপড় শুরু করল। অপরাধ 'মাইয়া মানুষের গায়ে হাত তুলছস ক্যান!' অর্থাৎ নিরীহ আখ বিক্রেতাকে মারা কোন অপরাধ নয়- তার মায়ের গায়ে হাত তোলাটাই একমাত্র অন্যায়!
কিছুক্ষণ পর সবগুলো ঐ জায়গা ছেড়ে চলে গেল। ততক্ষণে অবশ্য বৃষ্টিও কিছুটা কমে এসেছে।
আমিও কাজ শেষ করে চলে এলাম।
সোনার ছেলেদের এমন বীরত্বে ক্ষমতাসীন দলের নেতানেত্রীরা গর্ব করতে পারেন নিঃসন্দেহে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।