আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অগ্নি V ক্ষেপণাস্ত্র

"Life Is a Journey, Not a Destination ― Ralph Waldo Emerson একটা সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। আর ভারতের পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লায় চলে এল চিন। এবং দক্ষিণ এশিয়ার দুই বড় শক্তির মধ্যে সম্পর্ক নতুন মোড় নিল। চিনের অস্ত্র ভাণ্ডারে এমন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যার পাল্লা এগারো হাজার কিলোমিটারের বেশি (ডং ফেং নামের ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ১৩ হাজার কিলোমিটার)। সে দিক থেকে দেখলে যে অগ্নি-৫-এর সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ আজ হল ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চলে, তার পাল্লা তুলনায় অনেকটাই কম।

পাঁচ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু ভারতের দিক থেকে যে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ, তা হল, এই পাল্লাতেই এসে যাচ্ছে চিনের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি। যে কারণে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা তথা ডিআরডিও প্রধান ভি কে সারস্বত বলেছেন, “মোড় ঘুরিয়ে দেবে অগ্নি-৫। ” এর আগে অগ্নি-৩ ছিল ভারতের সব থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা ছিল সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। এর আওতায় পাকিস্তানের বড় শহরগুলি এলেও চিনের অন্দরে আঘাত হানার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

সেই কাজেরই উপযুক্ত অগ্নি-৫। শুধু চিন, পাকিস্তানই নয়, সম্পূর্ণ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের একটা বড় অংশও এ বার চলে এল ভারতের পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে। সেই ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময় থেকেই ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক সহজ নয়। ভারতের সীমান্ত বরাবর সম্প্রতি সামরিক তৎপরতা আরও বাড়াচ্ছে বেজিং। নির্মাণ করছে সামরিক পরিকাঠামো।

এর প্রতিবিধান কী? গত কয়েক বছর ধরে বারবার ঘরোয়া মঞ্চে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছিলেন, চিন তার মতো করে কাজ করছে। তাতে দমে না গিয়ে ভারতও নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। CATEGORY : Surface-to-surface inter-continental ballistic missile (ICBM) RANGE : Over 5,000 km. It can hit targets in China, including Beijing, eastern Europe, east Africa and the Australian coast HEIGHT : 17.5m FUEL: Solid-fuelled,three-stage missile LAUNCH WEIGHT :50 tonnes, including a 1.5 tonne warhead DEVELOPED by : Defence Research and Development Organisation (DRDO) পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অগ্নি-৫-এর সফল উৎক্ষেপণ করে সেই ‘প্রস্তুতি’-র কাজে আজ অনেকটাই এগিয়ে গেল নয়াদিল্লি। অগ্নি-৫ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরাও সে কথা জানিয়েছেন।

প্রায় ৮০ শতাংশ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অগ্নি-৫-। শেষ পর্যন্ত গত কাল সকাল ৮টা ৭ মিনিটে ওড়িশা উপকূলের হুইলার দ্বীপ থেকে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ডিআরডিও) তত্ত্বাবধানে উৎক্ষেপণ করা হয় অগ্নি-৫। পরীক্ষা শেষে ভি কে সারস্বত বলেন, “আমরা সফল। ভারত মহাসাগরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সফল ভাবে আঘাত করেছে অগ্নি-৫। ” শুধু প্রতিবেশীকে পাল্লার মধ্যে আনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজই নয়, অগ্নি-৫-এর এ ছাড়াও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

যেমন, ১০টি পর্যন্ত শহরকে একযোগে নিশানা করা যাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। দেশের দিকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র বা কক্ষপথে থাকা শত্রু দেশের উপগ্রহকেও ধ্বংস করতে পারে এই নতুন অগ্নি। সব চেয়ে বড় কথা, দূরপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র দেশের যে কোনও প্রান্তে বয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। ছোড়া যাবে রাস্তার পাশে দাঁড় করানো বিশেষ টাট্রা ট্রাক থেকেও। পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের পরেই অগ্নিকে ঘিরে কূটনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছে।

এক দিকে যখন সফল উৎক্ষেপণের জন্য ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি, অন্য দিকে তখন কপালে ভাঁজ চিনের বিদেশ মন্ত্রকের। মুখে সতর্ক নজর রাখার কথা বললেও বেজিং কিন্তু মনে করছে, এর ফলে এই অঞ্চলে নতুন করে ‘অস্ত্রের প্রতিযোগিতা’ শুরু হবে। সমালোচনায় সরব হয়েছে সে দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম। অনেকেই বলছেন, এখানেই চিনের মুখ ও মুখোশের তফাতটা স্পষ্ট। আমেরিকা কিন্তু প্রাথমিক ভাবে ভারতের পাশেই দাঁড়িয়েছে।

চিন সরকারি তরফে ‘সতর্ক’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিউ ওয়েইমিন বলেন, “ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উপরে নজর রাখছে চিন। দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত। দ্বিপাক্ষিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দুই দেশই। ” তবে দিল্লির চিনা দূতাবাস সূত্রের খবর, অগ্নি-৫-এর উৎক্ষেপণ নিয়ে যথেষ্ট উষ্মা রয়েছে বেজিংয়ের।

চিন মনে করে, আজকের উৎক্ষেপণের ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলে নতুন করে ‘অস্ত্রের প্রতিযোগিতা’ শুরু হবে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যমের ‘উচ্ছ্বাস’ও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করছে তারা। তবে প্রকাশ্যে দুই দেশের মধ্যে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’র সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন লিউ ওয়েইমিন। অগ্নি-৫-এর উৎক্ষেপণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলের স্থিতাবস্থা নষ্ট করবে কি না তা জানতে চাওয়া হলে করা হলে লিউ বলেন, “আশা করি এশিয়ার দেশগুলি শান্তি রক্ষার লক্ষ্যেই কাজ করবে। ” লিউ ‘শান্তি’র কথা বললেও ভারতের ‘ক্ষমতাবৃদ্ধি’ নিয়ে রীতিমতো আক্রমণাত্মক চিনা সংবাদমাধ্যম।

দেশের সরকারি সংবাদপত্র প্রায় হুঁশিয়ারির সুরে লিখেছে, “ভারত যেন নিজের শক্তিকে বাড়িয়ে না দেখে। চিনের পরমাণু শক্তির সঙ্গে ভারতের কোনও তুলনাই হয় না। ” পশ্চিমী দেশগুলিরও কড়া সমালোচনা করে সংবাদপত্রটির বক্তব্য, “পরমাণু অস্ত্র প্রসাররোধী বিভিন্ন চুক্তি মানতে বিভিন্ন সময়েই অস্বীকার করেছে ভারত। কিন্তু পশ্চিমী দেশগুলি বরাবরই চোখ বুজে থেকেছে। ” তবে, আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মার্ক টোনার আজ বলেন, “ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র প্রসার বিষয়ে কোনও অভিযোগ নেই।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে সব সময়ে সহযোগিতাই করে এসেছে ভারত। ” ক্রেডিট ঃ আনন্দবাজার পত্রিকা  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।