আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুয়েটের ভিসি এর মুখে আজ একি কথা ‘ভিসি তার পছন্দসই লোকদের দিয়ে প্রশাসন চালাবে এটাই তো স্বাভাবিক’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ১৯৬২ সাল হতে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানামুখী রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তিমূলক কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়া এবং পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করায় একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করে বুয়েট । সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান দুই কর্তাব্যক্তি ভিসি ও প্রো-ভিসি’র কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। গত ৭ এপ্রিল থেকে শিক্ষক সমিতি কর্মবিরতি পালন করছে। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সচরাচর ঘটে না ।

বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে কেন এমন হচ্ছে! খোঁজ নিয়েছেন বাহরাম খান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গর্ব হলো এর ভর্তি পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম শতভাগ যথাযথ নিয়মে অনুষ্ঠিত হওয়া। কিন্তু বর্তমান উপাচার্যের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে একজন ছাত্রের ফলাফল পরিবর্তন হওয়ায় তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে শিক্ষক সমাজ। জানা যায়, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি (শিক্ষক সমিতি তার নাম প্রকাশ করেনি) তার রেজিস্ট্রিকৃত একটি কোর্সে পরীক্ষা দিতে না পারায় উপাচার্যের বরাবর আবেদন করেন। নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্য তার আবেদন বিবেচনার জন্য একাডেমিক কাউন্সিলে প্রেরণ করবেন। সেখানেই আবেদনের ফয়সালা হবে।

কিন্তু দেখা যায় উপাচার্য নিজে দায়িত্ব নিয়ে তা মঞ্জুর করেন এবং নজীরবিহীনভাবে তার রেজিস্ট্রিকৃত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সেমিস্টারের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু বুয়েটের একাডেমিক নিয়ম হচ্ছে কেউ যদি যেকোনো কারণে কোনো কোর্সে পরীক্ষা দিতে না পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট কোর্সে পরবর্তী সময়ে ‘বি’ গ্রেডের উপরে পাবে না। অথচ ঐ ছাত্রলীগ সহ-সভাপতিকে উপাচার্য এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রারের সহযোগিতায় তালিকা থেকে সাবজেক্ট বাদ দিয়ে দেয়া হয়। ফলে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এই ছাত্রের যে গ্রেড পাবে তাই যোগ হবে। ঘটনাচক্রে এই বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হন।

কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেয়ার পর সেই ছাত্রলীগ নেতার ফলাফলের অসঙ্গতি দূর করা হলেও কমিটির রিপোর্টটি আজও প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে উপাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা একটা ভুল হয়েছিল, সংশোধন করা হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশ করা হচ্ছে না কেন? তিনি বলেন, তদন্তের মাধ্যমে ভুল সংশোধন করা হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশ করার দরকার কি? উপ-উপাচার্যের নিয়োগ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপচার্য ড. মো. হাবিবুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ৫৮ জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।

হাবিবুর রহমান তার ডিপার্টমেন্টের একজন অধ্যাপক। তার উপরে অনেক বিভাগীয় প্রধান ও ডীনরা আছেন, উপরন্তু তিনি সিলেকশন গ্রেডের শিক্ষক পর্যন্ত ছিলেন না। উপ-উপচার্য হওয়ার পর নিয়ম ভঙ্গ করে অনেক সিনিয়র শিক্ষককে রেখে তাকে সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা হয়। প্রথম থেকেই এসবের বিরোধিতা করে আসছিল শিক্ষক সমিতি। এর কারণ হিসেবে শিক্ষক সমিতি দাবি করে যে, বুয়েট একটি ছোট্ট প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো উপ-উপাচার্য নিয়োগ করা হয়নি বা দরকার হয়নি। এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক সাপ্তাহিক-কে বলেন, ‘এখানে উপ-উপাচার্যের কোনো দরকার ছিল না। তারপরও পদসৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য নিয়োগ পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই নিয়োগটা বুয়েটের রীতি-ঐতিহ্যকে ভেঙে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া উনি প্রশাসনে যোগ দেয়ার পর থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতার নামে সংগঠন করে বুয়েটের অন্যান্য শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐ সংগঠনের সদস্য হওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমার বাসায় টেলিফোন করে হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। আন্দোলন করলে ফল ভালো হবে না। এই হলো অবস্থা। ’ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, হাবিবুর রহমান বুয়েটের উপ-উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে প্রভাব খাটিয়েছেন।

সাধারণত বুয়েটের শিক্ষদের মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা না থাকায় সাধারণ শিক্ষকরা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এছাড়া তার নিয়োগের পর থেকে রাজনৈতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ এবং সেগুলোতে তার সমর্থন থাকায় সাধারণ শিক্ষকরা আরো বেশি প্রতিবাদ জানায়। কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তারা নাম গোপন রেখে সাপ্তাহিক-কে জানান, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুয়েটের একটি নতুন বিল্ডিং উদ্বোধন করতে আসেন। নতুন বিল্ডিংয়ে বুয়েটের কৃতী শিক্ষার্থীদের দেশ-বিদেশে পাওয়া নানা সম্মাননার ছবি টাঙ্গানো হচ্ছিল। সেখানে প্রো-ভিসির সঙ্গে চা পানরত সজীব ওয়াজেদ জয়ের (প্রধানমন্ত্রীর ছেলে) একটি ছবি টাঙ্গানোর জন্য পাঠানো হয় প্রো-ভিসির পক্ষ থেকে।

এভাবে বিভিন্নভাবে নিজের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টাকে শিক্ষক সমিতি বুয়েটের জন্য অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে। তাই তার মতো ব্যক্তিকে এই পদে রাখার কোনো যুক্তি নেই। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকার প্রথমবারের মতো প্রো-ভিসি পদটি তৈরি করে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর হাবিবুর রহমান স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং একজন প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতায় এই পদে আসেন বলে জানা যায়। হাবিবুর রহমান ছাত্রজীবনে বাম ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়।

আর তার এই পদে আসার ক্ষেত্রে তিনজন বাম ধারার এমপি, প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রীর সহযোগিতা পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। ভূতাপেক্ষ নিয়োগ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো ডেপুটি রেজিস্ট্রারের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি বাতিল করা। ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল আহমেদ ১৯৯৪ সালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে বুয়েটে যোগ দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে ২০০৯ সালে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের পদে উন্নীত হয়। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য ড. নজরুল ইসলাম নিয়োগ পাওয়ায় তাকে ২০০৪ সাল থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়া হয়। বুয়েট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কামাল আহমেদ বঙ্গবন্ধু পরিষদ নামে নতুন একটি সংগঠনের জন্ম দিয়ে প্রশাসনিকভাবে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন।

আর তাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন ভিসি ও প্রোভিসি। এ বিষয়ে কামাল আহমেদকে প্রশ্ন করা হলে সাপ্তাহিক-কে বলেন, ‘ যারা আন্দোলন করছেন তাদের মধ্য থেকে একজন ভিসি হওয়ার জন্য আমার সহযোগিতা চেয়েছিল। আমি অফিসার্স ক্লাব ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এ বিষয়ে সহযোগিতা করার আমি কেউ নই। তাই তারা ব্যাক্তিগত বিরোধে জড়িয়েছে।

আর দল করলেই দোষ হবে কেন? আমি কোনো নিষিদ্ধ দল করিনা। ’ সাধারণ ছাত্রদের অভিমত বুয়েটের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের একাধিক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারা কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা সাপ্তাহিক-কে বলেন, আমরা যে কেউ যে কোনো আদর্শতে বিশ্বাস করতে পারি। কিন্তু একাডেমিক কাজের সঙ্গে এসব বিষয়ের যোগ থাকা উচিত নয়। বুয়েটে দীর্ঘদিনের যে সংস্কৃতি পরিশীলিত হয়ে আসছে তাতে কেউ যেন আঁচড় না দেয়।

প্লিজ, বুয়েটের গায়ে আঁচড় দিবেন না। ‘বুয়েট ভালো চলছেনা’ মোহাম্মদ কায়কোবাদ অধ্যাপক, সিএসই বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যদি এক কথায় বলতে তাহলে বলা যায়, বুয়েট ভালো চলছেনা। যদিও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও ভালো চলছেনা। কিন্তু এসব বিষয়ে দেশ চালকদের মনযোগ দেয়া অত্যন্ত জরুরী। ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক নিয়ে সমস্যা হলে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা দূর করতে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়না। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বলে আমার মনে হয়। আমরা মুখে বলি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু কাজে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো (স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত) সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে হবে।

মনে রাখতে হবে শিক্ষাই জাাতির মেরুদণ্ড, ক্রিকেট নয়। ‘ভিসি তার পছন্দসই লোকদের দিয়ে প্রশাসন চালাবে এটাই তো স্বাভাবিক’ ড. এস এম নজরুল ইসলাম ভিসি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাহরাম খান সাপ্তাহিক : বুয়েটে বেশ কয়েকদিন শিক্ষক আন্দোলন চলছে। এর কারণ কি? নজরুল ইসলাম : শিক্ষকরা দুটি বিষয়ে তাদের কথা তুলে ধরছে। প্রথমত উপ-উপাচার্যের জায়গায় কেন অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হলো। দ্বিতীয়ত প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে ও কমিটিতে রদবদলের বিষয়টি।

উপ-উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে আমি উপাচার্য হওয়ার অনেক আগে। সরকার তাকে নিয়োগ দিয়েছে। তাছাড়া উপ-উপাচার্য পদে সাধারণত এরকম লেভেলের (বয়সের দিক থেকে) শিক্ষকদেরকেই দেয়া হয়। তিনি সিলেকশন গ্রেডের শিক্ষক। এতে কোনো নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি।

সাপ্তাহিক : উপ-উপাচার্য হওয়ার পর হাবিবুর রহমান সাহেব সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন তাই না? নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ তা ঠিক আছে। সাপ্তাহিক : হাবিবুর রহমানের থেকে আরো সিনিয়র শিক্ষকদের ডিঙিয়ে তাকে সিলেকশন গ্রেড দেয়াটা কি অনিয়ম হয়নি? নজরুল ইসলাম : প্রশাসন ইচ্ছে করলে দিতে পারে। সাপ্তাহিক : বুয়েটে সাধারণত এই সংস্কৃতি নাই বলে জানা যায়... নজরুল ইসলাম : এটা কোনো সংস্কৃতির বিষয় না। আগেও এরকম হয়েছে। সাপ্তাহিক : কিন্তু সেগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন তো হয়নি... নজরুল ইসলাম : আন্দোলন হয়নি ঠিক আছে।

কিন্তু এরকম একেবারে হয়নি তা ঠিক না। সাপ্তাহিক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল আহমেদকে নিয়েও বিতর্ক আছে বলে জানা যায়... নজরুল ইসলাম : কামাল আহমেদকে বিগত সময়ে বঞ্চিত করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে তার চেয়ে জুনিয়র অফিসার বেতন বেশি পাচ্ছে। তাই সে যখন তার ক্ষতিপূরণ করার আবেদন করল তখন আমার আগের ভিসি সেই ফাইল অনুমোদন করে যায়। এরপর আমি সিলেকশন বোর্ড ও সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করি।

সাপ্তাহিক : এর আগে অবশ্য আপনি সিলেকশন বোর্ড ও সিন্ডিকেট পুনর্গঠন করেছেন। সেখানেও প্রচলিত রীতি ভাঙা হয়েছে বলে শিক্ষক সমিতি অভিযোগ করছে... নজরুল ইসলাম : একজন ভিসি তার পছন্দসই লোকদের দিয়ে প্রশাসন চালাবে এটাই তো স্বাভাবিক। যদি আমি অনিয়ম করে অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতাম তাহলে একটা কথা ছিল। এটা ভিসির এখতিয়ার। কেউ এখানে ডিকটেক্ট করতে পারে না।

তারপরও আমি তাদের কথা রেখেছি। সাপ্তাহিক : কিন্তু এর আগে এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। কামাল আহমেদের বিষয়ে এত প্রশ্ন কেন? নজরুল ইসলাম : কামাল আহমেদ ভালো কাজ বুঝে। তাই কাউকে তোয়াজ করে চলে না। এ কারণে কিছু শিক্ষক তাকে দেখতে পারে না।

তার আরেকটা দোষ হলো সে বঙ্গবন্ধু পরিষদ নামে একটি সংগঠনের সভাপতি। সাপ্তাহিক : বুয়েটে কি এরকম সংগঠন করার নিয়ম আছে? নজরুল ইসলাম : সে হিসেবে তো শিক্ষক সমিতিসহ কোনো সংগঠনেরই নিয়ম নেই। আমি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি ছিলাম। উপদেষ্টা ছিলাম। তাতে কি হয়েছে? আমার পেশাগত জায়গায় আমি ঠিক ছিলাম।

সাপ্তাহিক : কিন্তু আপনি যেদিন দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঠিক সেদিনই কামাল আহমেদকে তাড়াহুড়া করে রেজিস্ট্রারের চলতি দায়িত্ব দেন। এর কারণ কি? নজরুল ইসলাম : আমি যোগদান করার ঠিক আগে বিগত ভিসি সব শূন্যপদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যান। কিন্তু সাধারণ নিয়ম হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে নতুন ভিসিই তার পছন্দমতো নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তারপরও যখন শিক্ষকরা আপত্তি জানালো কামালকে চলতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিই। সাপ্তাহিক : তাহলে তার নিয়োগে অনিয়ম হয়েছিল? নজরুল ইসলাম : না, কোনো অনিয়ম হয়নি।

সাপ্তাহিক : অনিয়ম না হলে শিক্ষকদের দাবিতে তাকে অব্যাহতি দিলেন কেন? নজরুল ইসলাম : আমি চেয়েছিলাম সবার সঙ্গে সুন্দর করে প্রশাসন চালাতে। এখন মনে হয় কামালকে সরানোটা আমার ভুল হয়েছিল। সাপ্তাহিক : কামাল আহমেদের ভূতাপেক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে একটি কমিটি গঠন হয়। সেই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি কেন? নজরুল ইসলাম : কমিটির রিপোর্ট সিন্ডিকেটে উপস্থাপন হয়েছে। এই রিপোর্ট কি পত্রিকায় দিব নাকি? সাপ্তাহিক : যাদের দাবির প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি করলেন তারাও কি রিপোর্ট দেখতে পারবে না? নজরুল ইসলাম : রিপোর্ট দেখার দরকার কি।

তারা দেখবে ফলাফল। সাপ্তাহিক : সেই ফলাফলটা কি? নজরুল ইসলাম : ভবিষ্যতে আর ভূতাপেক্ষ নিয়োগ দেয়া যাবে না। আর যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সেভাবেই থাকবে। বাদ দেয়া হবে না। সাপ্তাহিক : রিপোর্টে কামাল আহমেদ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে? নজরুল ইসলাম : রিপোর্টে কামাল আহমেদ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।

সাপ্তাহিক : যাকে কেন্দ্র করে তদন্ত কমিটি গঠন তার সম্পর্কে কিছু নেই? নজরুল ইসলাম : তার নিয়োগ ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। তাই সেও থাকবেন। তবে ভূতাপেক্ষ কিন্তু শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নয় অনেক শিক্ষকও আছেন। কিন্তু শিক্ষকরা সেটা বলে না। এটা পক্ষপাতমূলক উদ্দেশ্যপূর্ণ আচরণ।

সাপ্তাহিক : কামাল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে কর্মচারী থেকে শুরু করে শিক্ষকদের সংগঠনে যোগ দেয়ার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে... নজরুল ইসলাম : আমার কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি আর এমনটা হওয়ার কথা না। সাপ্তাহিক : এত কিছুর পর এখনও কামাল আহমেদকেই রেজিস্ট্রার করার একটি প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষকরা... নজরুল ইসলাম : সে যোগ্য ব্যক্তি। তার নিয়োগ হলে সেটা দোষের কিছু হবে না। সত্যি কথা বলতে কি দু’একজন শিক্ষক তাকে দেখতে পারে না। এটাই মূল সমস্যা।

সাপ্তাহিক : দু’একজন শিক্ষক নিয়ে তো সমিতি চলে না। নজরুল ইসলাম : তারাই অন্য সবাইকে প্রভাবিত করছে। সাপ্তাহিক : আপনার কথাতেও তো কামাল আহমেদের প্রতি এক ধরনের পক্ষপাতিত্বের সুর বোঝা যাচ্ছে... নজরুল ইসলাম : আমি তাকে পছন্দ করি কাজের যোগ্যতা ও সততার জন্য। এতে পক্ষপাতিত্বের কিছু নেই। সাপ্তাহিক : কিন্তু দুজন ছাত্রের ফলাফল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অসততার আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছেÑ যাদের একজন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন... নজরুল ইসলাম : এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

তদন্ত কমিটি ভুল ধরেছে। সংশোধনও করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদেরকে বলে দেয়া হয়েছে যে, এমন ভুল যাতে না হয়। সাপ্তাহিক : ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির ক্ষেত্রে যে কাজটা হয়েছে সেটা ভুল ছিল না। সচেতনভাবে করা হয়েছে বলে প্রমাণ রয়েছে... নজরুল ইসলাম : দেখুন একটি প্রতিষ্ঠানের এত কাজের মধ্যে কিছু না কিছু ভুল হয়ই।

এগুলো আবার স্থায়ীভাবে ভুল থাকে না। কারণ পরবর্তী স্টেজে গিয়ে ধরা পড়বেই। সাপ্তাহিক : নিয়ম অনুযায়ী বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে ছাত্রের (ছাত্রলীগ নেতার) আবেদন আপনার কাছে যাওয়ার কথা। অথচ সরাসরি আবেদনে আপনি স্বাক্ষর করেছেন এবং পরবর্তীতে নজিরবিহীনভাবে তার রেজিস্ট্রিকৃত বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে রেজাল্টশিট থেকে... নজরুল ইসলাম : তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়ার পর ঠিক করা হয়েছে। সাপ্তাহিক : ভর্তি পরীক্ষা এবং একাডেমিক কার্যক্রমে বুয়েটের শতভাগ কঠোরতা এই প্রতিষ্ঠানকে উচ্চমানে আসীন করেছে।

এই ঘটনা কি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে না? নজরুল ইসলাম : ভুল ভুলই। তবে ভালো কথা হচ্ছে আমরা ভুল ধরে সংশোধন করতে পেরেছি। সাপ্তাহিক : কিন্তু অনেকের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার কারণেই ঐ ছাত্রকে আপনি সুবিধা দিয়েছেন। নজরুল ইসলাম : এটা ভুল ধারণা। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে শিক্ষক।

সেখান থেকে ভিসি। এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান নিয়ে কোনো নেতিবাচক কাজ আমার দ্বারা হয়নি, হবেও না। সাপ্তাহিক : আপনি আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় অনেকে মনে করছেন এটা আপনার ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা... নজরুল ইসলাম : আমি সবসময় সকলকে নিয়ে সুন্দরভাবে কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু তারা যদি আমাকে সহযোগিতা না করে সেটা আমার ব্যর্থতা হবে কেন? তাদের কথা মেনেই তো কামাল আহমেদকে চলতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছি। সাপ্তাহিক : এর আগেও একবার বুয়েটের ভিসি হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন আপনি।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি করা হয়। নজরুল ইসলাম : আমি ১৯৯৬ সালেও বুয়েট ভিসি হয়েছিলাম। কিন্তু যোগদান হয়নি। সরকার আমাকে তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিল। সাপ্তাহিক : আপনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা ছিল বলে অভিযোগ করছে অনেকে... নজরুল ইসলাম : আপনি খোঁজ নিয়ে দেখুন এমন কোনো কিছু ছিল না।

এগুলো অপপ্রচার। সাপ্তাহিক : সেখানে ট্রেজারারকে গুলি করে হত্যা করেছিল? নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ। তবে সেটা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ‘বুয়েটের সম্মান রক্ষার জন্যই আমাদের আন্দোলন’ ড. মো. মুজিবুর রহমান সভাপতি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাহরাম খান সাপ্তাহিক : গত কয়েকদিন যাবৎ আপনারা আন্দোলন করছেন। কিসের জন্য এই আন্দোলন? মুজিবুর রহমান : বুয়েটের সম্মান রক্ষার জন্যই আমাদের আন্দোলন।

আপনারা হয়ত জেনে থাকবেন যে, বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত বুয়েট একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে ভর্তি পরীক্ষা ও একাডেমিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে শতভাগ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। এসব বিষয়ে বুয়েট অত্যন্ত গর্বিত প্রতিষ্ঠান। এগুলো আমাদের সবার সম্মান ও গৌরবের বিষয়। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকজন ব্যক্তির অযাচিত হস্তক্ষেপে বেশকিছু অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় আমরা সেগুলো শুধরে নেয়ার আহ্বান জানালে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কথা রেখেছে।

বেশিরভাগই তারা নিজেদের মতো করেছে। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল তখন আমরা কর্মবিরতিতে গিয়েছি। অর্থাৎ এটা আমাদের সর্বশেষ আশ্রয়। তবে এ বিষয়ে আমরা কোনো সময় সহিংসতা তো দূরের কথা মিছিল মিটিংয়ের আয়োজন করিনি। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের দাবি জানাচ্ছি।

সাপ্তাহিক : সুনির্দিষ্ট কারণগুলো কি? মুজিবুর রহমান : একাডেমিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম বুয়েটের শিক্ষকরা কোনো সময় মেনে নেন না। কারণ এগুলো বুয়েটের ঐতিহ্য। নিয়মতান্ত্রিক ঐতিহ্য বুয়েটকে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে স্বতন্ত্র করেছে। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় গায়ের জোরে কাজ করার সংস্কৃতি ছিল না। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোও কোনো সময় বুয়েটকে এভাবে ব্যবহার করেনি বা করতে চায়নি।

এ কারণে কোনো সময়ই বর্তমান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। এখন দু’একজন ব্যক্তির কারণে এসব হবে তা শিক্ষক সমাজ মেনে নেবে না। আমরা কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থেকে আন্দোলন করছি না। এটা শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত না, সকল শিক্ষকদের সম্মিলিত দাবি। সাপ্তাহিক : আপনাদের আন্দোলনের বিষয়ে ছাত্রদের অভিমত কি? মুজিবুর রহমান : আমরা কখনো ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করি না।

তারা যদি নিজেরা কোনো পদক্ষেপ নেয় সেটা তাদের বিষয়। তবে তাদের মনোভাব আমাদের দাবির প্রতি ইতিবাচক। কারণ আমরা বুয়েট রক্ষার আন্দোলন করছি। সাপ্তাহিক : শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে কর্মচারীদের মিছিল সমাবেশের কথা শোনা যাচ্ছেÑ এর কারণ কি? মুজিবুর রহমান : প্রশাসনিক বিল্ডিংয়ের সামনে শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে কর্মচারীদের মিটিং করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায় প্রশাসনের বর্তমান অবস্থা।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বুয়েটকে যাতে রাজনীতিকরণ না করা হয় এটাই আমাদের দাবি। তারা ভাবছে, তাদের মিছিল মিটিং দেখে আমরাও মিছিল মিটিং করব। অনেকটা ইনভাটিং সিচুয়েশন। এই ভুল আমরা করতে চাই না। আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে দাবির কথা জানিয়ে আসছি।

আশা করি সফল হব। সাপ্তাহিক : কেউ বলছেন দীর্ঘদিন বিএনপি সমর্থিত প্রশাসন থাকার পর এখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রশাসন এসে রদবদল করায় আপনারা আন্দোলন করছেন... মুজিবুর রহমান : সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি অভিযোগ। তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া। আমাদের এখানে ৪শ’র মতো শিক্ষক আছেন। তারা সবাই কি একটি দলের সমর্থক হতে পারেন? নিশ্চয়ই না।

কিন্তু আমাদের পেশাগত জায়গার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একমত। এজন্যই আমাদের আন্দোলন। আমাদের কর্মসূচির বিষয়ে প্রথম থেকেই বলেছি আমাদের আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। সাপ্তাহিক : কিন্তু আপনাদের বিরোধীরা বলছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আপনারা আন্দোলন করছেন... মুজিবুর রহমান : আমরা এই পর্যন্ত অনেকের সঙ্গে দেখা করেছি। সবাইকে বোঝাতে পেরেছি যে এই আন্দোলন অরাজনৈতিক।

বঙ্গবন্ধু নিজে বলেছিলেন যে, বুয়েটকে কোনোভাবে ব্যাহত করা যাবে না। আমরা সেই কথাকে সামনে রেখে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে একেকজনের একেক রকম রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আমাদের আচরণ অত্যন্ত পেশাদারি।

উৎস ঃ ‘প্লিজ, বুয়েটের গায়ে আঁচড় দিবেন না’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.