আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেননা আমরা মাদ্রাসায় পড়ি।

আমাদের মা ‘ম্যাগী পাকা রাঁধুনীর’ মত চটপট নুডলস করে খাওয়াতে পারে না কখনোই, জানি ইউনিলিভারের জাদুতে আমরা ষ্টার হয়ে উঠবো না, জানি মেছওয়াকের বদলে আমাদের দাঁত ঝকঝকে হচ্ছে না পেপসোডেন্টের ফেনায়, আমরা এখনো জানতে পারি নি পোকেমন মিকিমাউস, আমাদের বাবারা বারবি পুতুল কিনে আনছে না, আমাদের তৃষ্ণার জল হয়ে উঠছে না লাল ঝাঁঝালো পেপসির বোতল, মোবাইল কোম্পানিগুলান আমাদের টাঙ্গাবে না নগরের বিলবোর্ডে, মুনাফা উপযোগী ডিজুস জীবন বানাতে - আমরা পারি না ডটকম আদর্শ ভোক্তা হতে, জানি তাই খরচযোগ্য সংখ্যা (মানুষ নয়) হিসেবে আমাদের দিকে তাক হয়ে আছে যাবতীয় সশস্ত্রদৃষ্টি – নির্মূল অভিযান, জানি আমাদের দিকে সতর্ক-নিদ্বিধায়-সন্দেহ-ঘৃণায় তাকাবে গোয়েন্দা-পুলিশ-বুদ্ধিজীবী প্রগতিশীল-রাজনীতিক-লড়াকুরা। কারণ আমরা মাদ্রাসায় পড়ি। আমাদের কোন ‘হরলিক্স প্রতিভা’ নাই, এত এত রাষ্ট্রীয় আন্ত:ক্রীড়া, নিরক্ষরতা দুরীকরণ-গণশিক্ষা-স্বাক্ষরতা-সার্বজনীন-উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, জাতীয় (!) টেলিভিশন পার্লামেন্টারি ডিবেট (ইংরেজিতে) ‘রুখবে আমায় কে’র বাহারি শ্লোগানের কোথাও আমাদের জায়গা নাই, জায়গা নাই মান্দি চাকমা সাঁওতাল সহ সকল আদিবাসী প্রান্তিক মানুষের, সর্বত্র আমাদের অস্তিত্ব সচেতন মুছে ফেলা হয়, সকল বিরাজমানতা উপস্থাপনা প্রতীক ও পরিচয়ে আমাদের মুখগুলো দেখা যায় না। আপনারাই রাষ্ট্র, আপনারাই সন্ত্রাস। সমস্ত ইতিহাস-লড়াই-ভিন্নতা মুছে দিয়ে, ‘জঙ্গি’ ‘মৌলবাদী’ তৈরি ‘একক-অভিন্ন’ কারখানা মাদ্রাসার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে আপনারা কেন বারবার ম্যাগী-কোকাকোলা-লিভাইস-ম্যাকডোনাল্ড-সিনজেন্টা-বাংলালিংকসহ মারদাঙ্গা সব বহুজাতিক কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত জীবন কল্পনার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘আধুনিক’ ‘প্রগতিশীল’ আর সর্বজনীন’ করে তোলেন? কেন? আমরা গ্রামের কৃষক খেটে খাওয়া মানুষের সন্তান, আমাদের মায়েরা- বাবারা কৃষকের ধন শস্য লুট করে হাইব্রিড-জিএম বীজের ব্যবসা করে না, আমাদের আত্মীয়-পরিজন কেউ নাইকো-শেল-ইউনোকলের কাছে মাটি-জঙ্গল-জীবন বন্ধক দেয়না, তবু আমরাই বিপদজনক, মাদ্রাসায় পড়ে পড়ে বড় হয়ে মানসান্তো-ইউনিলিভার-নেসলে –মটোরোলায় চাকরির লাইন না দিয়ে ‘জঙ্গি’ আর ‘মৌলবাদী’ হয়ে যাই। তথাকথিত একতরফা পশ্চিমি যে-ধারণা মাদ্রাসাকে, টুপি-দাঁড়ি-বোরখাকে আমাদের সামনে ‘মৌলবাদ’ বা ‘জঙ্গি’ হিসেবে হাজির করার বাহাদুরি দেখায়... আমরা জানতে বুঝতে খুঁজতে চাই সেইসব ‘বাহাদুরির’ রকমফের দাপুটে কাণ্ডকারখানাগুলান। ‘বাহাদুরিকেই’ আর কতকাল ‘প্রগতিশীলতা’ হিসেবে চালানো ও চাপানো হবে? পাক্ষিক 'চিন্তা' পত্রিকার 'সন্ত্রাস' সংখ্যা (বছর ১৪, সংখ্যা ১, নভেম্বর ২০০৫ / অগ্রহায়ন ১৪১২) লেখা: পাভেল পার্থ, মুমেন ওয়াসিফ, মুসতাইন জহির। পুনশ্চ ঃ এই অবহেলিত আমরাই যখন জেগে উঠি, লাখ লাখ লোকের শ্বেত শুভ্র এই শান্তিপূর্ণ আমাদের এই বিক্ষোভ কি তোমরা আমলে নিবে?  

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.