আমি জাতির আধার রাতের আলো...
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে ছিটমহল সমস্যা দীর্ঘ প্রায় ৬৫ বছর ধরে ঝুলে আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান সমস্যাগুলোর মধ্যে ছিটমহল সমস্যাটি প্রকট ও চিহ্নিত সমস্যাগুলোর অন্যতম। ছিটমহলের মালিক বাংলাদেশ না ভারত তা নির্ধারণেই বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে। অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এসব ছিটমহলকে ঘিরে। ছিটমহলবাসীর কোন ভোটাধিকার নেই।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা হয় নিজেদের উদ্যোগেই। ঠিকমতো চিকিৎসা ও শিক্ষা কিছুই মিলছে না তাদের। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, বিচার, পানীয় এবং আধুনিক সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত। ছিটমহলবাসী নিজ ভূমিতে থেকেও পরবাসী। দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্নপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার এ বিষয়ে সমাধানের জন্য বলা হলেও ভারতীয় পক্ষ থেকে তেমন কোন জোরালো ভূমিকা দেখা যায়নি।
ছিটমহলগুলোতে অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিশুদের জন্য কোন শিক্ষা এমনকি চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। রাজস্ব আদায় বা প্রশাসনিক কর্তৃত্ব না থাকায় এলাকায় কোন উন্নয়নমূলক কাজ হয় না। পাশের ভারতীয় হাটবাজারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হয় কম মূল্যে। মূল ভূখ-ের সাথে কোন ধরনের সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থা নেই।
বিজিবি-বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঝে মধ্যে অনেকেই মূল ভূখ-ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালান। এ চেষ্টার মূল উদ্দেশ্য জীবন ধারণের জন্য পণ্য ও ওষুধ যোগাড় করা। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই ছিটমহলবাসীকে ভোটার করার আশ্বাস দেয়া হলেও তা পরে আর বাস্তবায়ন হয় না। ছিটমহলগুলোতে জমি কেনাবেচা চলে সাদা কাগজে টিপসই দিয়ে। জমি রেজিস্ট্রির জন্য তাদের যেতে হবে বাংলাদেশ বা ভারতের কোন রেজিস্ট্রি অফিসে যা কোনভাবেই তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে তাদের দিন পার করতে হচ্ছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা প্রায়ই ছিটমহলবাসীর ফসল, বাঁশ ও দামি গাছ এবং গবাদিপশু জোর করে নিয়ে যায়।
১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহলগুলো দ্রুত হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন ছিটমহলবাসী। বর্তমানে চিহ্নিত ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় ১১১টি এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। নিজ নিজ দেশের আওতায় যেতে চান ছিটমহলবাসী।
বিক্ষোভ মিছিল ছাড়াও তারা সাইকেল মিছিল, নিষ্প্রদীপ রাত্রি, সর্বত্র মোমবাতি প্রজ্বলন ও মৌনমিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এর পরও চুক্তি বাস্তবায়নে দুই সরকারের টনক না নড়লে মাসব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি।
গত বছর ১৯ থেকে ২০ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত ছিটমহল সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে উভয় এলাকায় ছিটমহলবাসীর উপর জরিপে ছিটমহলবাসী নিজ নিজ দেশের সীমানায় থাকতে চায় বলে জানিয়েছে।
১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত ছিটমহলগুলো প্রকৃতপক্ষে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিবাড়ী, মেকলিগঞ্জ, মাথাভাঙ্গা ও শীতকুচি থানাতেই বাংলাদেশের বেশির ভাগ ছিটমহলের অবস্থান। এগুলো এককালে রংপুর মহারাজার জমিদারির অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্য দিকে বাংলাদেশের চার জেলার ৯ থানায় ২০ হাজার ৯৫৭ দশমিক ৭ একর জমি বা ৩২ দশমিক ৭৬৪ বর্গমাইল আয়তনের ভারতীয় ছিটমহলগুলোর অবস্থান।
ছিটমহলের বাসিন্দারা দীর্ঘ ৬৫ বছরের বেশি সময় বঞ্চনার পর আদমশুমারি যে আশার আলো তাদের মাঝে সঞ্চার করেছিল তা এখন নিষ্প্রভ হতে বসেছে। গত বছরের ১৪ জুলাই রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার জেলার অভ্যন্তরে বাংলাদেশি ৫১টি ছিটমহল ও বাংলাদেশের চার জেলার অভ্যন্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার জেলার ১১১টি ছিটমহলবাসীর শুমারি শেষ হয়।
আদমশুমারি হওয়ার পরে বাংলাদেশ-ভারতের ছিটমহলবাসীর প্রতীক্ষিত ছিটমহল সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে দেখে ছিটমহল বাসিন্দাদের মাঝে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু ভারত সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ছিটমহলবাসীর মাঝে আবার নতুন করে হতাশা দেখা দিয়েছে। ছিটমহল সমন্বয় কমিটি অধিকার আদায়ে দুই দেশেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নামছে।
সবশেষে ‘হয় মুক্তি নয়তো মৃত্যু’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে কঠোর আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহলবাসী। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়ন করে তবেই আন্দোলন শেষ করবেন এবং তা না হলে আত্মাহুতির পথ বেছে নিবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মঈনুল হক।
বাংলাদেশ পক্ষের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অসহযোগিতার কারণে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তিনি জানান, ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ে ঢাকা-দিল্লি চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছেন মমতা।
মূলত: বর্তমান বাংলাদেশ ভূখ-ের মানুষ গত ৬৫ বছরে দুই-দুইবার স্বাধীনতা পেলেও আমাদের দেশেরই ছিটমহলগুলোর প্রায় দু’লাখ মানুষ স্বাধীনতা পূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারছেন না- এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। তাদের যাবতীয় সমস্যা বাংলাদেশ-ভারত উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে অবিলম্বে সুরাহা করা উচিত।
এক্ষেত্রে মমতা মানসিংহ কোন বিষয় নয়।
বিষয় হলো ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। আমরা মনে করি ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি প্রদর্শনের কোন কারণ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের নেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।