আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিউইয়র্কে গরিব মানুষ বাড়ছে

জানতে চাই জানাতে চাই অর্থনৈতিক মন্দার আঘাতে পশ্চিমা বিশ্ব কতখানি বিপর্যস্ত তার একটি চিত্র উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে। নিউইয়র্ক নগরীর অধিবাসীদের দারিদ্র্যের ওপর পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় এক গবেষণা পত্রে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির প্রধান প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক নগরীতে গরীব মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার আঘাতে নগরীর অধিবাসীরা নতুন করে দারিদ্রের শিকার হচ্ছে। এ যেন অনেকটা আলোর অপর পিঠের অন্ধকার।

একদিকে ওয়াল স্ট্রিটের জৌলুস, অপর দিকে হার্লেম ও অন্যান্য ডাউন- টাউনগুলোতে বাড়তে থাকা গরীব মানুষের জীবন সংগ্রাম। নিউইয়র্ক নগরীর দারিদ্র্যের প্রকৃত অবস্থা তুলে আনার জন্য চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে শুধুমাত্র ২০১০ সালেই আরো প্রায় এক লাখ নিউইয়র্কবাসী নতুন করে করে দারিদ্রসীমায় নেমে গেছে। নগরীর দারিদ্র্য পূর্বের থেকে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো ২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী নগরীর ২১ শতাংশ বাসিন্দাই দরিদ্র। নিউইয়র্কে নতুন করে প্রণীত দারিদ্র্যসীমা নীতিমালার আওতায় দারিদ্র্যের হার ও দরিদ্র লোকের পরিমান নিরুপণ শুরু হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া বছর ওয়ারি গণনায় দরিদ্র লোকের বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ২০১০ সালেই। পশ্চিমা বিশ্বের চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সৃষ্ট সঙ্কট এবং সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার মন্থর গতি, ইত্যাদিই নগরীর দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার মূখ্য কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্ল্যেখ করা হয়েছে। নগরীর দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হচ্ছে শিশুরা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের নীচে অবস্থান করা প্রতি চারটি শিশুর একটিই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে নিউইয়র্ক নগরীতে। মঙ্গলবার সেন্টার ফর ইকোনোমিক অপোরচুনিটি এক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে শুধু দরিদ্র নয় বরং দারিদ্র্য সীমার উপরে থাকা একটি বিশাল সংখ্যার মানুষও জীবন যাপনের ব্যয় নির্বাহে সঙ্কটের মোকাবেলা করছেন। পরিস্থিতি এমনই খারাপ স্বামী স্ত্রী পূর্ণকালীন কাজ করে এমন অনেক পরিবারও দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারছেনা। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী এই ধরনের পরিবারগুলোর মধ্যে দারিদ্র্যের হার পূর্বের থেকে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালের পরিসংখ্যানে নগরীর ১৭ লাখ লোক দরিদ্র । মন্দার কারণে সৃষ্ট উচ্চ বেকারত্বকেই এই দারিদ্র্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে বলছেন গবেষকরা।

অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মন্দা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অংশ থেকে নিউইয়র্ক নগরীকেই বেশি আঘাত করেছে বলে দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি নগরীতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরো বেড়ে ২৩.৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে পরিসংখ্যানে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এক বা একাধিক শিশু বিশিষ্ট পরিবারগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য ২৭ .৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সঙ্কটের মুখে পড়া এই পরিবারগুলো মূলত ২০০৭ সাল থেকেই কোন ধরনের সরকারি সাহায্য ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সূচক অনুযায়ী নিউইয়র্কবাসীদের ৭.৭ শতাংশ চরম দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করছে। ২০০৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউইয়র্ক নগরীতে ২০.৫ শতাংশ লোক দরিদ্র ছিলো। তবে পরবর্তীতে এই হার কমতে থাকে। কিন্তু পুনরায় অর্থনৈতিক মন্দা আঘাত করলে দারিদ্র্যের হার ২০০৮ সাল থেকে আবারও বাড়তে থাকে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির দারিদ্র্য গবেষণা বিষয়ক কর্মসূচির পরিচালক মার্ক লেভিটান এ প্রসঙ্গে বলেন, নগরীর শিশুরাই এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় শিশুদের প্রতি নগরীর নীতি নির্ধারকদের নজর বৃদ্ধি করতে হবে বলে উল্ল্যেখ করেন তিনি। নগরীতে দরিদ্র শিশুর সংখ্যা ২০০৮ সালের ২২.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১০ সালে ২৫.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই হারকে আশঙ্কাজনক বলে অভিহিত করেন তিনি। পরিসংখ্যানে নগরীতে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও দারিদ্র্যের তুলনামূলক হারের তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। হিস্পানিকদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২৬ শতাংশ, এশীয়দের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের মধ্যে এই হার ২১.৭ শতাংশ।

আবার অ-হিস্পানিক সাদাদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার অনেক কম, প্রায় ১৫.২ শতাংশ। নগরীর নাগরিকত্বহীন বাসিন্দাদের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। এই ধরণের জনগোষ্ঠীর মধ্যে দারিদ্র্যের হার প্রায় ২৭.৮ শতাংশ, তবে জন্মগত ভাবে স্থানীয়দের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৯.৯ শতাংশ বলে পরিসংখ্যানে তুলে ধরা হয়েছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.