নিউইয়র্কে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে নওয়াজ শরিফের বৈঠকের টাটকা দৃশ্য যখন টিভির পর্দায় ফুটে উঠছিল, সেই সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর শরীর-ভাষা একটু বর্ণনা করা যাক। দুই নেতার ঠোঁট দুই পাশে দুই সেন্টিমিটারের বেশি প্রশস্ত হলো না। দুজনের প্রসারিত হাত একে অন্যের দিকে এগোল ঠিকই, কিন্তু শরীর নিরাপদ দূরত্বেই থাকল। একবারের জন্যও মনে হলো না যে এই বৈঠকের জন্য তাঁরা এত দিন ধরে ঘরে-বাইরের যাবতীয় বাধা উপেক্ষা করে অপেক্ষায় ছিলেন।
অথচ, এক ঘণ্টার সেই বৈঠকের পরই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন ভারতীয় সাংবাদিকদের বললেন, বৈঠকটা ছিল যথেষ্ট প্রয়োজনীয় এবং ইতিবাচক।
আর পাকিস্তানের প্রচারমাধ্যমগুলোতে বলা ও লেখা হলো, গর্জনের তুলনায় বর্ষণ কমই দেখা গেল।
এই শীর্ষ বৈঠকটা তাহলে হলো কেমন? পাকিস্তানের এক বহুল প্রচারিত দৈনিকের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, বিরাট কিছু একটা আশা কেউ করেনি। কাজেই বৈঠকটা যে হলো, এটাই ছোট পাওনা। ঠিক একই কথা বৈঠকের এক দিন আগে বলেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
আসলে এটাই ছিল এই সাক্ষাতের মূল চিত্রনাট্য।
বৈঠক বানচালের জন্য দুই দেশে যারা সক্রিয়, তাদের মুখে ছাই দিয়ে এটি অনুষ্ঠিত করাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে জিততে গেলে যেসব সমঝোতা করতে হয়, শরীর-ভাষায় কাঠিন্য আনা সেগুলোর অন্যতম। উভয়েরই উদ্দেশ্য ছিল দেশের জনগণের একাংশকে এটা বোঝানো যে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য বর্তে যাচ্ছেন না।
পাকিস্তান এখনো ২৬/১১-এর অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারেনি। হাফিজ সঈদ শাস্তি না পেলে ভারতও শান্তি পাবে না।
উল্টো নওয়াজ শরিফের রাজ্য পাঞ্জাব সরকারিভাবে হাফিজ সঈদের জামাত-উদ-দাউয়াকে অর্থ সাহায্য করছে বলে ভারতের অভিযোগ। কিন্তু তাই বলে নওয়াজ শরিফকে দূরে ঠেলে রেখে ভারতেরও যে লাভ নেই, মনমোহন সরকার তা জানে। এই সরকারের কূটনীতির নির্যাস হলো, পাকিস্তানের গণতন্ত্রী সরকারকে দুর্বল না করে তাকে শক্তি জোগাও, যাতে তারা সে দেশের ভারতবিরোধী শক্তিকে শায়েস্তা করতে পারে। বৈঠক বাতিলের জন্য কাশ্মীরের সর্বশেষ বড় জঙ্গি হামলাটিকে অনায়াসে অজুহাত হিসেবে খাড়া করা যেত। মনমোহন তা করেননি।
মনমোহন কেন নওয়াজ শরিফকে এতটা বিশ্বাস করছেন? কারণ, নওয়াজ নিজে ব্যবসায়ী এবং তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে মনমোহন সিংয়ের আদর্শের আদলে গড়তে আগ্রহী। মনমোহন সিং মনে করেন, বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক দিক থেকে স্থিতিশীল পাকিস্তান ক্রমশ ভারতের কাছাকাছি আসতে বাধ্য।
সব মিলিয়ে বলতে হয় বৈঠকের নিট ফল সামান্যই। নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভাঙার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা বন্ধ করে শান্তি স্থাপনায় দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) অবিলম্বে মিলিত হবে। ২৬/১১-এর অপরাধীদের শাস্তিদানের ভারতীয় দাবি নস্যাৎ না করে নওয়াজ শরিফ জানিয়েছেন, তাঁর দেশের বিচার বিভাগীয় কমিশন ভারত ঘুরে সাক্ষ্য-তথ্যাদি নিয়ে দেশে ফিরে গেছে।
এবার ওই মামলায় আরও অগ্রগতি হবে বলে তাঁর আশা।
গণতন্ত্রে আলোচনাই প্রথম ও শেষ কথা। ভারতের স্বার্থেই পাকিস্তানে গণতন্ত্র শক্তিশালী হওয়া দরকার। মনমোহন সিং ও নওয়াজ শরিফ দুজনের অবস্থানই এই ভাবনার কাছাকাছি। সব সমস্যার থমকে থাকা সার্বিক আলোচনা কবে শুরু করা যাবে, সেটা পরের প্রশ্ন।
আপাতত, পারস্পরিক আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টার কেঁচে গণ্ডূষ হলো নিউইয়র্কে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।