অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জনগণই হল প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক। সুতরাং রাষ্ট্রের সকল তথ্য জানার অধিকার তাদের আছে। তথ্য অধিকার জনগণের ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা আবশ্যক।
এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা এবং তথ্য প্রাপ্তি নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত।
সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়, তাই গণতন্ত্রের স্বার্থেই তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সরকারের ভুল-ত্রুটি দেখিয়ে দিয়ে সংবাদপত্রই পারে সরকারকে দায়িত্ববান করতে। এটা প্রমাণিত যে, তথ্য চাওয়া ও এর প্রবাহ সচল করলেই সমাজের সব স্তরে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সুশাসনের দু`টি প্রধান উপাদান। বিশ্বের যেসব দেশে তথ্য অধিকার আইন বলবৎ রয়েছে, সেখানে গণমাধ্যম বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
তাই গণমাধ্যমকে যদি বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকায় দেখতে চাওয়া হয়, তাহলে তথ্য পাওয়ার বিষয়টিকে শুধু কাগুজে বিধান হিসেবে ফেলে না রেখে, তাকে প্রকৃত অর্থেই কার্যকর করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যে সব বাধা আছে সেগুলো চিহ্নিত করে অপসারণ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এ আইন অনুযায়ী যেকোনো তথ্য জানার অধিকার সবারই রয়েছে।
এই আইনের আওতায় তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা আগারগাঁওয়ের প্রতœতত্ত্ব ভবনে অস্থায়ী কার্যালয়ে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তথ্য প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত বা যেকোনো মাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে। অনুরোধের পর ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতে হবে। একাধিক তথ্য পেতে চাইলে ৩০ কার্যদিবস সময় পাবেন তথ্যদাতা। অনুরোধ করা তথ্য ব্যক্তির জীবন-মৃত্যু, গ্রেপ্তার এবং কারাগার থেকে মুক্তি সম্পর্কিত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য লাভে সহায়তা এবং পরিদর্শনের জন্য যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তা করতে হবে।
উপরোক্ত কথাগুলো আইনে স্পষ্ট করে বলা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তার প্রমাণ পেতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে। দেশের একটি অন্যতম সমস্যার নাম হলো দুর্নীতি, যা একটি দুষ্ট ক্ষতের মতো। আর এই ক্ষতটি দিনের পর দিন বেড়ে গিয়েছে তথ্য গোপন করার সুযোগ নিয়ে। কারণ, জনগণ যখন তার প্রয়োজনীয় তথ্যটি চেয়েও পায়না, তখন তারাই যে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক এ বিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয়। মূলত এই সব কারণেই বলা হয়ে থাকে অবাধ তথ্য প্রবাহ গণতন্ত্রের ভিতকেই শক্তিশালী করে।
আজ তাই এ ধারণা গড়ে উঠেছে যে, গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চার লক্ষে তথ্যকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
সরকার যদি সত্যিই দুর্নীতি দমনে আন্তরিক হয়, তবে তার উচিত `সরকারি গোপন তথ্যের` অহেতুক আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা। শুধু সরকারি আয়-ব্যয়ই নয় বরং দাতা দেশগুলোর সাহায্য এবং ঋণদাতাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তিসহ যাবতীয় বিষয়েও জনগণের জানার অধিকার নিশ্চিত করা দরকার। আর সেটা শুধুই বর্তমান সময়ের মত কাগুজে নয়, বরং বিষয়টি হওয়া উচিত এমন যে, ’যেখানে সরকার চাহিবামাত্র জনগণকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে বাধ্য থাকবে। ’
লেখক: সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।